class="post-template-default single single-post postid-14312 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

চীনে বিয়ের নামে বেচাকেনা

চীনের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ন্যারির। বিয়ে না বলে সেটাকে বেচাকেনা বলাই ভালো। বলা যেতে পারে ডলারের বিনিময়ে চীনা সেই পুরুষ কিনে নিয়েছিলেন ন্যারিকে। সবটাই জানতেন ন্যারি। তবু পরিবারের সবার কথা ভেবে হাসিমুখেই কনে সেজেছিলেন।

ন্যারি থাকতেন কম্বোডিয়ায়। সংসারে অভাব ছিল। পরিবারের সবার জন্য দুমুঠো খাবার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। ন্যারি জানতেন, তাঁর দাম উঠেছে সাত হাজার ডলার। ন্যারির স্বামী দালালের কাছে সেই টাকা দিয়েছিলেন।

চীনে এসে বসবাস শুরু করেন ন্যারি। দেশটির ভাষাও ভালো বুঝতেন না তিনি। বিয়ের আগে জানতেন, তাঁর স্বামী সম্পদশালী একজন চিকিৎসক। পরে জানতে পারেন, স্বামী আসলে সাধারণ ঠিকাদার। কিছুদিন পর আরও একটা সত্যি জানতে পারেন ন্যারি। বিয়েতে স্বামী যে অর্থ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে পালিয়ে গেছেন ন্যারির ভাই। ন্যারি জানলেন, তাঁর সব আত্মত্যাগই জলে গেল।

গল্পটা এক ন্যারির নয়। দুরবস্থা থেকে পরিবারকে বাঁচাতে অর্থের বিনিময়ে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও মিয়ানমারের নারীরা চীনের পুরুষদের বিয়ে করেন। ন্যারি এ রকম হাজার হাজার নারীর মধ্যে একজন। বাকিদের গল্পও হয়তো তাঁরই মতো।

প্রশ্ন হলো চীনের পুরুষেরা যৌতুকের বিনিময়ে এমন বিয়ে করেন কেন? উত্তরটা সহজ। চীনে কনের অভাব। দীর্ঘদিন ধরে চীনে চলেছে এক সন্তান নীতি। ফলে, নারী ও পুরুষের ভারসাম্য নেই। পুরুষের তুলনায় নারী কম।

মেকং নদীর সীমানা পার হয়ে হাজার হাজার নারী চীনে যান। অর্থের বিনিময়ে চীনের পুরুষেরা এই নারীদের বিয়ে করেন। ছবি: এএফপিমেকং নদীর সীমানা পার হয়ে হাজার হাজার নারী চীনে যান। অর্থের বিনিময়ে চীনের পুরুষেরা এই নারীদের বিয়ে করেন। ছবি: এএফপিমেকং নদীর সীমানা পার হয়ে অনেক নারীকেই নেওয়া হয় চীনে। অপহরণ ও পাচারের ঘটনাও একেবারে কম নয়। বেচাকেনার মাধ্যমে এই বিয়ের পরিণতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুখের হয় না। বিয়ের পর নির্যাতনের শিকার হন অনেক নারী। অনেকেই জীবনধারণের জন্য বেছে নেন পতিতাবৃত্তি।

চীনে বউ কিনতে একজন পুরুষকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে দালালকে দিতে হয় এক হাজার থেকে তিন হাজার ডলার।

কম্বোডিয়ার ন্যাশনাল কমিটি ফর কাউন্টার ট্রাফিকিংয়ের ভাইস চেয়ার চো বান ইং বলেন, চীনে বিয়ে বড় বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। গুয়ানডং, গিঝু ও ইউনান প্রদেশে কম্বোডীয় নারীদের নাম নিবন্ধন করা হয়। অর্থের বিনিময়ে দরিদ্র মেয়েদের নিয়ে বিয়ের নামে বেচাকেনা চলে।

বিয়ের আগে নারীদের নিয়ে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। উইচ্যাট ও অন্যান্য ডেটিং ওয়েবসাইটে হবু বরদের কাছে পাঠানো হয় মেয়েদের ছবি। কম বয়সী ও সুন্দরী নারীদের জন্য চড়া দাম হাঁকেন দালালেরা। এ ধরনের নারীদের সাধারণ ভিসা নিয়ে চীনে পাঠানো হয়। পুরো ব্যাপারটিই চলে গোপনে।

জাতিসংঘের দৃষ্টিতে এ ধরনের বিয়ে মানব পাচার। অর্থের বিনিময়ে সীমান্ত পার করে দরিদ্র নারীদের বিয়ে করাকে পাচার হিসেবেই দেখে জাতিসংঘ। এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে কম্বোডিয়ায় দালাদের ১৫ বছরের জেল হতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন শাস্তি দেওয়া হয়। বিষয়গুলো সমাধান করা হয় সমঝোতার ভিত্তিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাচারবিষয়ক এক কৌঁসুলি বলেন, ঘটনার শিকার নারীদেরও অর্থের প্রয়োজন থাকে। তাই সমঝোতায় গোপনে চলে বিয়ে–বাণিজ্য।

দারিদ্র্যের কারণে কম্বোডিয়ার অনেক নারীই অর্থের বিনিময়ে চীনের পুরুষদের বিয়ে করেন। ছবি: এএফপিদারিদ্র্যের কারণে কম্বোডিয়ার অনেক নারীই অর্থের বিনিময়ে চীনের পুরুষদের বিয়ে করেন। ছবি: এএফপিএ ধরনের বিয়ে চীনেও আইনসম্মত না। তবে সরকার পারিবারিক বিষয়গুলোও বিবেচনা করে। স্বচ্ছতার জন্য কম্বোডীয় সরকার স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আইন অনুসারে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে বলে। তবে দালালদের দৌরাত্ম্যে সেগুলো আর করা হয় না।

কম্বোডিয়ার ন্যাশনাল কমিটি ফর কাউন্টার ট্রাফিকিংয়ের ভাইস চেয়ার চো বান ইং বলেন, চীনে পুরুষদের বিয়ে করা খারাপ না। তবে দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বিয়ে হলে সেটি অবৈধ হয়ে যায়।

ফেরা যাক ন্যারির গল্পে। ছেলেসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর বিয়ে ভেঙে যায় ন্যারির। শাশুড়ির জন্য নবজাতককে বুকের দুধও পান করাতে পারেননি মা ন্যারি। ছেলেকে দেখতে পারেননি। কোলেও নিতে পারেননি। স্বামী ও শাশুড়ি ন্যারিকে বিচ্ছেদের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ন্যারি জানতে পারেন, তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ। এ অবস্থায় তাঁর চীনে থাকাও অবৈধ। ন্যারি বাড়ি ছেড়ে কাছের একটি কাচের কারখানায় চাকরি নেন। অভিবাসনবিষয়ক কর্মকর্তারা ন্যারিকে আটক করেন। তাঁকে আটক রাখা হয় এক বছর।

ন্যারি দেখেন, তিনি একা নন। তাঁর সঙ্গে থাকা ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার অনেক নারীর ভাগ্য একই। মুক্তির পর ন্যারি কম্বোডিয়ায় ফিরে যান। খুব কম বেতনে পোশাক কারখানায় কাজ করেন ন্যারি। পেছনে ফেলে আসা সবকিছুই ভুলে যেতে চান ন্যারি। ভুলতে পারেন না কেবল সন্তানকে। কে জানে কবে দেখা হবে। এএফপি অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!