Friday, March 14

মানবসভ্যতার কারিগর শ্রমিকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

সভ্যতার আভিজাত্যের উচ্চ পর্যায়ে এসেও আমরা অসভ্য। উন্নত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি আমরা তাদের প্রতি অকৃতজ্ঞ। শ্রম দিয়ে গড়া এ বিশ্বের প্রতিটি স্তরে আছে শ্রমিকের ছাপ। কিন্তু আমরা সভ্য নামের অসভ্য সমাজ তা মানতে নারাজ। আমরা তাদেরকে দমিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। তাই শ্রমিকদের পাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী কাজী মালিহা আকতার…..

“শ্রমজীবীদের মূল্যায়ন করুন”

এই যে ইট পাথরের সুউচ্চ দালানগুলো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে কী কখনো অপলক দৃষ্টিতে ভাবনায় হারিয়েছেন? প্রতিটা ইট পাথরের ভাঁজে চাপা পড়ে আছে কতশত গল্প। এই গল্পগুলো ত্যাগের গল্প যাতে মিশে আছে আমাদের শ্রমিকের ঘাম। আমাদের সুন্দর আগামীর স্বপ্ন নিমার্ণে কতশত আনন্দের মুহূর্ত তাদের জলাঞ্জলি দিতে হয়। তাদের পরিবারের সাথে বহু ঈদ  আনন্দ অপূর্ণ থাকে, জমা হয় কতশত স্বপ্ন যা অপূর্ণ থাকে। রোগ – শোকেও তাদের ছুটি নেই। কেবল যন্ত্র মানবের ন্যায় ছুটছেন তো ছুটছেন, থামবার জো নেই। যেই শ্রমিকেরা আমাদের হাসাতে নিজেদের সুখটুকু বন্ধক রাখেন  তাদের মুখেও হাসি হোক অমলিন। তাদের ও পরিবারের সাথে কিছু আনন্দের মুহূর্ত জমা হোক। যাদের ছাড়া আমাদের দুদন্ড চলে না সমাজে তাদের ও প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত হোক। তারা ভালো থাকলে, ভালো থাকবে দেশ নিশ্চিত হবে অনাবিল প্রশান্তি।

তৈয়বা খানম

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান, চট্টগ্রাম কলেজ

“শ্রমিকদের অধিকার”

একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা। এসবই একজন শ্রমিকেরও প্রাপ্য। শ্রমিকরা তাদের শ্রমের প্রাপ্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেনা। শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রগুলো নিরাপদ নয়, মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধুমাত্র পেটের দায়ে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। শ্রমিকরা হলো দেশের সম্পদ, তাদের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখার সুযোগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের কাজের অধিকার সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

উম্মে সালমা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ

“মানবসভ্যতার ধারক ও বাহক হল শ্রমিক”

যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সমৃদ্ধশালী রয়েছে, যাদের শ্রমের বিনিময়ে আমরা এই সৌন্দর্যমণ্ডিত দালানকোঠায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি  সেই মহামানবদের ভাগ্যে জুটল না একটা নিরাপদ আশ্রয়, নেই শোভনীয়  একটা জীবনব্যবস্থা। কেবল এটুকুই নয় ন্যায্যপ্রাপ্যের জন্য কথা বললে চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয়ে দমে যেতে হয়।

শ্রমিকরা সবসময় মালিকপক্ষ দ্বারা নির্যাতিত ও অবহেলিত। শ্রম আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠন করার স্বীকৃত দেয়া হলেও তা দুর্নীতির অন্তরালে থেকে যায়।

সুতরাং এখনই সময় প্রজন্মের কাছে শ্রমিকদের অবদান তুলে ধরা,তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা,কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেয়া। শ্রমজীবীদের কথা বলার ও মতামত দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। আসুন আমরা সকলে মিলে শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে শ্রমজীবীদের পাশে দাঁড়াই।

তানজিনা আক্তার

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ

“উন্নত বিশ্ব শ্রমিকদের দান”

যুগে যুগে গড়ে উঠা এ বিশ্ব সাক্ষী দিবে শ্রমিকের মূল্যের। কিন্তু সভ্য সমাজ অস্বীকৃতি জানায় শ্রমিকদের মূল্যায়ন করতে। শ্রমিকের উপর ভর দিয়ে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু শ্রমিকরা বঞ্চিত তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। সময়মতো বেতন না পাওয়া, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ করা, অতি প্রয়োজনের ছুটি না পাওয়া, কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হলে চিকিৎসার দায়িত্ব না নেওয়া, অসম্মানজনক আচরণের শিকার হওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় শ্রমিকরা। বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজকে স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে নিতে শ্রমিকদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।

কাজী মালিহা আকতার

শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *