মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সারা বছর ধরে টমেটো চাষাবাদ চলছে। অ-মৌসুমে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বন বেগুন গাছের সাথে টমেটোর চারার গ্রাফটিং পদ্ধতি দীর্ঘদিন যাবত অবলম্বন করে কৃষকরা বাড়িতে বসেই আয়ের এই পথ বেঁচে নিয়েছেন। ফলে সারা বছর চারা পেয়ে সেড পদ্ধতিতে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সময়েও কৃষকরা টমেটো চাষাবাদে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। উৎপাদিত এসব টমেটো দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, জামিরকোনা, হোমেরজান, পাত্রখোলা, কাটাবিল, নাজাতকোনা, ধলাই পার, নরেন্দ্রপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে গ্রীষ্মকালীন সময়ে ১০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষাবাদ হয়েছে। এসব এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলা মিলিয়ে শীতকালীন সবজি হিসাবে এ পর্যন্ত দেড়শ’ হেক্টরেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। তবে মৌসুম পর্যন্ত ২৫০ হেক্টর অতিক্রম করবে। অনেকেই ধান চাষের চেয়ে টমেটো চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
চাষাবাদকারী কৃষকরা বর্তমানে জমিতে পরিচর্চার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে পূর্বের তোলনায় টমেটো চাষাবাদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। মৌসুম পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে টমেটো চাষাবাদে প্রায় তিনশ হেক্টর জমি অতিক্রম করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গ্রাফটিং চারা উৎপাদনেও সাফল্য লাভের শীর্ষে রয়েছেন কয়েকজন কৃষক। জেলার সর্বোচ্চ টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে কমলগঞ্জে। বর্ষা মৌসুমেও টমেটোর উৎপাদনে সাফল্য রয়েছেন অনেকেই। তিলকপুরের নৃপেন্দ্র কুমার সিংহ, ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ, রেজা উদ্দিন, আব্দুল হাসিম টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন ও বিক্রয় করে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন।
সরেজমিন পাত্রখোলা বালুচর এলাকা ও আদমপুর ঘুরে দেখা যায়, এলাকায় প্রায় ১৮ একর জমিতে গাছে গাছে পাকা ও আধা পাকা টমেটো ঝুলছে। একই অবস্থা আদমপুর ও আলীনগর ইউনিয়নের গ্রীষ্মকালীন ক্ষেতে। উপজেলার উত্তর তিলকপুর গ্রামের আবু সোফিয়ান, চেরাগ মিয়া, শাহিন মিয়া, তাহির মিয়া, এলাইছ মিয়া, মোবারক মিয়া, ফরিদ মিয়া, মেন্দি মিয়া, বিলাল মিয়া, ধলাইপারের মানিক মিয়া, কান্দিগাঁও এর খায়র্জুজামান, ঘোড়ামারার গাজি মিয়া, পাত্রখোলার জাহাঙ্গির, জয়নাল হাজারী, বিরবল প্রসাদ, সবুজ মিয়া, মৃনালসহ অনেক কৃষক এ ফসল চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
কৃষকরা, বলেন এ চাষাবাদে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়া ছত্রাক ও পোকামাকড়ের হাত থেকে ক্ষেত রক্ষা করা মোটেই সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। এভাবে চাষাবাদ করেই অভাবের সংসার ঘুচাতে সক্ষম হয়েছি।
কমলগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাধাকান্ত সিংহ জানান, গ্রীষ্মকালে সেড দিয়ে চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, আমি সদ্য যোগদান করছি। জেনেছি কমলগঞ্জে টমেটো-চাষাবাদ একটি বিরল দৃষ্টান্ত। সরেজমিনে চাষাবাদের চিত্র না দেখলে তা সহজে বুঝা যাবে না। কৃষি বিভাগের সার্বক্ষনিক তদারকি ও পরামর্শ মোতাবেক এই এলাকায় টমেটোর চাষাবাদ হচ্ছে।