বহুকাল থেকেই এদেশের মানুষ ডাক্তারকে দেবতুল্য ভাবেন। পরম আস্থায় চোখ বুজে মেনে নেন তার পরামর্শ। কিন্তু ইদানীং ডাক্তারদের বিরুদ্ধে উঠছে গুরুতর সব অভিযোগ। দানা বাঁধছে অনাস্থা, অবিশ্বাস ও ক্ষোভ।
২০১১ সালে ধানমণ্ডিতে সায়েন্স ল্যাবের নিকটস্থ একটি হাসপাতালে আমি চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। সেখানকার স্বনামধন্য নারী গাইনোকোলোজিস্ট যে টেস্টগুলো আমাকে দিয়েছিলেন তার মধ্যে আল্ট্রাসোনোগ্রামও ছিল।
প্রেসক্রিপশন দেয়ার সময় ডাক্তার একটি কাগজে আরেকজন নারী ডাক্তারের নাম লিখে আমাকে দিয়ে বললেন, শান্তিনগরের একটি হাসপাতালের (এখানে নাম গোপন রাখা হলো) এই ডাক্তার থেকে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করাতে হবে।
আপনাদের এখানে কি এটা হয় না? আমার এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, তার হাসপাতালে এটি ভালো হয় না। তখন আমি ধানমণ্ডির বা এই এলাকারই অন্য কোনো হাসপাতালে পরীক্ষাটি করাতে চাইলাম। কিন্তু উনি অটল। শান্তিনগরেই যেতে হবে।
শান্তিনগরের সেই ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করাতে গিয়ে সে কী বিড়ম্বনা! কী বিরাট লম্বা অপেক্ষমাণ রোগীর সারি! সেই বিভীষিকা-স্মৃতি আরেকদিন লেখা যাবে। এখন একটি প্রতিবেদনের কথা বলি।
২০১০ সালের ৫ই অগাস্ট ডেইলি স্টারে “কমিশন ট্রেড ট্র্যাপস্ পেশেন্টস” শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে অনেক ডাক্তারের লেন-দেন থাকে। ডাক্তাররা সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানোর বিনিময়ে ১০-৩০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন পান।
ডাক্তারদের এই কমিশন বাণিজ্যে রোগীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনটি।
আর সম্প্রতি প্রকাশিত দুর্নীতি দমন কমিশনের এক প্রতিবেদন বলেছে, ডাক্তাররা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নেন।
২০০৮ সালের ২৭শে জুলাই ডেইলি স্টারের “DMCH doctors refer most patients to pvt diagnostic centres” শিরোনামের আরেক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কমিশন বাণিজ্যের কারণেই ঢাকা মেডিকেলে আসা রোগীদের একটা বিরাট অংশকে ডাক্তাররা বেসরকারি রোগ-নির্ণয়-কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন।
সরকারী বা বেসরকারি ঢাকা বা ঢাকার বাইরে কমিশন বাণিজ্য যে মহামারী রূপে বিরাজমান সেটিরও ইঙ্গিত মিলেছে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের এক সম্মেলনে।
সম্মেলনের পরের দিন ২৫শে অগাস্ট ডেইল স্টারে এক খবরে বলা হয়, ডাক্তার নেতারাই অন্য ডাক্তারদেরকে কমিশন বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুধু কমিশন বাণিজ্যই নয়। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিবিসি বাংলায় সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রোগীদেরকে ডাক্তাররা সময় দেন এক মিনিটেরও কম।
সূত্র: বিবিসি বাংলা