Sunday, May 5
Shadow

পেশাজীবীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ও কাজের সুযোগ

অস্ট্রেলিয়া সরকার দক্ষ লোকবলের চাহিদা মেটাতে চালু করেছে সাব-ক্লাস ৪৮২ ভিসা । এর অধীনে বিদেশি পেশাজীবীরা অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সাব-ক্লাস ভিসা। এসব ভিসার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি, পরিবারসহ বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরা।

ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক, ব্যাংকার, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, শিক্ষক, আর্কিটেক্ট, সায়েন্টিস্ট, নার্স, প্যাথলজিস্ট, ব্যারিস্টার, আইটি খাতে দক্ষ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞ, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের যেকোনো পর্যায়ের চাকরিজীবী, মিউজিশিয়ান, এনজিও কর্মীসহ আরো অনেক পেশাজীবী অস্ট্রেলিয়ায় কাজের সুযোগ পেতে পারেন। পেশার তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে bit.ly/2mFpTr8 লিংকে। অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ দক্ষ লোকবলের চাহিদা রয়েছে। দেশটির চাহিদা তালিকায় রয়েছে ৪৩২টি পেশা। কোটা পূরণ হওয়ার আগেই দক্ষতার সঙ্গে ও নির্ভুলভাবে আবেদন করলে ভিসা পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।

তিনি আরো জানান, দেশটিতে যাওয়ার জন্য কয়েক ডজন ভিসা প্রগ্রাম রয়েছে। তবে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে যাওয়া তুলনামূলক সহজ। এগুলো হলো সাব-ক্লাস ৪৮২, সাব-ক্লাস ১৮৯, স্কিলড নমিনেটেড ১৯০ ভিসা, স্কিলড রিজিওনাল ভিসা (সাব-ক্লাস ৪৮৯), এমপ্লয়ার স্পন্সরশিপ ও রিজিওনাল স্পন্সরড মাইগ্রেশন স্কিম (সাব-ক্লাস ১৮৭)। সাব-ক্লাস ১৮৯, ১৯০, ৪৮৯, ১৮৬, ১৮৭ প্রগ্রামগুলোতে ইচ্ছা করলেই যে কেউ আবেদন করতে পারবে না। অস্ট্রেলিয়ান অকুপেশন লিস্টের সঙ্গে তার পেশা ম্যাচিং হলেই তবে সে আবেদন করতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ার ভিসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া স্পন্সরশিপ। আবেদনের সময় সঠিক চাকরি ও টেরিটরি বেছে নিতে পারলে ভিসা পাওয়া অনেকটাই সহজ হয়।

 

সাব-ক্লাস ৪৮২

সাব-ক্লাস ৪৮২-এর অধীনে শর্ট টার্ম, মিডিয়াম বা লং টার্ম ও শ্রম চুক্তিভিত্তিক ভিসা হয়ে থাকে। গ্র্যাজুয়েট বা ডিপ্লোমাধারী হলেও প্রগ্রামটিতে আবেদন করা যাবে। সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর। আইইএলটিএসে প্রতিটি ব্যান্ডে কমপক্ষে ৪.৫ স্কোর থাকতে হবে। তবে ৫ থাকলে ভালো হয়। আইইএলটিএসের পরিবর্তে OET (B), TOEFL iBT (35), PTE (36), CAE (154) গ্রহণযোগ্য। ৩ বছর পর পিআরের জন্য আবেদন করা যায়।

 

সাব-ক্লাস ১৮৯

ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে পয়েন্টের ওপর। মোট ৬০ পয়েন্ট প্রয়োজন হয়। পয়েন্ট নির্ধারিত হয় বয়স, কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষা দক্ষতা প্রভৃতির ভিত্তিতে। আইইএলটিএসে ৭ স্কোর থাকলে ১০ পয়েন্ট পাওয়া যায়। বয়স থাকতে হবে ৪৫ বছরের নিচে। কমপক্ষে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়ে।

 

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা স্কিলড নমিনেটেড ১৯০ ভিসা

এই প্রগ্রামটি বেশ জনপ্রিয়। এতে আবেদনের জন্য শর্ট লিস্টেড পেশাজীবী হতে হবে। Australia Consolidated Sponsored Occupation List (CSOL) লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই এ তালিকা পাওয়া যাবে। আবেদনের যোগ্যতা চাওয়া হয় মাস্টার্স। পছন্দের টেরিটরি থেকে চাকরিদাতার দেওয়া স্পন্সরশিপ থাকতে হবে, যা পাওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৬.৫ পয়েন্ট থাকতে হয়। বয়সসীমা ৪৫ বছরের নিচে।

 

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সাব-ক্লাস ৪৮৯

পছন্দের স্টেট বা টেরিটরি থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপ নিতে হবে। কমপক্ষে ৬৫ পয়েন্ট থাকতে হয়। আইইএলটিএসে পেতে হবে কমপক্ষে ৬ স্কোর। বয়সসীমা ৪৫ বছরের নিচে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কর্মস্থলের ঠিকানা, কাজের ধরন, কার্যকাল, বেতন প্রভৃতি তথ্য উল্লেখ করতে হয়।

 

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা এমপ্লয়ার স্পন্সরশিপ

আইইএলটিএসে ৬ স্কোর থাকতে হবে। বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান কোনো চাকরিদাতা স্পন্সর করতে চাইলে খুলে যেতে পারে আপনার ভাগ্য। এ ক্যাটাগরিতে অনেক ধরনের ভিসা হয়। কোন ধরনের ভিসার জন্য আপনি উপযুক্ত, তা সঠিকভাবে জানাটা জরুরি। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ অভিবাসন আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন।

 

সাব-ক্লাস ১৮৬

এ স্কিমে আবেদন করে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস ও চাকরি করা যায়। দেশটির নাগরিকত্বও পাওয়া সম্ভব। আবেদনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। মূলত তিন ক্যাটাগরিতে আবেদন করা যায়—টেম্পরারি, সরাসরি ও চুক্তিভিত্তিক। চিকিৎসা, বাড়ি কেনা, ট্যাক্স সুবিধা ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়। আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৬ স্কোর প্রয়োজন পড়ে। বয়স ৫০ বছরের বেশি হওয়া চলবে না।

 

সাব-ক্লাস ১৮৭

স্কিল অ্যাসেসমেন্টের প্রয়োজন হয় না। তবে রিজিওনাল এরিয়া থেকে জব অফার দরকার হয়। আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৬ স্কোর প্রয়োজন পড়ে। বয়স হতে হয় ৪৫ বছরের নিচে। এতেও স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।

 

আসছে নতুন অভিবাসন নীতি

অস্ট্রেলিয়ায় নতুন অভিবাসন নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকার। নতুন অভিবাসন নীতি চালু হলে সিডনি বা মেলবোর্নের মতো প্রধান শহরে অভিবাসীদের বাস করতে দেওয়া হবে না। নতুন নীতিমালা এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে অভিবাসীরা আঞ্চলিক শহরে বাস করে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, সরকার অনেক ভিসার নিয়ম পাল্টে আঞ্চলিক শহরে অন্তত পাঁচ বছর বসবাস করার আবশ্যিক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। কাজে দক্ষ এবং পরিবার ও শরণার্থী ভিসার ক্ষেত্রে এ শর্ত জোরদার করার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ আঞ্চলিক শহরেই অভিবাসীদের বসবাস কম। তাই আঞ্চলিক এলাকায় অভিবাসী বণ্টন নীতিমালার এই পরিকল্পনা। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ বলছে, এতে দেশের প্রধান শহরে জনসংখ্যার চাপ কমার পাশাপাশি আঞ্চলিক শহরেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণ হবে।

 

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদন সাবধানে

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চলতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর দক্ষ লোকের প্রয়োজন। যোগ্য লোক বাছাই করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিকভাবে আবেদন করতে পারলে আমরা অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজার দখল করতে পারব।’

তিনি জানান, আবেদন প্রক্রিয়ার চারটি ধাপ রয়েছে। এগুলো হলো : ক. যোগ্যতা নিরূপণ, খ. স্পন্সর সংগ্রহ, গ. নমিনেশন ও ঘ. ভিসার জন্য আবেদন। কোনো ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা তৈরি হয় না। অনেক কনসালট্যান্সি ফার্ম এ বিষয়ে ফির বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকে। তবে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ও প্রতারকদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের ওয়েবসাইট (www.australia.gov.au, www.gov.au) ভিজিট করলে বিভিন্ন প্রগ্রাম, অভিবাসন ও আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!