class="post-template-default single single-post postid-18635 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ক্রিসতং-রুংরাং সামিট মেঘের দেশে

ক্রিসতং

আ. ন. ম. জাফর সাদেক

ক্রিসতং-রুংরাং সামিট মেঘের দেশে

চকোরিয়া থেকে বৃষ্টি মাথায় আলিকদম-পানবাজার হয়ে আমতলী ঘাটে পৌঁছলাম। মাঝি হামিদ ভাই ঘাটে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হাসনাত, খয়েরুল আর ইমরানসহ আমরা চারজন নৌকার ছৈয়ের ওপর উঠে বসলাম। খাড়া পাহাড়ের ফাঁকে বয়ে চলা টোয়াইন খালের দুই পাশের সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। ঘণ্টাখানেক পর কাকভেজা হয়ে পড়ন্ত বিকেলে দুসরি বাজারে আশ্রয় নিলাম।

দ্রুত রাতের আহার শেষ করে গাইডের খোঁজে নামলাম। এই আবহাওয়ায় কেউই যেতে রাজি না। অনেক বলে-কয়ে পরের দিনের গন্তব্যে নিয়ে যেতে উসেমন তঞ্চঙ্গাকে রাজি করালাম।

পরদিনও সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি। তার মধ্যেই কচ্ছপঝিরি ধরে মেনকিউ আর মেনিয়াঙ্কপাড়া হয়ে বিকেলের দিকে পৌঁছলাম রুংরাং। রুংরাং ধনেশ পাখি বা হর্নবিলের পাহাড় নামে খ্যাত। বড় বড় গাছের ডালে হোমসিক বা লাভ বার্ড নামে পরিচিত ধনেশ পাখির আবাস ছিল এই পাহাড়; কিন্তু নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে রুংরাং এখন উজার বনভূমি। একসময় রাজার হালে বিচরণ করা ধনেশ পাখিও এখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাহাড়ের পাদদেশে একটা পরিত্যক্ত জুম ঘর। সেটাকেই রাতের আশ্রয়স্থল করলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগের সময়টুকু কাটল চারপাশের ভ্যালি দেখে।

তৃতীয় দিন সকাল কখন হয়েছে কেউই টের পাইনি। জুমঘরের চালের ফাঁক গলে সূর্য উঁকি মারায় ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া ভেঙে আবার আমরা পথে নেমে এলাম। আজকের পুরো পথই উতরাই। কয়েক ঘণ্টা জোঁকের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে দুপুরের আগে খেমচংপাড়ায় পৌঁছলাম। আজকের গন্তব্য ক্রিসতং; কিন্তু জুমের কাজে ব্যস্ত থাকায় কোনো গাইড পাওয়া গেল না। অগত্যা ঘুমিয়ে আর পাড়ার আশপাশটা ঘুরে অলস সময় পার করলাম। গত দুই দিন মেঘ লুকোচুরি খেললেও আজকের আকাশ একেবারে পরিষ্কার। সুয্যিমামা ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে রাত নেমে এলো। অন্ধকার আকাশে তখন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করে আমরা নির্বাক। এই চাঁদের বাঁধভাঙা আলোয় স্নান করব বলেই তো ঘর ছেড়েছিলাম। বিধাতা সেই আশার ষোলোকলা পূর্ণ করে দিলেন।

ক্রিসতং চূড়ায় যাব বলে সকাল ৭টায় নাশতা করে তৈরি হলাম। একজন গাইড পাওয়া গেছে আজ। নাম ডন। রসিক লোক। পুরোটা পথ বিভিন্ন হাসি-তামাশায় মাতিয়ে রাখলেন। খেমচংপাড়া পেরোতেই বড় একটা চড়াই-উতরাই পথ। সেটা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে বিশাল বিশাল মাদারগাছ দেখে চক্ষু চড়কগাছ! মনে হয় যেন অন্য এক দুনিয়ায় এসে পড়েছি। বিশাল বিশাল উঁচু গাছের পাশাপাশি হাজার হাজার ছোট-বড় গাছ। এত ঘনজঙ্গল যে গাছের পাতা গলে সূর্যের আলো মাটিতে পড়ে না। নানা পোকামাকড়ের ডাক এবং পাখির কলকাকলি আর কিচিরমিচির। এসব নাম না-জানা পাখির কিচিরমিচির শুনতেই কিছু সময় নীরবে বসে রইলাম। কিন্তু জোঁকের কামড় আর মশার অত্যাচারে সেই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। প্রায় তিন ঘণ্টা গহিন জঙ্গলের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ক্রিসতং চূড়ায় পৌঁছলাম।

 

ক্রিসতং মারমা শব্দ। ক্রিস হলো এক ধরনের ছোট পাখি আর তং মানে পাহাড়। চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে পরিচিত এই পাহাড়টি একসময় শত শত মাদারগাছের সংরক্ষিত বন ছিল। ২৯৭৯ ফুট উচ্চতার এই সংরক্ষিত বন একসময় বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির আর কলকাকলিতে মুখরিত ছিল। আজও ক্লান্ত অভিযাত্রী দল এই পাখির কলকাকলির মোহে এখানে ছুটে আসে।

ক্রিসতং চূড়া থেকে বহুদূরের উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। সারি সারি পাহাড় আর সেই পাহাড়ের ফাঁকে বয়ে চলা টোয়াইন খাল কিংবা সাঙ্গু নদীর তীরে আদিবাসীদের গুচ্ছ গুচ্ছ নিবাস। যেখানে মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি খেলা চলে। দৃষ্টিসীমাজুড়ে সবুজ উপত্যকা। কখনো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়, পরক্ষণেই মেঘের বুক ছিঁড়ে জেগে ওঠে।

 

কিভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আলিকদম হয়ে পানবাজার। বর্ষাকালে পানবাজার থেকে আমতলী ঘাট হয়ে নৌকায় দুসরি বাজার। অথবা বাইকে আলিকদম-থানচি লিংক রোড ধরে ১৭ কিলোমিটার গিয়ে বাইক ছেড়ে নিচে নামতে হবে। কচ্ছপঝিরি ধরে মেনকিউপাড়ায় রাত যাপন করে পরদিন মেনিয়াঙ্কপাড়া হয়ে রুংরাং সামিট। এরপর খেমচংপাড়ায় দ্বিতীয় রাত যাপন। তৃতীয় দিন ভোরে ক্রিসতং সামিট শেষে একই পথে আলিকদম।

 

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR2bTOLN0GMcIgLeYIYsYbogNSFpG-OhdqSFiI_2q0ukbiLcgYw17anqXMc

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!