তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাস : ধর্মের অপর নাম মনুষ্যত্ব হয়নি। ২৭ বছর আগে লজ্জা লিখেছিলাম। উৎসর্গ করেছিলাম ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে। লিখেছিলাম ‘ধর্মের অপর নাম আজ থেকে মনুষ্যত্ব হোক’। না, ২৭ বছরে ধর্মের অপর নাম মনুষ্যত্ব হয়নি। ধর্ম ধর্মই রয়ে গেছে, যে ধর্ম বিবর্তিত হয়ে এবং না- হয়ে আজ অনেকটাই মনুষ্যত্বহীন।
দিল্লিতে গত দুদিন যে দাঙ্গা হলো,মানুষ মরলো, তা শুধু পাথরের আঘাতে নয় কিন্তু; বন্দুকের গুলিতে, ছুরির কোপেও। মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষও আগুনে পুড়ে মরেছে। এরা গরিব। এদের একটিই পরিচয় , এরা গরিব। এদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। টুপি বা গেরুয়া পরা না থাকলে দাঙ্গাবাজদের দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই কে হিন্দু কে মুসলমান। ওসব যদি পরা না থাকে তাহলে নাম না শুনলে বা কাপড় খুলে যৌনাঙ্গ না দেখলে কে বুঝবে কে কী। কারণ, দেখতে তো তারা এক। ত্বকের রঙ ,নাক চোখ মুখের গড়ন, পরনের কাপড়, মুখের ভাষা, এক । হিন্দুরাই তো এককালে ধর্ম বদলে মুসলমান হয়েছিল। চেহারা ভিন্ন হবে কী করে!
তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাসে আরো লেখা- ৩৪ জন মারা গেছে দাঙ্গায়। হাসপাতালে আহত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক। এই দাঙ্গা শুরুতেই বন্ধ করার হয়তো উপায় ছিল। যে কোনও কারণেই হোক, বন্ধ করা হয়নি। আমরা জানি ধনী মুসলমানের গায়ে কোনও টোকা পর্যন্ত পড়বে না। ধনী হিন্দুর নাগাল কেউ পাবে না। কেবল গরিব হিন্দু মুসলমানে হিংসেহিংসি খুনোখুনি হবে। আমরা অবাক হয়ে খুনোখুনি দেখতে থাকবো। এক সময় আর অবাকও হবো না, শুধু দেখতে থাকবো।
বাংলাদেশে যখন হিন্দুর ওপর অত্যাচার হয়, সহৃদয় কিছু মুসলমান হিন্দুদের নিজের নিরাপদ ঘরে আশ্রয় দেয়। দিল্লিতেও তেমন, কিছু মুসলমান হিন্দু এবং শিখ পড়শির বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে। মানুষ তো সব নষ্ট হয়ে যায়নি, তাই আশা জাগে, হয়তো ঘৃণাকে সরিয়ে ভালোবাসাই একদিন বড় জায়গাটা নেবে।