কুরআন মাজিদ নাযির হয়েছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ আরবী ভাষায়। আরবী ভাষার বর্ণমালার উচ্চারণ অন্য ভাষায় প্রতিউচ্চারণ সম্ভব নয়। যেমন, আরবী ভাষার হা অক্ষরটি। একটির উচ্চারণ স্বাভাবিক হা’ এর মতো। আরেকটি হা’ এর উচ্চারণ স্বাভাবিক নয়। কণ্ঠনালীর ভিতর থেকে। আর এটি অনুশীলন ছাড়া সম্ভব নয়। এজন্য এর প্রতিবর্ণায়নও সম্ভব নয়। আরবি দ্বাদ-এর উচ্চারণ পৃথিবীর কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। আরবি ‘কাফ’ হরফের উচ্চারণ দুই জায়গা থেকে হয়।
এজন্য আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কোরআনের সঠিক উচ্চারণ অসম্ভব। তাই কোরআন শরিফকে অন্য ভাষায় লেখা বা পড়া সব যুগের ও সব দেশের উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে নাজায়েজ। এতে কোরআনের শব্দ ও অর্থ বিকৃত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কোনো আলেমের তত্ত্বাবধানে কোরআন শিখে নিতে হবে। (আল ইতক্বান : ৮৩০-৮৩১, ইমদাদুল আহকাম : ১/২৪০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১/৪৩)
এমনকি আরবি ভাষা ঠিক রেখেও কোরআন শরিফের বিশেষ রসমূল খত তথা লেখারীতির বিপরীত লেখাও ইমামদের ভাষ্য মতে নিষিদ্ধ। (ফাজায়েলুল কোরআন, ইবনে কাসির : ৫০, আল ইতক্বান : ৮৩০-৮৩১, আননুসুসুল জালিয়্যাহ : ২৫)
বাংলা বা যেকোনো অনারবি ভাষায় কোরআনের উচ্চারণ লেখার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো, এর দ্বারা মানুষ সঠিকভাবে কোরআন না শিখে শুধু উচ্চারণনির্ভর ভুল কোরআন পাঠে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। অথচ প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কোরআন এতটুকু সহিহ বা শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন, যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয় না। অর্থ পরিবর্তন হয়, এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
অতএব, কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যে সুরাগুলো প্রয়োজন, সেগুলো শুদ্ধভাবে শিখে নেওয়া আবশ্যক, অন্যথায় সে গুনাহগার হবে। আর পূর্ণ কোরআন শুদ্ধভাবে শেখা সবার ওপর সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ও ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ প্রত্যেক এলাকায় পূর্ণ কোরআন শুদ্ধভাবে পাঠকারী একটি দল থাকা আবশ্যক। (মুকাদ্দামায়ে জাযারিয়া : ১১, মা’আরেফুল কোরআন : ৪/৪৮৯)