Monday, December 23
Shadow

প্রাণ ভরে নিন সমুদ্রের স্বাদ, ভ্রমণ করুন সাগরকন্যা কুয়াকাটা

কুয়াকাটা একটি দুর্লভ মনোরম স্থান, ছবি মতো সুন্দর সৈকত, উজ্জ্বল আকাশ ও সঙ্গে বঙ্গপসাগরের ঢেউ আর আছে ম্যানগ্রোভ বন।

কুয়াকাটা
কুয়াকাটা হলো সেই শহর, যেখানে সমস্ত সড়ক এসে শেষ হয়। অনেকটা যেন অনেকগুলো গ্রামের মধ্যে একটি গ্রামের শেষ সীমার মতোই, তবে এখানে সমুদ্রই আপনার যাত্রা থামিয়ে দেবে, আর তা ঘটবে একরাশ প্রাকৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়েই।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ছোট নিরিবিলি শহর কুয়াকাটা। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এটি বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগর এবং ভোলা দ্বীপের মাঝামাঝি ও পাশে থাকা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছড়িয়ে যাওয়া অংশের মাঝে অবস্থিত।

কুয়াকাটা ও এর যত আকর্ষণ

প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সৈকতের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এখানে একই স্থান থেকে সমূদ্রের ঢেউয়ের ও পারে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এখানে অনেক বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে যেখানে ছোট ছোট নদী ও খাল নির্ভয়ে শান্ত গতিতে, অনেকটা যেন নিজেদের মতো করে সময় নিয়েই বয়ে গেছে সাগরের দিকে। সৈকতের তীর ঘেঁষে আছে একরাশ ঝাউ গাছ। প্রতিটি ঝাউয়ের গুচ্ছকে বলা হয় ঝাউবন। সৈকতের বালু সাদা। তবে মূল সৈকতে ঢোকার পথের পাশে ছড়ানো পদদলিত ধুলোর দিকে তাকালে সাদা নাও মনে হতে পারে। কিছুটা হেঁটে সৈকতের দিকে ঢুকলেই দেখা মিলবে সাদা বালির সারি। সঙ্গে হয়তো চোখে পড়বে বিশাল সৈকতে নিরিবিলি পড়ে থাকা একটি গাছের গুড়ি বা একটি পরিত্যক্ত নৌকা। সৈকতের ধুলায় আটকে যাওয়া নৌকাটিও ঠিক সাগরের পানিতে ভেসে বেড়ানো নৌকাগুলোর মতোই দেখতে তবে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ক্রমাগত জলের তোড়ে ভিজে রোদে পুড়ে বিবর্ণ এই নৌকা অবশ্যই কোনো না কোনো আবেগকে জাগিয়ে তুলবে, যা হুট করে কোনো পর্যটককে থামিয়ে একটা কিছু ভাবতে বাদ্য করবে।

সমুদ্রের লোনা পানির কারণে এখানকার বাতাসও কিছুটা ভিন্ন অনুভূত হতে পারে। লোকালয়ের কাছাকাছি যত আসতে থাকবেন, বা সৈকতের জনপ্রিয় স্থানগুলোতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাকে আসতে পারে শুঁটকি মাছের কড়া গন্ধ। অনেক পর্যটকের কাছে বিশেষ করে যারা স্থানীয় তাদের কাছে এই গন্ধ খুব একটা অপ্রিয় নয়, অনেকে আবার শুটকি মাছের স্তূপের পাশে বেশ আনন্দের সাথেই ঘুরে বেড়ায়। এসব শুটকি মাছ অনেকের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ও উপাদেয় খাবার। এর রান্না করার পদ্ধতিও এলাকাভেদে ভিন্ন। উপকূলীয় অঞ্চলেও আবার এটি রান্নার কিছু আলাদা পদ্ধতি আছে।

নিম্নাঞ্চলের বদ্বীপ দেশের ভেতর থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে শহরটির গ্রীষ্মকাল দম আটকানো একটি সময়। তবে শীত এখানে স্বর্গীয় এবং ব্যস্ত সভ্যতার যাবতীয় স্পর্শের বাইরে থাকা এই নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে শীতকালটাই সেরা। এখানে কোনো জমকালো শপিং মল বা প্লাজার দেখা মিলবে না, দেখা মিলবে না চওড়া কোনো রাজপথেরও। মূলত বড় শহরের ব্যস্ততার কিছুরই দেখা মিলবে না এই এলাকায়। দেখা মিলবে কেবল সৈকতের জনপ্রিয় এলাকাগুলোর ধারে অস্থায়ী খুপড়ির মতো কিছু দোকান, যেখানে পাওয়া যাবে এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিল্পদ্রব্য, মালা, ঝিনুক, প্ল­াস্টিকের গহনাসহ অন্যান্য ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্র যেমন চুলের ক্লিপ, গৃহসজ্জার টুকিটাকি ও আয়না।

সৈকতের পূর্বাঞ্চলে আছে গঙ্গামাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি নামকরা সুন্দরবন থেকে স্থানচ্যূত একটি বন। একসময় এই পুরো এলাকাটিই সুন্দরবনের ভেতরে ছিল। সময়ের সাথে সাথে সুন্দরবন পশ্চিমে খুলনার দিকে সরে গেছে। তবে এই অংশটি সেই অতীত বনাঞ্চলের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

কুয়াকাটায় আরো আছে উল্লে­খযোগ্য পরিমাণে রাখাইন বসতি। যারা কয়েকশ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসে বসতি গড়ে তুলেছে। মূলত রাখাইনদের কুয়া খনন থেকে এই এলাকাটি নামকরণ, কুয়া মানে গভীর জলাধার এবং কাটা মানে খনন করা। এখানকার কিছু কিছু পুরনো কুয়ায় এখনও সুপেয় পানি পাওয়া যাবে। যে কেউ চাইলে রাখাইন পল্লীও ঘুরতে যেতে পারে। এলাকার অন্য সব বসতির চেয়ে রাখাইনদের বসতি বেশ আলাদা। এখান থেকে রাখাইনদের হাতে তৈরি উজ্জ্বল রঙের কাপড়ও কেনা যেতে পারে। রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এখানকার রাখাইন পল্লীতে বিশাল একটি বৌদ্ধমূর্তির দেখাও মিলবে। ত্রিশ ফুট সোনালী বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপনের জন্য পুরনো মন্দিরকে ঢেলে সাজানো হয়েছে নতুন করে। হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের রাশ পূর্ণিমা ও মাঘ পূর্ণিমার সময়ে সমুদ্রের ধারে বিশেষ ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। হাজার হাজার অনুসারীরা ওই সময়ে এসব স্থানে আসে।

আনকোরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যের জন্য বাংলাদেশিরা জনপ্রিয় ও সবার পছন্দের এ কুয়াকাটাকে সাগরকন্যা নাম দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!