চীনের অর্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন চাষিরা বড় সংকটে পড়েছেন। মার্কিন কৃষি সংগঠনগুলো বলছে, চীনের বাজার হারিয়ে এখন মার্কিন সয়াবিন উৎপাদকরা পড়েছেন ‘দ্বিগুণ ক্ষতির’ মুখে—একদিকে তারা হারিয়েছেন বাজার, অন্যদিকে দামও কমছে সয়াবিনের।
মার্কিন সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী জিম সাটার বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ-স্তরের আলোচনায় সয়াবিনকে ব্যবহার করা হয়েছে চাপের বিষয় হিসেবে।’

নেব্রাস্কা-লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লিয়া নোগুয়েরা বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধের আগে মার্কিন সয়াবিনের ক্রেতা হিসেবে চীনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘চীন যে আর আমাদের বাজার নয়, সেটা নিশ্চিতভাবেই মার্কিন কৃষকরা অনুভব করছেন।’ তার মতে, চীনের চাহিদা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় স্থানান্তর হওয়ায় মার্কিন কৃষকরা শুধু তাদের বৃহত্তম বাজার থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়নি, বরং বিশ্বব্যাপী সয়াবিনের দামও কমেছে।
২০১৮ সালের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সয়াবিনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কিনত চীন। এখন সেই বাজার দখল করেছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।
গত বছর চীনের ৭১ শতাংশ সয়াবিন এসেছে ব্রাজিল থেকে। সম্প্রতি আর্জেন্টিনা সয়াবিন রপ্তানিতে কর কমিয়ে দিয়েছে, যা মার্কিন কৃষকদের নতুন করে চাপে ফেলেছে।
মার্কিন কৃষি দফতর জানিয়েছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হবে। কিন্তু চীন সেটা না কেনায় নেব্রাস্কা, আইওয়া ও নর্থ ডাকোটার মতো অঙ্গরাজ্যের গুদামগুলো সয়াবিনে ভরে গেছে।
নেব্রাস্কার চাষি রেজি স্ট্রিকল্যান্ড বলেন, ‘আমরা এখন সব মজুদ করছি। আশা করছি কোনোভাবে চীনের বাজার আবার খুলবে।’
অন্যদিকে, নতুন সয়াবিনের কোনো অর্ডারই পাচ্ছে না নর্থ ডাকোটা। স্থানীয় কৃষকরা জানালেন, প্রতি হেক্টরে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪০ থেকে ৩৬০ ডলার পর্যন্ত।
মার্কিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের বিকল্প বাজার খোঁজার কারণে বিশ্ববাজারেও সয়াবিনের দাম পড়ে গেছে। ফলে আমেরিকান কৃষকরা শুধু রপ্তানি হারাননি, স্থানীয় বাজারেও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চীন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অযৌক্তিক শুল্ক’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দুই দেশের বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে পারে। তবে মার্কিন সরকার এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।
এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসে কৃষকদের সহায়তায় বিল পাসের আলোচনা চলছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন— সহায়তা নয়, তারা বাজার চান।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যানুসারে, ২০০৪ সালের পর প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে চীনে মার্কিন সয়াবিন রপ্তানি শূন্যে নেমে এসেছে। জুলাইজুড়ে, মার্কিন রপ্তানি ৫১.৩ শতাংশ কমেছে, যা ২৬০ কোটি ডলার ক্ষতির সমান। ইউএসডিএ’র তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে চীনে সামগ্রিক কৃষি রপ্তানি কমেছে ৫৩ শতাংশ।
নেব্রাস্কা কৃষক ইউনিয়নের সভাপতি জন হ্যানসেন সেপ্টেম্বরে নেব্রাস্কার এক আঞ্চলিক সভায় বলেছিলেন, ‘আমার ৫০ বছরের মধ্যে দেখা সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দার মাঝখানে আছি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মার্কিন ফেডারেল সরকারের চলমান শাটডাউনে সমস্যাগুলো আরও বাড়ছে।
সূত্র: সিএমজি




















