পুরুষের মতো নারীরাও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্তন ক্যান্সার, জরায়ু বা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের মতো রোগগুলোনারীরাও নারীদের হয়। অথচ কোনো অসুখ না হলে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ নারীই রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা তেমন করান না। এতে তাঁরা কিছু রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। বরং রুটিন পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগে লুকিয়ে রাখা বা থাকা কিছু রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায়। নারীদের জন্য এমন কিছু রুটিন পরীক্ষা হলো—
সেলফ ব্রেস্ট টেস্ট
মাসে অন্তত একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নারীরা নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা বা সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন শিখে নিয়ে করতে পারেন। এটা শুরু করা উচিত ২০ বছর বয়স থেকেই। এই পরীক্ষায় স্তনে চাকা বা কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখলেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়ানো যায়।
ম্যামোগ্রাফি
ম্যামোগ্রাফির মাধ্যমে ব্রেস্টে চাকার অস্তিত্ব, ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্ণয় করা সম্ভব। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী সব নারীর বছরে অন্তত একবার স্তনের এই ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষাটি করা উচিত। পাশাপাশি যদি মা, বোন বা রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তবে আরো আগে এই পরীক্ষাটি করা উচিত।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার
জরায়ুমুখ ক্যান্সারমুক্ত রাখতে হলে ৩০ থেকে ৬০ বছরের নারীদের প্রতি তিন বছর পর পর VIA-এর সাহায্যে জরায়ুমুখ পরীক্ষা করা উচিত। ১৮ বছরের আগে যাদের বিয়ে হয়েছে, তাদের বয়স ২৫ বছর হলেই জরায়ুমুখ পরীক্ষা বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করানো দরকার। আবার বিয়ের বয়স ১০ বছরের অধিক হলে এবং নিজের বয়স ৩০ বছরের কম হলেও জরায়ুমুখ পরীক্ষা করানো উচিত। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্সে কোনো অস্বাভাবিক কোষকলার উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। ফলে জরায়ুমুখে ক্যান্সার রূপ নেওয়ার আগেই তা ফেলে দেওয়া সম্ভব।
এইচপিভি
সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)। এটি যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে মুখে, হাতে-পায়ে এমনকি মুখের ভেতরেও হতে পারে। তাই ৩০ থেকে ৬৫ পর্যন্ত নারীদের প্রতি পাঁচ বছর এইচপিভি পরীক্ষার সঙ্গে সার্ভিক্যাল স্ক্রিনিং করা ভালো।
হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয়
অস্টিওপোরোসিস হলে হাড়ের অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান ক্যালসিয়াম হাড় থেকে বের হয়ে হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেয়। ৮০ শতাংশ নারীই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং মেনোপোজ হওয়ার পরেই হাড়ের সমস্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। মেনোপজ বা রজঃনিবৃতির পর, ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবেও অধিক হারে হাড় ক্ষয়ে ভুগতে থাকেন নারীরা। ফলে সামান্য আঘাত বা ধাক্কা বা হঠাৎ মচকানোতেই তীব্র ব্যথার সঙ্গে হাড় ভেঙেও যেতে পারে। বিশেষ ধরনের এক্স-রের বোন মিনারেল ডেনসিটির (বিএমডি) সাহায্যে হাড়ের ঘনত্ব মেপে হাড় ভাঙার আগেই অস্টিওপোরোসিস নির্ণয় করা যায়। মেনোপোজ-পরবর্তী নারীর, যাদের কখনো ফ্র্যাকচার হয়েছে বা পঞ্চাশের বেশি বয়সের নারীদের বছরে একবার এবং ৩৫ বছর বয়সী নারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই টেস্ট করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
উপরোক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও আরো কিছু বিষয়ে নারীরাও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। যেমন—
♦ পূর্ণবয়স্ক নারীদের বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপা উচিত।
♦ ৫০ বছরের পর কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করতে কলনোসকপি পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া উচিত। তবে চিকিৎসকের সন্দেহ হলে এর আগেও করা যায়।
♦ এ ছাড়া নারীরাও বছরে অন্তত একবার দাঁত ও চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।