চীনের তাকলামাকানে সবুজের জয় - Mati News
Friday, December 5

চীনের তাকলামাকানে সবুজের জয়

একসময় যাকে বলা হতো ‘মৃত্যুর সাগর’, চীনের সেই সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সুবিশাল তাকলামাকান মরুভূমি আজ জেগে উঠেছে নতুন প্রাণে। বহু বছরের নিরলস পরিশ্রমের পর, হাজার হাজার কিলোমিটারজুড়ে বালু রোধের এক দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে—যা মরুভূমিকে ঘিরে তৈরি করেছে এক সবুজ প্রাচীর।

তারিম অববাহিকার কেন্দ্রে থাকা তাকলামাকান চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি। আর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চলমান বালুর মরুভূমি। প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই মরুভূমি সিনচিয়াংয়ের মোট ভূমির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে আছে।

আশপাশের এলাকার উন্নয়নে এ মরু ছিল বড় বাধা। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সিনচিয়াং প্রশাসন একযোগে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে যুক্ত করে শুরু করে মরুভূমি রোধ ও সবুজায়নের অভিযান।

তাকলামাকানের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ছিয়েমো কাউন্টি এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানকার স্থানীয় কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে লেগে আছেন—নলকূপ খনন, গাছ লাগানো, জলসেচ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বালু নিয়ন্ত্রণ কর্মী পাতিগুল ইয়াসিন স্মরণ করেন তার শৈশবের কথা।

বালু নিয়ন্ত্রণ কর্মী পাতিগুল ইয়াসিন জানালেন, ‘ছোটবেলায় প্রায়ই বালুঝড় উঠত। আকাশ হঠাৎ আঁধার হয়ে যেত। বছরে প্রায় দুইশ দিনই এমন ঝড় বইত।’

২০০৫ সালে পাতিগুল যোগ দেন উইন্ডব্রেক ও স্যান্ড কন্ট্রোল ওয়ার্কস্টেশনে, কৌতূহলবশত মরুভূমিতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু বাস্তবে কাজটা কতটা কঠিন—তা তিনি কল্পনাও করেননি।

পাতিগুল বললেন, ‘আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো মরুভূমির প্রান্তে, যেখানে কারকান নদীর পাশে বড় এক জাতের ঘাস জন্মে। বরফে ঢাকা জায়গায় আমাদের হাতে কাস্তে ধরিয়ে দেওয়া হলো ঘাস কাটার জন্য। আমরা হাসতে হাসতে ভাবলাম—‘এটা আবার বালু নিয়ন্ত্রণের কাজ নাকি?’

গত দুই দশকে পাতিগুল নিজেই লাগিয়েছেন হাজারে হাজার গাছ। বসন্তের সময় গাছ লাগানোর আগে রাস্তা তৈরি, নলকূপ খনন আর বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও করেছেন তারা দলবেঁধে। গাছ লাগানোর পর গ্রীষ্মকালজুড়ে চলতো বন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।

এখানে বছরে মাত্র ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, অথচ বাষ্পীভবনের হার অনেক বেশি। তাই সব গাছের সেচ ভূগর্ভস্থ পানি থেকেই হতো, যে কারণে গত দুই দশকে পুরনো গাছ ও নতুন চারাগাছ, সবকটার যত্ন নিতে হয়েছিল সমানভাবে।

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, ২,৭৬১ কিলোমিটারজুড়ে তাকলামাকান মরুভূমিকে ঘিরে বালু রোধ বাঁধ নির্মিত হয়, আর শেষ ২৮৫ কিলোমিটার অংশ সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি।

শেষ ২৮৫ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর পাতিগুল আবেগভরে তাকিয়েছিলেন নীল আকাশের দিকে। তার মতো এমন হাজারো পাতিগুলের তখন নিশ্চয়ই মনে হয়েছিল, এত বছরের পরিশ্রম সত্যিকারের ফল দিয়েছে। তারা এও বুঝতে পেরেছিলেন যত্নের প্রতিদান দিতে প্রকৃতি কখনও হতাশ করে না।

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *