class="post-template-default single single-post postid-50251 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আমি তুমি সে : ‍দৃশ্য ৩১-৪০

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০

আমি তুমি সে নাটক : দৃশ্য ২১-৩০

 

 

 

দৃশ্য-৩১

মিতার রুম। মিতার দরজায় নক হচ্ছে। মিতা, শিরিন ও মদ্যপ এক লোক।

 

শিরিন: দাঁড়া আমি খুলছি।

মিতা: (ফিসফিস করে) না, আমি দেখছি। তুই তোর রুমে যা!

শিরিন: না আমি যাব না।তোর যদি কিছু হয়।

মিতা: যাতো! যা! আমি জানি কে।

শিরিনকে অনেকটা জোর করে মিতা ভেতরের রুমে পাঠিয়ে দিলো। বললো দরজা লাগিয়ে দিতে। শিরিন দরজা লাগিয়ে দিলো না। কান খাড়া করে রইল।

মিতা দরজা খুললো। একটা মদ্যপ মধ্যবয়সী লোক। মিতাকে ঠেলে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

মিতা: ইয়ে, আপনি রহমান সাহেব।

লোক: অ্যাঁ..হেহেহে। আমি আবার সাহেব। আমি আজ আর রহমান সাহেব নই। সুন্দরী আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড। তোমার সঙ্গে প্রেম করতে এসেছি।

মিতা: দেখুন ভিতরে এসে শান্ত হয়ে বসুন। অসভ্যতা করবেন না।

লোক:হো হো হো। অসভ্যতা করবো না? আমি তো অসভ্যতা করতেই এসেছি সুন্দরী!

মিতা: আস্তে কথা বলুন। আশপাশে অন্য ফ্ল্যাটে…।

লোক: আরে কার সাহস আছে আমাকে কিছু বলার। আমার কাছে কোটি কোটি টাকা আছে। 

মিতা: দেখুন, এসেছেন শান্ত হয়ে বসুন। অন্যরা জানলে সমস্যা হবে।

লোক: আরে কীসের সমস্যা। আমি নিজেইতো আস্ত একটা সমস্যা। হেহেহেহে।

লোকটা এগিয়ে এসে মিতার গালে হাত দেবে। লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে। লোকটা আচমকা স্বাভাবিক হবে। মাতলামি করা বন্ধ করবে। প্যান্টের বেল্ট খুলবে।

শিরিন চিন্তিত। তার কানে হাল্কা হাল্কা কথা আসবে। তবেসে বুঝতে পারছে না।

মিতা: কী কী করছেন। আপনি!

লোক: হে  হে হে।

 

মিতা ও লোককে দেখতে পাবে দর্শক।

মিতা: দেখুন এমনটা কিন্তু কথা হয়নি।

লোক: চুপ! একদম চুপ! চিৎকার করবি তো আরও জোরে মারবো।

মিতা: আপনি গায়ে হাত তুলছেন কেন?

মিতার চাপা চিৎকার। সঙ্গে বেল্ট দিয়ে মারার শব্দ।

লোক: আমার ইচ্ছা আমি তুলবো। তোর কত টাকা লাগবে বল।

 

বেল্ট দিয়ে মারার শব্দ পাবে শিরিন। মিতা ব্যথা পাওয়ার শব্দ করবে। লোকটার চেহারা বীভৎস। ঘামছে। হাসছে। শিরিন চিন্তিত কী করবে বুঝতে পারছে না।লোকটা বেল্ট তুললো মিতাকে মারার জন্য।

 

 

 

শিরিন ছুটে  গেলো মিতার রুমে। দরজা ধাক্কালো।

শিরিন: মিতা। মিতা দরজা খোল। কী হচ্ছে কী!

শিরিন কিছুক্ষণ নক করলো।

মিতা দরজা খুললো। তার মুখে ও হাতে মারের দাগ। পরনে টি-শার্ট।

মিতা: (কান্নাজড়িত) কী। কী হয়েছে।

শিরিন: তোর কী হয়েছে। কী হচ্ছে এসব।

লোক: বাহবা। বান্ধবীও আছে দেখছি। ভেতরে এসো। তুমি আসো। জয়েন আজ।

শিরিন: মিতা তুই বের হ। আমার রুমে আয়। আর লোকটাকে চলে যেতে বল।

মিতা: তুই যা.. যা বলছি, তোর রুমে যা। নিজের রুমে যা। এখুনি যা। তোকে এত মাতব্বরি করতে বলছে  কে!

শিরিন: লোকটা তোকে মেরে ফেলবে মিতা। তুই.. তুই।

মিতা: মেরে ফেললে মেরে ফেলবে। বেঁচে থাকার দরকার নেই। তুই যা। দরজা বন্ধ করে রাখ ভেতর থেকে। যা প্লিজ।

মিতা ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেবে। শিরিন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ।ভেতরথেকে আরও কিছু শব্দ কানে আসবে। মিতা ডুকরে কেঁদে উঠবে।

 

 

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

 

 

 

দৃশ্য-৩২

সকাল। আউটডোর ফটোশ্যুট। শিরিন,জেরিন, নাভিদ ও আরশাদ।

 

শিরিনের ফটোশ্যুট হবে বিভিন্ন পোজে, বিভিন্ন পোশাকে।

ফটোশ্যুট শেষে চার জন হাসিখুশি কথা বলবে। নাভিদ শিরিনের একটু বেশি কাছে থাকারচেষ্টা করবে। তাকে বার বার জেরিন হাত ধরে সরিয়ে দেবে। আর সেটা খেয়াল করবে আরশাদ। আরশাদের তোলা ছবিগুলো দেখবে শিরিন।দেখে খুশি হবে। নাভিদ আরশাদকে থামবস আপ দেখাবে। একবার নাভিদ শিরিনের বাহু জড়িয়ে ধরবে। জেরিন সেটা সরাতে গিয়ে সরাবে না। তবে এবার শিরিন নিজেই নাভিদের হাত সরিয়ে নেবে।

চারজন একটা রেস্টুরেন্টে বসলো।

জেরিন: আমার তো মনে হচ্ছে আমরা এবার হিট।

নাভিদ: উফ, শিরিন। তুমি রীতিমতো আমাদের জন্য ভাগ্য নিয়ে এসেছো। একেবারে সাক্ষাৎ ভাগ্যদেবী।

জেরিন: আর ফটোগ্রাফার কার কাজিন  দেখতে হবে না। হুহ। এমন আইডিয়ার ছবি আগে কেউ তুলেছে? কখনও না।

আরশাদ: হাহাহ। এটা কিন্তু আমার ফাসর্ট মডেল ফটোগ্রাফি।

নাভিদ: সেটা অবশ্য স্বীকার করতেই হবে। এখন কে কী খাবে বলো। শিরিন তুমি আগে বলো।

জেরিন: আমাদেরও একটু জিজ্ঞেস করো। আমাদেরও তো খিদে লাগে। নাকি?

নাভিদ: তুমিতো সারাক্ষণই খাও।তোমাকে তো কম খাওয়াইনি। শিরিন হলো আজকের সুপারগেস্ট।

জেরিন: ওরে বাবা। তাই বলে আমি একেবারে নাই হয়ে গেলাম!

শিরিন: ছি আপু। কী যে বলেন। আপনিই তো আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন। আর আমার তো মনে হচ্ছে, আমি এখনও কিছুই হতে পারিনি। আর পারবো কিনা।

নাভিদ: তুমি চিন্তা করো না একদম। তুমি যা চাইবে সবই হতে পারবে। তোমার ভেতর সেই জেদ আছে। জেদ থাকাটাই আসল।

সবাই কথা বলছে শব্দ শোনা গেলো না। খাবার আসলো। সবাই খেতে শুরু করলো।

নাভিদ শিরিনকে খাইয়ে দিচ্ছে। সেটা আড়চোখে দেখছে জেরিন। সে তার খাবার নাড়াচাড় করে রেখে দিচ্ছে।

 

জেরিন: এই আমার আর খেতে ইচ্ছে করছে না। তোমরা খাও।

নাভিদ: ইচ্ছা না করলে খাবি না।

শিরিন: কী হয়েছে আপু।

জেরিন: তোমরা খাও। আমি বরং যাই। শরীর ভালো লাগছে না।

আরশাদ: ইয়ে, এক মিনিট। খাবারটা প্যাকেট করে দিতে বলি। আমিও যাই বরং তোর সাথে।

জেরিন: হুম। চল।

আরশাদ আর জেরিন উঠে গেলো। নাভিদ খুব একটা পাত্তা দিলো না বিষয়টা। তবে শিরিন বিষয়টা ধরতে পারলো। তার চেহারা খানিকটা নেতিয়ে গেল।

জেরিন আরশাদ চলে গেল।

শিরিন: নাভিদ ভাই.. আমিও বরং আসি আজ। অনেক খাওয়া হয়েছে।

নাভিদ: একি কাণ্ড। একজন একজন করে সবার কী হলো হঠাৎ।

শিরিন: না না আমার আর কীহবে। তা ছাড়া যার সঙ্গে থাকি, আমার বান্ধবী মিতা। ও ভীষণ অসুস্থ। বাসায় কেউ নেই। তাকে একটু সময় দিতে হবে।

নাভিদ: বলো কি। আমিও যাব নাকি। কোনও হেল্প।

শিরিন: না না। ওই রকম কিছু না। হেল্প লাগলে তো ফোন নম্বর আছেই।

নাভিদ: তবে শুধু হেল্প লাগলেই ফোন করবে? এমনিতে করবে না?

শিরিন: হুমম (হাসির চেষ্টা)।

 

 

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

 

 

 

দৃশ্য-৩৩

আউটডোর। দিন। আরশাদ ও জেরিন রিকশায়।

আরশাদ: তো, তোর কী মনে হয় শিরিন মেয়েটা নাভিদের প্রেমে সাড়া দেবে?

জেরিন: ইয়ার্কি করাটা আগে শিখে আয়, তারপর করিস। বিদেশে গিয়ে তো ঠিকমতো ইয়ার্কি করাটাও শিখিসনি।

আরশাদ: হাহাহা। উফফ বড্ড লেগেছে, তাই নারে!

জেরিন: (রাগের ভাণ) আরশাদ! এক লাথি মেরে রিকশা থেকে ফেলে দেব!

আরশাদ: দে লাথিই না হয় খাবো।  মরে তো আর যাব না।

জেরিন:  এ্যাঁ.. আসছে আমার কবি।

আরশাদ: কবিতা আর করলাম কখন।

জেরিন: হুম। কেউতো আমাকে একটা কবিতাও শোনালো না কোনোদিন। বাই দ্য ওয়ে তোর গায়ে এই একটা শার্ট দেখতে দেখতে না আমি অসহ্য হয়ে গেছি। (রিকশাকে) অ্যাই মামা, একটু ওদিকে মার্কেটটার সামনে রাখেন তো।

জেরিন: নাম, চল।

আরশাদ: আরে এখন আবার কী।

জেরিন: তোর শার্ট কিনতে হবে চল। সঙ্গে আরও যা যা লাগে।

আরশাদ: ওহ ভালো তো।

 

জেরিন আরশাদকে শার্ট কিনে দিচ্ছে। তার পিঠে শার্ট ঠেকিয়ে মাপ নিচ্ছে। আরশাদ চুপচাপ জেরিনের কাজ দেখছে।

আরশাদ: (মনে মনে) জেরিনের মন কি তবে নাভিদের কাছ থেকে ঘুরে যাচ্ছে? নাকি এ সবই তার ক্ষণিকের মোহ। কিন্তু আমার তো কেন যেন এটাকে সত্যি ভাবতে ইচ্ছে করছে। জেরিন কি তবে…।

জেরিন: চল, এবার আমি শপিং করবো। তুই আমার পেছনে ছাগলের মতো ঘুরবি। আর একটু পর পর ম্যা ম্যা করে ডাক দিবি। ঠিকাছে।

আরশাদ উপর-নিচ মাথা ঝাঁকাবে। তার চেহারায় আনন্দের ছাপ স্পষ্ট।

 

 

দৃশ্য-৩৪

শিরিন ও মিতার এজেন্ট লাবলু। মিতার রুম। মিতা পরে আসবে।

শিরিন তার রুমে বসে আছে। এমন সময় দরজায় নক। শিরিন ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেবে। দেখবে মিতার  সেই এজেন্ট। শিরিন ভয়ে হতভম্ব। এজেন্ট তার দিকে তাকিয়ে লোলুপ হাসি দিল।

শিরিন: মিতা নেই। বাসায় নেই।

শিরিন দরজা লাগিয়ে দিতে  গেলে লাবলু দরজা ধরে  ফেলবে।

লাভলু: ( টেনে টেনে কথা বলবে) মিতা নেই তো কী হয়েছে, সুন্দরী তুমি তো আছো। তোমার সঙ্গেই না হয় কিছুটা সময় কাটাই।

শিরিন: (দরজা জোর করে লাগাতে গিয়েও পারবে না।) আপনি চলে যান। আপনি আমাকে যেমন ভাবছেন আমি তেমন নই।

লাবলু: তেমন নও, ভালো, তেমন হয়ে যাও। না হয় আজ শুধু আমার জন্যই ওমন হলে সুন্দরী। হেহেহে।

শিরিন জোর করবে। পারবে না। শিরিন আড়চোখে নিজের রুমের দরজার দিকে তাকাবে।

শিরিন: দেখুন আমি চিৎকার করবো।

লাবলু: চিৎকার করতে মন চাইলে করো। আমি তখন সব জারিজুরি ফাঁস করে দিবো। আমার কাছে প্রমাণ আছে। হাহাহা।

শিরিন: কীসের প্রমাণ।

লাবলু: সব ভিডিও ফুটেজ আছে সুন্দরী। তারচেয়ে চলো আমরা একটু কথা বলি। চলো দেখি আমাকে ঢুকতে দাও।

লাবলু জোর করে ঢুকতে চাইবে। শিরিন বাধা দিতে গিয়ে পারবে না। তার গায়ে শক্তি কম। শিরিন নিজের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আচমকা  মূল দরজাটা ছেড়ে দিয়ে এক ছুটে নিজের রুমে ছুটে গেল। তারপর দরজার টেনে নব লক করে দিলো। তার দরজার কাছে ছুটে এসে লাবলু দরজায় রাগের চোটে লাথি মারলো।

লাবলু: দেখো, খোলো বলছি। খোলো। তা না হলে কিন্তু বলে দিচ্ছি দুজনকেই ঝামেলায় পড়তে হবে। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কিন্তু কোনও আইডিয়া নেই। ভালোয় ভালোয় দরজা খোলো।

শিরিন: আমি.. আমি.. আমি কিন্তু  ফোন করবো।

লাবলু: ওই কাকে ফোন করবি তুই। এটা আমার বাসা, জানিস! আমি এ বাসা ভাড়া নিয়েছি। আমি এর ভাড়া দেই!

শিরিন: আপনি প্লিজ চলে যান।

লাবলু: আমি আমার বাসা থেকে কেন যাব শুনি! তুমি আমার বাসায় এসেছো। থাকো। আমরা একসঙ্গে থাকি। হাহাহা।

লাবলু কথা বলতে বলতে দরজার নব ঘোরানোর চেষ্টা করবে।

শিরিন দ্রুত ফোন বের করে ডায়াল করবে। মিতা ধরবে। মিতার চারপাশে অনেক শব্দ।

 

মিতা: হ্যালো..।

শিরিন: মিতা.. হ্যালো তুই কোথায়। তুই জলদি আয়। লোকটা এসেছে। আমাকে আমাকে।

মিতা: আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি গাড়িতে। পরে ফোন দিচ্ছি।

শিরিন: শোন। রাখিস না! শোন!

শিরিনের মাথা কাজ করছে না। সে এসএমএস টাইপ করছে।

লাবলু: কাউকে ফোন দিলে একদম কেটে ফেলে দেবো বুঝলি। আমি ওসব পুলিশ টুলিশের ধার ধারি না। সবাইকে ম্যানেজ করে রেখেছি। এখন দরজা খোল। পরে কিন্তু দরজা ভেঙে ঢুকলে তোর খবর আছে।

শিরিনের হাত কাঁপছে। বড় করে শ্বাস নিলো। তারপর মামাকে ডায়াল করতে গিয়েও করলো না। মিতাকে এসএমএস লিখলো।

লাবলুর সাড়া শব্দ নেই। উঠে গিয়ে দরজা খুলতে গিয়েও খুললো না।

লাবলু সামনে মিতার রুমে বসে ভাবছে। কী করবে চিন্তা করলো। মাথা চুলকালো। তারপর ধীরে ধীরে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। ড্রয়ার খুলতেই পেলো একটা চাবির রিং।

 

 

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

 

দৃশ্য-৩৫

জেরিন ও আরশাদ। রাতে একসঙ্গে ছাদে বসে খাচ্ছে। আরশাদের মা একটু পর পর খাবার এনে দিচ্ছে। জেরিনের বাবাও আছেন।

জেরিন: তো রান্না কেমন হলো।

আরশাদ: হুমমম। একদম খাঁটি গিন্নি মার্কা।

জেরিন: অ্যাঁ.. গিন্নিরা আজকাল শুধু রান্নাই করে নাকি।

আরশাদ: না না যে রাধে সে চুল বাঁধে,  সে বিজ্ঞাপন বানায়, সে ক্লায়েন্ট পটায়।

জেরিন: ওই উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। আমি কাউকে পটাই না। পটানোর চেষ্টাও করি না।

আরশাদ: আরে আজব। আমাকে পটাতেই তুই যা করছিস। এই মুরগি, বিরানি।হেহেহে।

জেরিন: বিদেশে কী খাস না খাস। এই জন্য একটু মায়া হলো তাই রান্না করেছি।

আরশাদ: তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক।

জেরিন: কোনটা ঠিক।

আরশাদ: যে রান্নাবান্না করলে মন ভালো থাকে।

জেরিন চুপ করে থাকলো।বোঝা গেল তার খানিকটা মন খারাপ।

আরশাদের মা/জেরিনের ফুপু: অ্যাই তোরা আর কিছু নিবি না। জেরিন, মা তুই এটা নে ধর।তোর পছন্দের টুকরা।

আরশাদ: কী সেটা।

ফুপু: কী আবার পাখা।

আরশাদ: ও, তাইতো বলি এত পাখা গজালো কী করে।

জেরিন: বেশি ফাইজলামি করবি না। তাহলে তোকে মুরগির ডিম খাওয়াবোবেশি করে। ডিম পাড়বি তখন।

আরশাদ: ওটা আমার কম্মো না। ওটাও বরং তুই খা।হেহেহে।

 

জেরিনের বাবা আর জেরিনের ফুপু। ছাদে উঠে তারাও খাচ্ছে।

ফুপু: ভাইজান, আমি আর কষ্ট করে ওর পাত্রী খুঁজছিকেন। পাত্রীতো ঘরেই আছে।

জেরিনের বাবা: কী বলিস এসব।

ফুপু: আরে সমস্যা কোথায়।

বাবা: আরে না না। এটা কেমন দেখায়।

ফুপু: কী কেমন দেখায়। কত্ত ভালো দেখাচ্ছে।

বাবা: আরে ওর পছন্দ আছে।

ফুপু: ওর পছন্দ না কচু। ওই ছেলে ওকে মোটেও পাত্তা দেয় না। আর তুমি আছো ওই ছেলের পাল্লায়।

বাবা: কিন্তু জেরিনতো রাজি হবে না। আর এখন কি আর সেই দিন আছে, যে বলবো আর রাজি হয়ে যাবে।

ফুপু: বলেই দেখো না। আর তুমি একটু জোর দিয়ে বললে ও কোনও কথাই ফেলবে না।  ও আর যাকে বলুক, তোমাকে না করবে না। আর আমি একশ দশ ভাগ নিশ্চিত ওই ছেলে জেরিনকে পছন্দ করে না। করলে এতদিনে বিয়ের কথা বলতোই।

বাবা চিন্তিত।

 

 

দৃশ্য-৩৬

ইনডোর। মিতার ঘর। শিরিন, লাবলু, মিতা।

লাবলু চাবি হাতে ধীর পায়ে এগোবে। শিরিনের দরজায়। শিরিন খাটে বসে আছে চিন্তিত মুখ।

লাবলু প্রথম চাবিঢোকালো দরজা খুললো না।

লাবলু দ্বিতীয় চাবি ঢোকালো। তাও খুললো না।

শিরিন খাট থেকে উঠলো। টেবিলে একটা ফুলদানি রাখা। তার পাশে

তৃতীয় চাবিটা ঢোকাতেই দরজা খুলে গেলো। লাবলুর মুখে হাসি।

দর্শক দরজা খুলতে দেখবে। কিন্তু দরজার ভেতর দিয়ে মিতা ঢুকলো। ঢুকেই তার চোখে মুখে সন্দেহ। সে শিরিনকে ডাকতে ডাকতে তার রুমের দিকে গেলো।দেখে শিরিনের দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকেই আঁতকে ওঠে। শিরিন বিধ্বস্ত। বোঝানো হবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শিরিন ছুটে এসে মিতাকে জড়িয়ে ধরবে। মিতা বিস্মিত।ক্রোধে ফুঁসতে থাকে। শিরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

মিতা: সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিশোধ আমি নেবো।

 

 

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

 

 

 

 

দৃশ্য-৩৭

ইনডোর, ফ্যাশন হাউস। নাভিদ, জেরিন ও ফ্যাশন হাউসের মালিক।

সবাই কম্পিউটারের বড় মনিটরে শিরিনের ছবি দেখছে। মালিক মুগ্ধ হচ্ছে।

মালিক: বাহ বাহ। বাহ। অসাধারণ। একদম এটাই চেয়েছিলাম।

জেরিন ভাবলেশহীন। তার চোখের নিচে কালি। নাভিদের চোখ চকচক করছে। জেরিন আড়চোখে নাভিদের দিকেও তাকাবে। নাভিদের উচ্ছ্বাস তাকে কষ্ট দিচ্ছে।

নাভিদ; আমি বলেছিলাম না, শিরিন একদম ফাটিয়ে দেবে। তাকে চিনতে আসলে আমি ভুল করিনি।

জেরিন: না তা ঠিক, তবে ক্যামেরার কাজটাও এখানে ইমপর্টেন্ট।

জেরিনের কথায় কান দিল না নাভিদ।

মালিক: এক কাজ করুন। মডেলের নাম্বারটা আমাকে দিন। আমি নিজে তাকে থ্যাংকু বলতে চাই।

নাভিদ তড়িঘড়ি করে নম্বরটা বের করবে তার মোবাইল থেকে। জেরিন ইশারায়  তাকে নম্বর দিতে মানা করবে। তবে মালিক থাকায় তার ইশারা ব্যর্থ হবে।

নাভিদ: এই নিন।

মালিক নম্বর তার মোবাইলে টুকে নেবে। নম্বরটা নেওয়ার সময় তার মুখে হাসি দেখা যাবে। বোঝা যাবে নম্বরটা নেওয়ার পেছনে তার অন্য কোনও মতলব আছে।

জেরিন: ওকে স্যার আশা করি..।

মালিক: আহা। আবার স্যার কেন! তোমাদের মতো সুন্দর সুন্দর মেয়েদের মুখে স্যার শুনলেই নিজেকে বুড়া হাবলা মনে হয়।

জেরিন জোর করে হাসবে। নাভিদ হো হো করে হেসে উঠবে।

জেরিন: ঠিকাছে মি. শিহাব। আশা করি কাজটা হিট করবে। আর একটা রিকোয়েস্ট ছিল। আমাদের পেমেন্টটা।

মালিক:আরে! কী বল না বল! এই নাও।

ড্রয়ার থেকে চেক বের করে সাইন করবে।

 

আইটডোর। নাভিদ ও জেরিন। প্রথমে হাঁটবে। পরে রিকশা নেবে।

নাভিদ: ব্যাপারটা সেলিব্রেট না করলে আর হচ্ছে না।

জেরিন: নাহ। বেশি বেশি সেলিব্রেট ভালো না।

নাভিদ: তোমাকে প্রথম থেকেই দেখছি কেবল বাধা দিয়ে আসছো। সমস্যাটা কী।

জেরিন: কোথায় আবার বাধা দিলাম!

নাভিদ: না মানে আচমকা সব কিছুতে কেমন যেন চেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি একটা।

জেরিন: মানুষ তো বদলায় তাই না?

নাভিদ; লে বাবা। এবার দেখি দার্শনিকও হয়ে গেলে। অ্যাই খালি। ধানমণ্ডি।

রিকশায় উঠলো দুজন।।

নাভিদ: আমার অবশ্য একটা সন্দেহ হচ্ছে। তুমি আবার ঈর্ষাকাতর না তো?

জেরিন: কেন?

নাভিদ: না মানে মনে মনে হয়তো চেয়েছিলে যে তুমিই ফটোশুটের মডেল হবে, কিন্তু আচমকা হয়ে গেল শিরিন।

জেরিন প্রচণ্ড আহত হলো কথাটা শুনে। কিন্তু কিছু বললো না। আড়ালে একবার চোখ মুছলো।

নাভিদ: আরে বাবা আমি দুষ্টামি করেছি। সব কিছুতে এমন সিরিয়াস হও কেন। আজব!

জেরিন জোর করে হাসলো। কিছু বললো না।

 

আমি তুমি সে নাটক

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৩১ থেকে দৃশ্য ৪০

 

 

দৃশ্য-৩৮

ইনডোর। স্টুডিও। শিরিনের মডেল বেশে ছবি ওঠানো চলছে। শিরিন ও নাভিদ।

বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলা হচ্ছে।

ছবি তোলা শেষে শিরিন আসবে। নাভিদের দিকে তাকিয়ে হাসবে।

 

নাভিদ: এবার আর ঠেকায় কে। এবার তুমি সুপারস্টার।

শিরিন: আসলে সবই তো আপনার কারণে।

নাভিদ: একি! এখনও আপনি!

শিরিন: হাহাহা। না প্লিজ। আমি আপনাকে আপনি করেই বলবো।

নাভিদ: তাহলে তোমার সঙ্গে কথা ন্ইে। দেখি তোমার কণিষ্ঠ আঙ্গুলটা দাও।

নাভিদ শিরিনের হাত ধরবে। কণিষ্ঠ আঙ্গুল বের করছে। শিরিন আড়ষ্ট হয়। নাভিদের জায়গায় হুট করে লাবলুর চেহারা দেখে। মুহূর্তে আঁতকে উঠে আবার স্বাভাবিক হয়।

শিরিন: আহা কেন?

নাভিদ: আড়ি দেব তাই। আর জীবনেও কথা নেই।

শিরিন: হাহাহা। তাহলে তো দেব না।

 

দূর থেকে এই হাত ধরাধরির দৃশ্য দেখবে জেরিন। সে দ্রুত এগিয়ে আসবে। নাভিদের হাত ধরে টান দেবে।

জেরিন: একটু শোনো তো কথা আছে।

নাভিদের হাত ধরা থাকবে শিরিন। তার হাতে টান লাগবে।

শিরিন: আহ।

নাভিদ খেপে যাবে।

নাভিদ: কোনও কথা শুনবো না। এভাবে টানাটানিটা না করলে তোমার খাবার হজম  হয না? যত্তসব।

জেরিন: কী বললে আমি যত্তসব?

জেরিন দ্রুত আবার চলে যাবে।

শিরিন: জেরিন আপু! জেরিন আপু!

শিরিন: (নাভিদকে) কাজটা ঠিক হয়নি ভাইয়া। আপনার উচিৎ আপুর কাছে সরি বলা। আর আমি এখন যাই।

শিরিন হন্তদন্ত হয়ে চলে যাবে। নাভিদ বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকবে।

 

 

দৃশ্য-৩৯

আউটডোর। শিরিন ও ফ্যাশন হাউসের মালিকের ফোনালাপ। শিরিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বা রিকশায় বসে কথা বলছে।

 

শিরিন: হ্যালো।

মালিক: হুম। কেমন আছো, শিরিন।

শিরিন: জ্বি কে বলছেন?

মালিক: একি আমার নাম্বার সেভ করোনি।

শিরিন: না.. ইয়ে মানে স্যরি।

মালিক: আরে না সরির কী আছে। আমি হাফিজ, নীলিমা ফ্যাশনসের প্রোপাইটর।

শিরিন: ওহ.. স্যার আপনি! কেমন আছেন।

মালিক: এই তো আরেকটা ভুল করলে। আমি আবার স্যার হলাম কবে।

শিরিন: হেহে। ওকে ভাইয়া।

মালিক: হুম চলবে। তোমাকে তো পাওয়াই যায় না।

শিরিন: না না কী বলেন। কাজ থাকলে তো অবশ্যই আসবো।

মালিক: সেকি কথা। কাজ ছাড়া আসবে না বুঝি। বয়স না হয় একটু বেশিই হয়ে গেছে, হেহেহে।

শিরিন: না না ছি কী বলেন। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।

মালিক: আরে আসো না একদিন। সব বুঝে যাবে।

শিরিন: জ্বি।

মালিক: আজ ফ্রি থাকলে চলে আসো। পরের প্রজেক্ট নিয়ে একটু আলাপ সালাপ করবো।

শিরিন: নাভিদ ভাইকে নিয়ে আসবো তাহলে।

মালিক: আহা, এর মধ্যে আবার নাভিদ ভাই কেন!

শিরিন: তবে জেরিন আপু।

মালিক: আরে না না। ও একটু বেশি খটমট করে কথা বলে। তুমি একাই আসো। আচ্ছা এক কাজ করো, আজ আমরা একসঙ্গে ডিনার করি। কোথায় খাবে বলো।

শিরিন: জ্বি। এখন তো কথা দিতে পারছি না।

মালিক: বাহ, একদিন কাজ করেই এত ব্যস্ত হয়ে পড়লে, পরে তো আর চিনবেই না।

শিরিন: আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে স্যার, ওহ সরি, ভাইয়া, আসবো আসবো।

মালিক: গুড তাহলে রাত দশটায় ধানমণ্ডির ব্লুবেরিতে চলে আসো। রাখ তাহলে বা..ই।

 

শিরিন চিন্তিত মুখে ফোন রাখলো।

 

 

 

 

দৃশ্য-৪০

ইনডোর। মিতা তার রুমে বসে ভাবছে। লাবলু আসবে।

 

মিতা: না, আমাকে একটা কিছু করতেই হবে। এর প্রতিশোধ নিতে হবে আমাকে। প্রতিশোধ! হারামজাদা লাবলু, তোকে আমি খুন করবো। হ্যাঁ খুন করবো।

মিতা উঠে গিয়ে কিচেনে যাবে। বড় দেখে ফল কাটার একটা ছুরি হাতে তার রুমে ফিরে আসবে। ছুরিটা হাতে নিয়ে ধার পরখ করবে। এরপর পায়চারি করবে।

মিতা :(মনে মনে) আসুক আজ।

মিতা ছুরিটাকে ড্রয়ারে রাখবে। এরপর বিছানায় বসে থাকবে। কলিং বেল বাজবে।

লাবলু: ও তুমি আছো, আমি তো ভাবলাম আবার ওই দেমাগি বান্ধবীটা আছে।

মিতা: কাজটা একদমই ঠিক করোনি তুমি লাবলু।

লাবলু: লে বাবা, তেমন কিছুই করিনি আমি। কসম বলছি, রেপ টেপ করিনি। আমি ভাবলাম আপসে দিয়ে দেবে। কিন্তু দিলো না।

মিতা: মিথ্যা বলবে না!

লাবলু: মিথ্যা বলবো কোন দুখে। আমি কাউকে ভয় করি নাকি। সবাইকে পয়সা দিয়ে রেখেছি। ভয় পেলেই পয়সা দিয়ে  দেই, ভয় চলে যায়, ফুসস।

মিতা: (উঠে গিয়ে তার টেবিলের কাছে দাঁড়াবে। আস্তে করে ড্রয়ারের হাতল ধরবে) তুমি কাজটা ঠিক করোনি।

লাবলু: আসলেই কাজটা ঠিক করিনি। অল্প একটু মজা করে ছেড়ে দিয়েছি, আমার আসলে রেপ করা উচিৎ ছিল, তাই না? হো হো হো।

মিতা ড্রয়ারটা খুলবে। ছুরিতে হাত বুলোবে।

লাবলু: তুমি না, একটু বাড়াবাড়ি ভাবছো। আমার বাসায় আমার খরচে থাকো। তোমাকে আমি চালাই। আর সেখানে আমার ঘরে তুমি একটা মেয়েকে নিয়ে আসবে, আর আমি একটু মজা নেবোনা, ছি ছি ছি মিতা, তুমি এত বোকা।

মিতা ছুরিটা ধরবে। লাবলু বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ। মিতা ছুরিটা হাতে নেবে। শক্ত করে চেপে ধরবে।

লাবলু: ওকে রাজি করাও। অনেক টাকা কামাতে পারবে মেয়েটা। কী যেন নাম? আরে নাম দিয়ে কী হবে। নাম দিলাম কুইন। রানী। রাতের রানী হো হো হো। মেয়েটার জেদ আছে খুব।

মিতা ছুরিটা হাতে নিয়ে ঘুরতে যাবে। এমন সময় লাবলু উঠে বসবে। মিতা ছুরিটা নামিয়ে ধরবে।

লাবলু: আর শোনো। তোমার জন্য সুখবর আছে। বড় পার্টি আসছে। ব্যাংকক যেতে হবে। তুমি তো আবার ইংরেজি টিংরেজি জানো। পাক্কা দুলাখ টাকার মামলা।

মিতা ধীরে ধীরে ছুরিটা নামিয়ে রাখবে। তার চেহারাও স্বাভাবিক হবে। ছুরিটার দিকে তাকিয়ে থাকবে কিছুক্ষণ। এরপর ড্রয়ারটা আবার বন্ধ করে দেবে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!