class="post-template-default single single-post postid-1081 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

টবে পুদিনা পাতার চাষ

টবে পুদিনা
টবে পুদিনা

ঘরের ভেতর পুদিনা পাতার চাষ

পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। এই গাছের পাতা তরি-তরকারির সাথে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের বড়া তৈরির কাজে। আজ জানবো কী করে সহজে টবে পুদিনা চাষ করা যায় তা নিয়ে।

বিশেষ করে রমজানের এই মাসে বাড়ি কিংবা ইফতারের দোকানগুলোতে ব্যাপকভাবে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও বোরহানী, সালাদ এমনকি ফুড ডেকোরেশন এর কাজেও ব্যবহার করা হয় এই পাতা। চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলেও রয়েছে পুদিনা পাতার নানা ব্যবহার। যারা রমজান মাসে পুদিনা পাতা পেতে চান তাদের এখনই বাড়ির ছাদে, বেলকনিতে অথবা বারান্দার গ্রীলে চাষ করতে পারেন এই পুদিনা পাতার গাছ।

চাষ কৌশল:
যে সব তেলের কন্টেইনার ফেলে দেয়া হয়, সেগুলো সংরক্ষণ করে খুব সহজেই চাষ করা যায় পুদিনা পাতার গাছ। এজন্য কন্টেইনারে শুকনো গোবর বা ফেলে দেয়া চা-পাতার সাথে দো-আঁশ মাটি ভালভাবে মেশাতে হবে। সেক্ষেত্রে গোবর ২কেজি, দো-আঁশ মাটি ৪ কেজি হারে মেশালে ফলাফল ভাল পাওয়া যাবে। ওই মিশ্রন থেকে প্রতিটি টব বা কন্টেইনারে ৩ থেকে ৪কেজি মিশ্রন স্থাপন করে পুদিনা পাতার গাছ লাগাতে হবে। অনেক নার্সারিতে পুদিনা পাতার গাছ পাওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই গাছের একটি পুরানো ডাল শিকড়সহ কেটে টবে বা কন্টেইনারে রোপন করলেই কিছুদিনের মধ্যে ওই পাত্র পুদিনা পাতার গাছে ভরে যায়। তাই প্রথমদিকে ২/৩টি গাছ সংগ্রহ করলে আর কখনও চারার জন্য অন্য জায়গায় যেতে হয় না। কন্টেইনারে বা টবে লাগানো গাছগুলো প্রয়োজনে তার দিয়ে বেঁধে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা ছাদেও এর চাষ করা যায়। যারা শহরে থাকেন তারা ছাদে, বরান্দায় এবং বেলকনিতে এর চাষ করতে পারেন।

অন্যান্য ব্যবস্থাপনা:
পুদিনা গাছের তেমন কোন যত্নের দরকার হয় না। তবে ২/৩ দিন পরপর সামান্য পানি দিতে হয়। এই গাছে সূর্যের আলোর তেমন প্রয়োজন হয় না তাই ডেকোরেশন প্লান্ট হিসেবে ঘরের মধ্যেও টবে লাগানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে টবগুলো বাইরে এনে গাছের গোড়ার মাটিগুলো আলগা করে দিতে হবে। লাগানো পাত্রের নীচে ২/৩টি ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে করে বাড়তি পানি পড়ে যায় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি পুরণ হয়। এ ছাড়াও ছাদের কোন এক স্থানে পলিথিন বিছিয়ে তার চারপাশে ইট অথবা বেড়া দিয়ে তারমধ্যে গোবর বা চা-পাতা মিশ্রিত মাটি দিয়েও পুদিনা পাতার চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেও এই পাতা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
এগ্রোবাংলা ডটকম

বানিজ্যিকভাবে পুদিনাপাতার চাষ

বাংলা, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, তেলেগু, তামিল সব ভাষাতেই এর এক নাম পুদিনা। এটা সুগন্ধিগাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছড়ার মধ্যেও বাজার থেকে পুদিনাপাতা কেনার ফরমায়েশ পাওয়া যায় ‘পুদিনা আনিও, পান আনিও’। খাদ্যকে সুরেচক করতে পুদিনাপাতার কোনো জুড়ি নেই। শহরাঞ্চলে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। সুদূর অতীত থেকে এ দেশে পুদিনাপাতার চাষ হয়ে আসছে। কিন্তু সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ নয়, কোনোভাবে বাড়ির আঙিনায় দু-চারটা গাছ লাগিয়ে পারিবারিকভাবে ব্যবহার করা। আজকাল বাজারে আঁটি আঁটি পুদিনাপাতা সারা বছর বিক্রি হচ্ছে। তাই পুদিনাকে শুধু বাড়ির আঙিনায় আটকে রাখা ঠিক হবে না। চাইলে অন্য ফসলের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে। বিদেশেও পুদিনাপাতার চাহিদা আছে। রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ হতে পারে। পুদিনাপাতার ওপর ভিত্তি করে স্খাপিত হতে পারে পিপারমেন্ট অয়েল উৎপাদন শিল্প।

গাছ পরিচিতি : পুদিনা একটি সাধারণ আগাছা ধরনের গাছ। কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। কাণ্ডের রঙ বেগুনি, পাতার রঙ সবুজ। পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা। পাতা কিছুটা রোমশ ও মিন্টের তীব্র গìধযুক্ত। গাছের নিচের অংশ থেকে অনেক ধাবক বের হয়। পুদিনাপাতার গাছ লেবিয়েটিসি পরিবারের মেন্থা গনের অন্তর্গত। এ গনের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে গপষয়ভথ থড়ংপষঢ়মঢ় এ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ভালো জন্মে। জাপানি জাত চাষের জন্য ভালো।

ব্যবহার : পুদিনাপাতার গাছ থেকে পিপারমেন্ট তেল তৈরি হয়। তেল বেশ মূল্যবান। বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী বিশেষ করে টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১০ টন পিপারমেন্ট তেলের শিল্প চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। এই পরিমাণ তেল উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার একর জমিতে পুদিনা উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার পিপারমেন্ট অয়েল তাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ দেশের বাজারে মূলত কাঁচা পুদিনাপাতার চাহিদাই বেশি। প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন কাঁচা পুদিনাপাতার চাহিদা রয়েছে।

পুদিনা এ দেশে চাষ হয় মূলত চাটনি, সালাদ আর বোরহানি বানানোর জন্য। এর যে আরো অনেক ব্যবহার আছে সেটাই হয়তো আমরা জানি না। কাঁচা পুদিনাপাতার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চাটনি ও সালাদে। ইদানীং বিভিন্ন পার্টিতে টক দইয়ের বোরহানি তৈরির জন্য পুদিনা পাতার ব্যবহার বেড়েছে। এ ছাড়া মাছ, গোশত, সস, স্যুপ, চা, তামাক, শরবত ইত্যাদি সুগìিধ করতে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে ভেড়ার গোশতের রোস্ট ও মিন্ট জেলি তৈরি করতে পুদিনাপাতা ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার তেল তৈরিতে। গাছে যখন ফল আসে তখনই পাতায় তেলের মাত্রা বাড়ে। ওই সময় গাছ তুলে পাতন প্রক্রিয়ায় তেল নিষ্কাশন করা হয়। গাছের নিচের পাতা হলদে হওয়া শুরু করলেই কাটিং নিয়ে তেল নিষ্কাশন করা হয়। মৌসুমে একই গাছ থেকে দু’বার কাটিং সংগ্রহ করা যায়। কাটিংগুলোকে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে ঝুলিয়ে শুকানো হয়। কাঁচা পাতার চেয়ে শুকনো পাতা থেকে তেল নিষ্কাশন সহজ ও সস্তা।

চাষাবাদ : কাটিং বা তেউড় লাগিয়ে চারা তৈরি করা হয়। পুরনো ক্ষেত থেকে কাটিং নিয়ে হাপরে বসিয়ে চারা তৈরি করে নিতে হবে। কাটিংয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ সেন্টিমিটার। জমিতে চারা রোপণের সপ্তাহখানেক আগে চারা তৈরি করতে হবে। প্রতি হেক্টর জমি চাষের সময় মাটির সাথে ১০ থেকে ১৫ টন গোবর বা জৈবসার মিশিয়ে দিতে হয়। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করার পর চারা রোপণের আগে ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হয়। বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেন্টিমিটার। প্রতি বেডের মাঝে নালা থাকবে। বেডের দৈর্ঘ্য জমির আয়তন অনুসারে কম-বেশি হতে পারে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য বেডের আকার একটু অন্য রকম হবে। এ ক্ষেত্রে বেড ১ মিটার চওড়া ও ৪৫ মিটার লম্বা হবে। এ পরিমাণ জমির জন্য গোবর বা কম্পোস্ট সার লাগবে ২০ ঝুড়ি (২০০ কেজি), হাড়ের গুঁড়া ৫ কেজি, টিএসপি সার ১-১.৫ কেজি, কাঠের ছাই ৫ কেজি অথবা এমওপি সার ১ কেজি। এসব সার বেড তৈরির সময় বেডের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বর্ষার আগে ও পরে চারা রোপণের নিয়ম। সে অনুযায়ী জুন অথবা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পুদিনার চারা রোপণ করা যেতে পারে। বেডে ৩০ সেন্টিমিটার পরপর চারা রোপণ করা যেতে পারে। চারা রোপণের পর সেচ দিতে হবে। প্রতি দুই মাস পরপর প্রতি বর্গমিটারে ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গাছ লম্বা হতে শুরু করলে ১০ সেন্টিমিটার মাপের কাটিং বা ডাল কেটে ১০-১৫টি ডাল একটি আঁটিতে বেঁধে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠাতে হবে। প্রতি দু’বার কাটার পর একই নিয়মে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার দেয়ার পর সেচ দিতে হবে। বাণিজ্যিক জমিতে চারা রোপণের ১০-১২ সপ্তাহ পর থেকে প্রতি মাসে একবার করে প্রতি বর্গমিটারে ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!