বাজারে থাকা ছয় ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত তরল দুধে ক্ষতিকর মাত্রার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর মান যাচাই ও পরীক্ষার জন্য গঠিত কমিটির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুধের নমুনা পরীক্ষায় এমন চিত্র মিলেছে।
এক বা একাধিক ল্যাবের অণুজৈবিক বিশ্লেষণে কলিফর্ম ও এরোবিক প্লেট কাউন্ট নামের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যা বিএসটিআই নির্দেশিত মানের চেয়ে ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বাজারে থাকা সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত তরল দুধের নমুনা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ছয়টি ব্র্যান্ডের দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ব্র্যান্ডগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত মিল্ক ভিটা, আফতাব মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, পিউরা, মু ও আল্ট্রামিল্ক।
হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে গত ২১ জুন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। বিএফএসএর উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মো. জুবেরী কমিটির সদস্যসচিব। ওই কমিটি দেশের বাজারে থাকা সব পাস্তুরিত তরল দুধের বিশুদ্ধতা ও খাদ্যমান যাচাই, নকল বা ভেজাল দুধের অস্তিত্ব ও উৎস চিহ্নিত করা এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণ, বাজারজাতকরণের বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। পাস্তুরিত তরল দুধের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আরেকটি কমিটি করা হয়েছে।
এই কমিটিরও আহ্বায়ক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ। এখন যেসব ব্র্যান্ডের দুধে ক্ষতিকর মাত্রার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে সেগুলোর কারখানা পরিদর্শন করবে কমিটি।
জানা গেছে, কারখানার উৎপাদনব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখতে না পারায় এসব দুধে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো রিফর্ম করে বেড়ে যায়। বাড়তে বাড়তে একসময় তা ক্ষতিকর মাত্রায় ছড়িয়ে যায়।
মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সঠিকভাবে পরীক্ষা করলে মিল্ক ভিটার পাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর মাত্রার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যাবে না। সমস্যা হলো, পরীক্ষাটা নিয়মমাফিক হচ্ছে না। কমিটির লোকজন বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দুধ সংগ্রহ করে ল্যাবে নেওয়ার মাঝের সময়টাতে সঠিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারছে না। তারা চাইলে নিজ ব্যবস্থাপনায় আমরা নমুনা ল্যাবে পৌঁছে দেব। ’
একাধিক সূত্রের দাবি, খুচরা বিক্রেতা থেকে দুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে নামিদামি আরো অনেক ব্র্যান্ডের দুধে ক্ষতিকর মাত্রার ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যাবে। কেননা কোনো প্রতিষ্ঠানই উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সঠিক তাপমাত্রা সংরক্ষণ করছে না। অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো ঠিকভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বিএসটিআইয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে কম্পানির পছন্দমতো পয়েন্ট থেকে দুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে সহযোগিতা করছে।
কমিটির আহ্বায়ক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব ব্র্যান্ডের দুধে সমস্যা পাওয়া গেছে সেগুলো আবার পরীক্ষা করা হবে। তাদের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার কোথায় সমস্যা রয়েছে তা-ও খুঁজে দেখা হচ্ছে। সব কাজ শেষ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী মাসের শুরুর দিকে হাইকোর্টে জমা দেওয়া হবে।
গণমাধ্যমে আইসিডিডিআর,বির একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গত ১৭ মে। প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, বাজারে থাকা পাস্তুরিত তরল দুধের ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর মাত্রার কারণে অনিরাপদ হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে এরপর একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে থাকা সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের নমুনা পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।