সুনামগঞ্জের ছাতকে এক তরুণীকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সালিসে অভিযুক্ত শিক্ষককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তরুণী ও তাঁর পরিবার এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে বাধা দিচ্ছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি ও কিছু সালিসকারী। অভিযুক্ত শিক্ষক প্রভাবশালী সালিসকারীদের ম্যানেজ করেছেন বলে অভিযোগ নির্যাতিত তরুণীর পরিবারের।
অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল হকের বাড়ি ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লাম্বাহাঠী গ্রামে। তিনি স্থানীয় জামেয়া ইসলামিয়া দারুল হাদিস হাসনাবাদ মাদরাসার শিক্ষক। তাঁর ১৭ সন্তান রয়েছে।
নির্যাতিত তরুণীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, কালারুকা ইউনিয়নের দরিদ্র ওই তরুণী কিশোরী বয়সে আব্দুল হকের কুনজরে পড়েন। তবে আব্দুল হক সম্পর্কে তরুণীর দাদা হওয়ায় বিষয়টি কেউ সেভাবে দেখেনি। পরে তরুণীকে ধর্মীয় কথাবার্তা বলে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন আব্দুল হক। ঘটনাটি তাঁর স্ত্রী জানতেন। কিন্তু আব্দুল হকের ভয়ে বিষয়টি তিনি চেপে যান। একপর্যায়ে আব্দুল তরুণীকে প্রবাসীর কাছে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। দুই বছর আগে আব্দুল মধ্যস্থতা করে এক প্রবাসী বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেন তরুণীকে। বিয়ের আগে আব্দুলের যৌন নির্যাতনে তরুণী চারবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন বলে তাঁর পরিবার জানায়। বিয়ের পর তরুণী বাবার বাড়ি বেড়াতে এলে তাঁকে ধর্ষণ করে চলেন আব্দুল। সম্প্রতি তরুণীর বাবার বাড়ি আসার খবর পেয়ে সেখানে আব্দুল হানা দেন। তাঁকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করার সময় তাঁর মোবাইল ফোনে স্বামীর কল আসে। কল রিসিভ হলে ওপাশ থেকে স্বামী বিষয়টি টের পান। তিনি আব্দুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য স্বজনদের অনুরোধ জানান। পরে তরুণী তাঁর ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্যাতনের বিষয়টি পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান। প্রায় ১৫ দিন আগে এ নিয়ে গ্রামে সালিস বৈঠক বসে। বৈঠকে আব্দুল হক তাঁর কুকর্মের কথা স্বীকার করে দুই লাখ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে চান। কিন্তু তরুণী ও তাঁর পরিবার আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়। তবে এখন এলাকার কিছু সালিসকারী আব্দুল হকের কারণে আলেম-ওলামার মানসম্মান নষ্ট হবে এই ছুতায় বিষয়টি আইনগত নিষ্পত্তির বদলে স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। আর তরুণী ও তাঁর পরিবারকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা দিচ্ছেন আব্দুল হক।
এদিকে কিছুদিন আগে তরুণীর স্বামীর স্বজনরা এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমেদের কাছে যান। চেয়ারম্যান আইনের আশ্রয় নিয়ে তরুণীকে স্বামীর পরিবারে নিরাপত্তার সঙ্গে রাখতে বলেন।
সালিসে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় যুবক বলেন, অসহায় তরুণী সালিসে মামলা করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু মামলা না করতে তাঁকে নজরদারিতে রেখেছেন আব্দুল হক। তা ছাড়া প্রভাবশালী কয়েকজন সালিসকারীকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সদর আলী বলেন, ‘আমি সালিসে যাইনি। তবে বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লেগেছে। তরুণীর পরিবার এলে আইনি সহায়তা নেওয়ার কথা বলব।’
উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ বলেন, ‘একজন আলেম দিনের পর দিন একটি অসহায় মেয়েকে কিভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন শুনলেই খারাপ লাগে। এখন তাঁর সংসার ভাঙার পথে। আমি মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির পরিবারকে আইনি সহায়তা ও মেয়েটিকে তাঁদের জিম্মায় রাখার কথা বলেছি।’
নির্যাতিত তরুণীর এক ভাই বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আব্দুল হক ও তাঁর লোকজন আমাদের আইনি ব্যবস্থা নিতে দিচ্ছে না। দিনের পর দিন আমাদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে আব্দুল হক জঘন্য কাজ করেছেন। আমরা তাঁর বিচার চাই।’
অভিযু্ক্ত মাওলানা আব্দুল হকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তিনি ফোনটি বন্ধ করে দেন।
ছাতক থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ভিকটিম পরিবার আইনগত সহায়তার জন্য এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’