হঠাৎ করেই নীরবতা ভেঙে কিছুটা তৎপর হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারামুক্ত হওয়ার প্রায় দুই মাস পর খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে নিজ দল বিএনপির পাশাপাশি শরিক দলগুলোর মধ্যেও নানামুখী আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া ‘রাজনীতি’তে আপাতত তেমনটা সক্রিয় হতে না পারলেও দলীয় শীর্ষ পদ তাঁর হাতেই থাকছে।
শুধু তাই নয়, খালেদা যে রাজনীতি থেকে সহসা অবসর নিচ্ছেন না—এমন মনোভাবও সম্প্রতি তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় পরোক্ষাভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ফলে নেতারা মনে করছেন, সংগঠন হিসেবে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় চললেও দলটির অভিভাবক হিসেবে খালেদা জিয়াই থাকছেন। কারো কারো মতে, খালেদা জিয়ার ‘ছায়া’ নেতৃত্ব আমরণ থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে ব্রিটেনের ৯৪ বছর বয়সী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং ভারতীয় কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নাম টেনে আনছেন। তাঁরা বলছেন, জীবদ্দশায় খালেদা জিয়াই বিএনপির চেয়ারপারসন থাকছেন। তাঁকে বাদ দিয়ে এবং এক্ষুনি শুধু তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি চলবে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া আছেন এবং তিনি বিএনপির অভিভাবক। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁর সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমান দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ সব কিছু এখন সামাল দিচ্ছেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় সুন্দর ও সঠিক লক্ষ্যে বিএনপি এগিয়ে চলছে। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মনে হয়েছে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা নেতৃত্বে আছেন এবং এটা তিনি অনুভব করেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর আরো বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন আমাদের অভিভাবকসুলভ পরামর্শ বা উপদেশ দিচ্ছেন।’
খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের ডেকে সাক্ষাৎ দেন ঈদের দিন (২৫ মে)। ওই সময় যদিও তিনি করোনা পরিস্থিতি ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েই বেশি কথা বলেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টার পুরো সাক্ষাৎ পর্বে তিনি আগের মতোই ‘চেয়ারপারসনসুলভ’ ভঙ্গিতেই কথা বলেন এবং দলের ভেতর-বাইরের সব কিছু নেতাদের কাছ থেকে জানতে চান।
পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঘরে থাকার এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে কার্যকর দেখার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথাও জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা
শর্তাধীনে ছয় মাসের জন্য কারামুক্ত হয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের ‘ফিরোজা’য় থাকলেও প্রায় দুই মাস এক রকম নীরব ছিলেন খালেদা। ওই সময় দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর মধ্যে এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ে যে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি হয়তো আর সক্রিয় নাও হতে পারেন। কারণ সিনিয়র নেতাদের প্রত্যাশা ছিল যে কোয়ারেন্টিনের সময় (১৪ দিন) পার হওয়ার পর হয়তো চেয়ারপারসন তাঁদের ডেকে বৈঠক করবেন। কিন্তু একদিকে খালেদা জিয়া সে রকম কোনো আগ্রহ দেখাননি, অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমানও যথারীতি স্কাইপেতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে যাচ্ছিলেন।
তা ছাড়া ছয় মাসের সাজা স্থগিত করে কারামুক্ত হওয়ায় তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না—এমন ধারণাও ছড়িয়ে পড়ে বিএনপিতে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও সাক্ষাৎ দেওয়ার ঘটনায় দলে নতুন আলোচনা তৈরি হয় বলে জানা যায়।
খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মান্না গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান এটি হলো দলটির এখনকার বাস্তবতা। তা ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট হলো যে তাঁরা সবাই চেয়ারপারসনের ওপর যথেষ্ট আস্থাশীল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে রাজনীতির আলাপ তেমন না হলেও তাঁকে আমার বেশ কনফিডেন্ট মনে হয়েছে। ফলে রাজনীতিতে ভবিষ্যতে তিনি সক্রিয় হতে পারবেন না—এমনটি মনে করার কারণ নেই।’