৯ হাজার মিটার উচ্চতায় চীনের 'চিমু-১’: মালভূমির পরিবেশ রহস্যে নতুন জানালা - Mati News
Friday, December 5

৯ হাজার মিটার উচ্চতায় চীনের ‘চিমু-১’: মালভূমির পরিবেশ রহস্যে নতুন জানালা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লুলাং, নিয়িংছি। এই উচ্চ মালভূমির মাঝে সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে এক বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক অভিযান ‘চিমু-১’ টেথারড বেলুন অ্যাটমোসফেরিক অবজারভেশন এক্সপেরিমেন্ট। একবিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক অর্জনে এটি যুক্ত করেছে এক নতুন অধ্যায়।

এই টেথারড বা ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত বেলুনটি ছিল উচ্চ প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত। একসঙ্গে বহন করেছে ১৬ ধরনের বৈজ্ঞানিক পেলোড, যার মোট ওজন প্রায় ২০০ কেজি। বেলুনটি সফলভাবে উঠেছে ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায়,যেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে পরিবেশের ত্রিমাত্রিক উপাত্ত। এই অর্জন একক পয়েন্ট নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি থেকে ত্রিমাত্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি।

চীনা বিজ্ঞান একাডেমির অন্তর্ভূক্ত অ্যারোস্পেস ইনফরমেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সংক্ষেপে এআইআর—এই প্রকল্পের প্রধান কারিগরি দল। তাদের দাবি, এই পরীক্ষার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের গঠন,দূষণ ছড়ানোর ধরন এবং মেঘের ক্ষুদ্র কণার গঠন সংক্রান্ত ত্রিমাত্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এইসব উপাত্ত ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতে সহায়তা করবে এবং চীনের দ্বিতীয় মালভূমি বৈজ্ঞানিক অভিযানে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

কিন্তু এই অভিযানের ছিল না কোনো সহজ পথ। উচ্চ মালভূমির প্রতিকূল পরিবেশ প্রবল বাতাস, হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা, হঠাৎ পরিবর্তনশীল আবহাওয়া সবকিছুর মাঝেই ‘চিমু-১’ চালিয়েছে সফল পর্যবেক্ষণ। এ পর্যন্ত সম্পন্ন করেছে ৩০টি ফ্লাইট,বিভিন্ন উচ্চতা এবং আবহাওয়ার ধরণ অনুযায়ী সংগ্রহ করেছে সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার।

২০২২ সালেও ‘চিমু-১’ তৈরি করেছিল বিশ্ব রেকর্ড। উঠেছিল ৯ হাজার ৫০ মিটার উচ্চতায়, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছোমোলাংমা বা মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও উঁচু। এই উচ্চতায় থেকে সংগৃহীত তথ্য তীব্র ঠান্ডা, কম বায়ুচাপ এবং অক্সিজেনের স্বল্পতায়ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এনেছে যুগান্তকারী অবদান।

‘চিমু-১’ কেবল মালভূমি পর্যবেক্ষণের কাজে নয়, এখন ব্যবহার হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চলের তৃণভূমি অঞ্চলেও। উত্তরের হুলুনবুইর তৃণভূমিতে বেলুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ-রেজুলেশনের স্পেকট্রাল ইমেজিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর মাধ্যমে নিরীক্ষণ করা হচ্ছে ঘাসের বৃদ্ধি, পশুর সংখ্যা ও চলাচল—যা পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই পশুপালন ব্যবস্থায় সহায়তা করছে।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সম্মিলিত প্রয়াসে ‘চিমু-১’ আজ হয়ে উঠেছে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির পরিবেশগত গবেষণার এক অনন্য সহচর। পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলা ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির এই যাত্রায়।টেথারড বেলুন প্রযুক্তি যেন আকাশে উড়ছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে।

সূত্রন সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *