class="post-template-default single single-post postid-53271 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

নবীনদের পদচারণায় চবি ক্যাম্পাসে ফিরেছে প্রাণ

মো. শামীম হোসাইন, চবি প্রতিনিধি

‘এসো হে নবীন, বাজিয়ে সুর-লহরী উল্লাসিত নব বীণ। আজ সুর মিলিয়ে গাইব জয়যাত্রার গান, আনন্দে আহ্লাদিত নবীন প্রাণ।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেন স্টেশনে আড্ডারত শিক্ষার্থীরা

বছরের মাঝ পথে ক্যাম্পাসে মৌনতা থাকলেও নবীনদের আগমনের সাথে সাথে মৌনতা ভেঙে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে ক্যাম্পাস জুড়ে। নির্জীব–নীরব ক্যাম্পাস নিমিষেই যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।



নতুন রঙে নবীনদের পদচারণায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। ২ হাজার ৩১২ একরে অবস্থিত শাটল ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও তার ব্যতিক্রম নয়। হাজারো প্রতিযোগীকে পাশ কাটিয়ে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল স্বপ্নের ক্যাম্পাস। গত ৩০ জুন চবির ২০২৩-২৪ সেশনের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ দেশের ক্রান্তিকালে সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব করে সাজিয়ে নিচ্ছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বৃহৎ এ ক্যাম্পাসকে। ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে নবীনদের ক্লাস। ক্যাম্পাসে দেখা মিলছে হাজারো নতুন মুখের

চবির ক্যাম্পাস জুড়ে দেখা যায় একঝাঁক প্রাণবন্ত, চঞ্চল নতুন মুখ। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও নতুনদের আগমনে মাতিয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।

প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা এখন আনন্দের দিন কাটাচ্ছেন, হাসছেন প্রাণ খুলে, গাইছেন আনন্দের গান। তাদের অনুভূতিগুলো এমনটাই বলে দেয়।

জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তির পর সম্পূর্ণ নতুন মুক্ত জ্ঞানচর্চার রাজ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে স্কুল, কলেজের চৌকাঠ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কোন একটিতে নিজের আসন নিশ্চিত করা। জীবনের সকল বাধা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ মানেই অন্যরকম এক অনুভূতি এবং নতুনত্বের হাতছানি। জীবন বিনির্মাণে এক স্থায়ী সূতিকাগার বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয়কে। স্বভাবতই নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাম্পাসের বিষয়টা একটু উচ্ছ্বাসের, রোমাঞ্চের। তাঁদের স্বপ্নময়ী দুটি চোখে নতুন স্বপ্নে আর উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রত্যয় নিয়েই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনে চবির ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে উঠেছে।

স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আসার পর প্রত্যেকেই মনে মনে আঁকতে শুরু করল নানান স্বপ্ন, নানান পরিকল্পনা, নানান আয়োজন আর আনন্দঘন পরিবেশে। নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সব সময় মুখরিত থাকে ক্যাম্পাসের আড্ডা দেয়ার স্থানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়ি,লেডিস ঝুপড়ি, শহীদ মিনার, সোস্যাল সাইন্স ঝুপড়িতে নবীনদের পদচারণায় যেন সব সময় গড়ে ওঠে আন্দদের মেলা। সন্ধ্যাবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন তলায় চায়ের আড্ডা আর গানের আসরে আনন্দে মাতিয়ে থাকে নবীন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে চলাচলের বাহন শাটল ট্রেন আর ক্যাম্পাসে আসা–যাওয়ার পথে পুরোটা সময়জুড়ে গানে–গানে মুখর করে রাখে শাটলের সবকয়টি বগি। তৈরী হয় গানের মেলা। এটাকে বলা হয় চলন্ত ক্যাম্পাস। ঘন্টার পর ঘন্টা বগি চাপড়িয়ে গানে–গানে শাটল মাতিয়ে রাখেন নবীন শিক্ষার্থীরাই। রক–র‌্যাপের পাশাপাশি জারি–সারি, ভাটিয়ালি, প্যারোডি, পাহাড়ি ও বাংলা সিনেমার গানসহ এমন কোন গান হয়তো বাদ নেই, যা শাটলে গাওয়া হয়না।

নবীনদের সাথে সাথে মাঝে মাঝে সঙ্গ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত পুরাতন শিক্ষার্থীরা। গানের আসরের পাশাপাশি  বিভিন্ন রকম ছড়া, কবিতা, গান আর আড্ডায় মুখোরিত থাকে শাটল ট্রেন। নবীনরা এমন আনন্দঘন পরিবেশ পেয়ে নিজেদেরকে সব সময় আনন্দের আবরণে ঢেকে রাখেন

নবীন শিক্ষার্থীরা তাদের নতুন বন্ধু বান্ধুবীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে- কানাছে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিকাল গার্ডেন, ফরেস্ট্রি, টেলিটক পাহাড়, চালন্দা গীরি কেন্দ্রীয় কেলার মাঠে যেদিকে মুখ ঘুরানো হয় নবীনদের কোলাহল আর আনন্দঘন পরিবেশ ছাড়া অন্য কিছুই যেন অবলোকন হয় না ।

২০২৩-২৪ সেশনের নবীন শিক্ষার্থী মো. শিমুল অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে যখন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করছিলাম, তখন মনে হলো যেন এক উষ্ণ বাতাস আমায় ক্যাম্পাসে স্বাগতম জানাল। এ যেন এক যুদ্ধ জয়ের পরে বিজয়ের আনন্দ। এমন একটা উজ্জ্বল দিনের অপেক্ষায় শত বাঁধা আর কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েছিলাম ! কত পরিশ্রম, কত ত্যাগ! যার বিনিময়ে আজ আমি কোলাহল পূর্ণ শাটল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এসব তরুণ শিক্ষার্থীরাই একদিন এ দেশের কর্ণধার হয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে থাকবে সকল বাধা-বিপত্তির। তাই তরুণদের উদ্দেশ্যে তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার একটি অংশ উত্থিত করতে হয়- “ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বৈশাখীর ঝড় তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!”

মো. শামীম হোসাইন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!