আজ আমরা জানবো পপকর্নের ইতিহাস। সেইসঙ্গে পপকর্ন কিভাবে বানায় সেটাও জেনে নেওয়া যাক এক ফাঁক। কিন্তু ও কে? ভুটু মিয়া না? চলো তো ভুটু মিয়া কী করে দেখি
নাম তার ভুটু মিয়া। দেখতে দানাদার বীজের মতো। আসলে সে বীজই। গায়ে তেল মেখে চকচকে করে তাকে ঢেলে দিল একটা কড়াইতে। এরপর ঘুটাং ঘুট। তলায় জ্বলছে আগুন। ঘুরতে ঘুরতে ভুটু মিয়া গরমে কাহিল। ভেতরটা গুড় গুড় করছে। গরমে ফেটে বেরিয়ে আসবে যেন। ওমা! সত্যিই তো, আরেকটু গরম বাড়তেই ফট ফট ফটাশ! এক লাফে তিন হাত উঁচুতে উঠে গেল ভুটু মিয়া। আয়নায় চেহারাটা দেখতেই চমকে উঠলো। ছিল একটা দানা, হয়ে গেল পপকর্ন!
পপকর্ন সাথে আছে তো?
একটা কিছু করার জন্য মানুষের আরেকটা কিছু লাগে। এই যেমন কেউ আছে গল্পের বই পড়তে পড়তে চা খায়, আবার কেউ গান শুনতে শুনতে দৌড়ায়। সিনেমা দেখার সময় কী লাগে? পপকর্ন! অবশ্য লেখাটা পড়তে পড়তেও পপকর্ন খেতে পারো। তাতে আশা করি দোষ হবে না।
পপকর্ন খাওনি এমন কেউ নেই। এই সেদিন জš§ হয়েছে, এমন কেউ ছাড়া বাকি সবাই পপকর্ন সম্পর্কে জানো। তাহলে আমি আবার নতুন করে কী বলতে এসেছি? আছে, না জানার মতোও কিছু আছে!
পপকর্ন দিয়ে গুহামানবের নাস্তা
পপকর্ন নিয়ে বেশি আগ্রহ যার সে সবার আগে জানতে চাইবে, মজার খাবারটা মানুষ কবে থেকে খাচ্ছে? সত্যি বলছি, এর উত্তর আমার জানা নেই। আর কারও জানা আছে বলেও মনে হয় না। কেউ বলে দশ হাজার বছর আগের গুহামানবরা নাকি সকালের নাস্তায় পপকর্ন খেয়েছে।
মেক্সিকোতে ৮০ হাজার বছর আগের পপকর্নের নিদর্শন পাওয়া গেছে। আর প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন পেরুর এক জঙ্গলেই প্রথম আদ্যিকালের পপকর্নের ছিঁটেফোটা পাওয়া গেছে। ওটাও ধরো কমসে কম সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার কথা।
আসল কথা হলো পপকর্ন মানে যেহেতু ভুট্টার দানা, সেহেতু মানুষ যেদিন থেকে কৃষিকাজ শিখেছে, সেদিন থেকেই খেয়ে আসছে পপকর্ন। আর এটা বানানো তো আহামরি কিছু না। ভুট্টাকে গণগণে আগুনের ওপর ধরলেই দুম পটাশ পপকর্ন বের হয়ে আসবে।
আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত ইউরোপীয়রা কিন্তু পপকর্ন চিনতো না। তারা এটা খাওয়া শিখেছে আদিবাসী আমেরিকানদের কাছ থেকে। ভুল করে আমেরিকা আবিষ্কার করে ফেলা ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে যান, তখন তিনি সেখানকার আদিবাসীদের পপকর্ন খেতে দেখেন। ওদের দেখাদেখি ইউরোপে পপকর্ন চলে এলো ঢাকঢোল পিটিয়ে। রাজাবাহাদুরের মতো নামিদামি লোকেরাও পপকর্ন খেতে লাগলেন আয়েশ করে। তখন খাবারটাকে রীতিমতো সমীহ করতো সবাই। সকালের নাস্তায় এক বাটি দুধের সঙ্গে খেত পপকর্ন।
কেমন করে ফুটছে দেখ
মচমচে কুড়কুড়ে আবার যেন নরম সরম। পপকর্নের মতো যেন আর খাবার নেই। কিন্তু জন্ম যার এমন শক্ত খোলের ভেতর, সে কী করে অমন ফুলে ফেঁপে ওঠে? পপকর্নেও আছে বিজ্ঞান!
প্রথমে বলা যাক ভেতরের কথা। আর অন্যসব বীজের মতো ভুট্টার দানাগুলোও একেকটা বীজ। যার ভেতর সামান্য পানি, তেল ও শর্করা থাকে। তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে তৈরি হয় বাষ্প কণা। উত্তপ্ত বাষ্প ও তেল চাপ বাড়াতে থাকে খোলসের গায়ে। কিন্তু শক্ত খোলস সহজে ভাঙার পাত্র নয়।
এদিকে বিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী তাপে পদার্থের দৈর্ঘ্য বাড়ে। তাই গরম বাষ্প ও তেলের তাপে ভেতরের শর্করার আকার বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে চাপ সহ্য করতে না পেরে ফটাশ করে ভেতরের সব বের হয়ে আসে।
এরপর এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যায় আরও একটা ঘটনা। ভেতরের শর্করার দলাটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার ঠাণ্ডা হয়ে জমে যায়। আর সেই জমে যাওয়া রূপটাই হলো পপকর্নের ফুলে ওঠা সাদা অংশ। আর তাৎক্ষণিকভাবে জমে যায় বলেই পপকর্ন এত কুড়মুড়ে হয়।
পপকর্ন কিভাবে বানায় ?
দোকান থেকে প্যাকেট কেনার পর পপকর্ন বানানো যায় চুলায়। একটা পাতিল আর খানিকটা তেল হলেই চলে। পপকর্ন বানাতে তাপ দিতে হয় মেপে মেপে। খুব কম না, আবার বেশিও না।
কম তাপ দিলে বীজের ভেতর থাকা বাষ্প ধীরে ধীরে খোলস ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তখন ভেতরে চাপ তৈরি করার মতো কিছু থাকে না। আবার বেশি তাপ দিলে বীজের ভেতরের শর্করা উত্তপ্ত হওয়ার আগেই বাষ্পের চাপে ফেটে যাবে খোলস।
ফেটে যাওয়ার পর দুটো চেহারা হতে পারে পপকর্নের মাশরুম কিংবা বাটারফ্লাই। মাশরুম পপকর্ন দেখতে বলের মতো গোল আর বাটারফ্লাইটা হলো প্রজাপতির মতো ডানা ছড়ানো।
পাখির বাসা : বাবুই পাখির বাসা
গুণ গাই পপকর্নের
আর কেউ খাক না খাক, আমেরিকানরা পপকর্নকে রীতিমতো জাতীয় খাবার বানিয়ে ফেলেছে। অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে। পপকর্ন যেমন মজার খাবার, তেমনি স্বাস্থ্যকরও। শাকসবজির মতো পপকর্নেও আছে উপকারী আঁশ। আবার চর্বি বা বেশি ক্যালরিও নেই এতে। যত খুশি খাও, একটুও মোটা হবে না। যারা একটু ডায়েট মেনে চলতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য পপকর্ন আদর্শ খাবার।
অবশ্য সিনেমা হল বা পার্কের আশপাশে যে পরিমাণ ঘি বা তেল দিয়ে পপকর্ন ভাজা হচ্ছে, তা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। ওতে লবণের পরিমাণও থাকে বেশি। তাই ওটা কালেভদ্রেই খাওয়া উচিৎ। আর বাসায় বানাতে পারলে তো কথাই নেই। চোখের সামনেই দেখতে পাবে পপকর্নের ফাটুশ ফুটুশ।
পপকর্নের প্যাকেট শেষ পর্যায়ে? তাহলে আর কথা বাড়াবো না। শুধু যাবার আগে যারা পপকর্ন খাও না (এমন কেউ আছে নাকি!) তাদের জন্য একটা টিপস দিয়ে যাই। পপকর্ন শুধু খায় না, গায়েও দেয়! লাতিন আমেরিকার অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় আছে যারা পপকর্নের মালা পরে ঘোরে। বড়দিনের গাছ সাজাতেও পপকর্ন লাগায় অনেকে। ব্যাপারটা মজারই। সারাদিন পরে ঘোরাও হয়, আবার খিদে পেলে গলা থেকে খুলে খেয়েও ফেলা যায়।
পপকর্ন ফ্যাক্টস
১. আমেরিকানরা পপকর্ন বলতে অজ্ঞান। বছরে তারা প্রায় এক হাজার ছয়শ কোটি প্যাকেট পপকর্ন সাবাড় করে। গড়ে প্রত্যেকের ভাগে পড়ে ৫১ প্যাকেট।
২. তেল ছাড়া ভাজা পপকর্নের প্রতি প্যাকেটে প্রায় ৩০ ক্যালরি থাকে।
৩. পপকর্ন হতে ভুট্টা দানার ভেতরকার আর্দ্রতা ১৩.৫-১৪ শতাংশ হতে হয়।
৪. ভাজার সময় সর্বোচ্চ ৩ ফুট উঁচুতে উঠতে পারে একটি পপকর্ন।
৫. অনেকগুলো পপকর্নকে একত্র করে চাইলে একটি পপকর্ন বল বানানো যায়। আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় পপকর্নটি বানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়াতে, ২০০৯ সালে। ২২৬৮ কেজি ওজনের ওই বলটি ছিল ৮ ফুট লম্বা, পরিধি ছিল ২৮.৮ ফুট।