চীনে বেড়েছে বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযান প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে বাড়ছে বিনিয়োগ। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এ খাত। লিখেছেন চায়না মিডিয়া গ্রুপ বাংলা’র প্রতিবেদক শাহানশাহ রাসেল
মহাকাশ অভিযানে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে চীনের বেসরকারি খাত।
২০১৪ সালে চীনের জাতীয় কাউন্সিল এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির পর থেকেই চীনের বাণিজ্যিক মহাকাশযানে বা কর্মাসিয়াল স্পেস ফ্লাইটে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বেশ উৎসাহ পেয়েছে।
সরকারের ২০২৪ সালের কর্মপ্রতিবেদনেও বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানকে নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান দেখা গেছে চীনের বাণিজ্যিক মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত উদ্যোগে ১৭০টি বেরসকারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। যার পরিমাণ সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ইউয়ান বা ২৫৫ কোটি ডলারেরও বেশি।
চীনের বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানি ইউনিয়াও অ্যারোস্পেস টেকনোলজি কাজ করছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও সমুদ্রযাত্রায় স্যাটেলাইট পরিষেবা নিয়ে। এ বছর তারা ৪১টি স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৯০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে চায় কক্ষপথ। তবে এত বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন পুঁজি তাদের ছিল না। আর তাই চীনের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ক্যাপিটেল ইউনিয়াওতে বিনিয়োগ করেছে ২৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বিনিয়োগ পাওয়ার পর তাদের এই উদ্যোগ এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়াওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াং পেংছেং।
ইউনিয়াও অ্যারোস্পেস টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াং পেংছেং জানালেন, ‘আমরা খরচ সমন্বয় এবং নির্মাণের জন্য অর্থ ব্যবহার করেছি। কিছু উচ্চমূল্যের জিনিসের খরচ কমিয়ে এনেছি। আমরা কয়েকটি অন-বোর্ড পরীক্ষা ও অপারেশনাল উৎক্ষেপণে সফল হয়েছি। যা ভবিষ্যতে গুচ্ছ স্যাটেলাইট পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি ভালো সূচনা হয়ে থাকবে।’
একটি উৎক্ষেপণ পরিকল্পনার চূড়ান্তকরণের জন্য একটি রকেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেও ইউনিয়াওকে সহায়তা করেছে এসেনশিয়াল ক্যাপিটেল।
বেইজিংয়ের বেসরকারি রকেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্টিক এনার্জিও তৈরি করেছ আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন রকেট। তাদের সেরেস-১ রকেটের ধারণক্ষমতা ২০০ কেজি থেকে ৩০০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে মাত্র ছয় বছরে।
গ্যালাক্টিক এনার্জির প্রতিষ্ঠাতা লিউ বাইকি জানালেন, ‘পরের বছর যদি ইউনিয়াও তাদের স্যাটেলাইটের ধারণক্ষমতা ২০০ কেজির বেশি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের হাতেও একটি বড় রকেট থাকবে।’
এসেনশিসিয়াল ক্যাপিটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা চাং চিয়ং জানান, মহাকাশ অভিযানে বিনিয়োগগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাই এ খাত থেকে আয়ের চিন্তাও তাদের নেই। তার মতে, মহাকাশ প্রযুক্তির বিকাশ ও বাজার তৈরি হতে ৮ থেকে ১০ বছর লাগতে পারে । সেসময় পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য দেখাতে হয় বলে জানান তিনি।
তিনি উল্লেখ করেছেন, মহাকাশে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের জন্য অনুকূল নীতি এবং চীনের উৎপাদন শিল্পের ব্যাপক উন্নতির কারণেই ধৈর্য রাখার ব্যাপারে আস্থা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।