১. মোট কত মানুষ রাস্তাগুলো ব্যবহার করছেন, তার পরিসংখ্যান হাজির করুন। তাদের মাঝে কতভাগ রিকশা ব্যবহার করছে, তা জানান। এদের জন্য বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা করে তারপর রিকশা বিষয়ে আলাপ শুরু হোক। বিকশা উচ্ছেদ সোজা, কিন্তু যে মা তার সন্তানকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে রিকশার ওপর ভরসা করেন, যে চাকরিজীবীরা রিকশার ওপর নির্ভরশীল, তাদের কি বিকল্প বন্দোবস্ত করলেন, সেটা কে ভাববে? শুধু বলেন দিলেন, ভবিষ্যতে দেখবো?
২. রিকশা অনিরাপদ। সত্যি। কিন্তু এর কারণ হলো রিকশা বিষয়ে আমাদের প্রকৌশলবিদ্যা কোন ভূমিকা রাখেনি কোন দিন। ধীর গতির। সত্যি। কিন্তু মিথ্যাও। রিকশার গতি স্থানীয় কারিগররাই বৃদ্ধি করেছেন সহজ কিছু প্রযুক্তি দিয়ে। এখন আপনি যদি রিকশা কতখানি জায়গা নেয়, এবং তার গতি কত, তা দিয়ে একটা হিসাব কষেন, তাহলে অধিকাশ বাহনের তুলনায় রিকশাকে বেশি গতিশীল করা সম্ভব। সম্ভব রিকশার আধুনিকায়ন, চাকার আকৃতি ছোট করে যেন উলটে না যায়, যেন পা ছড়িয়ে বসা যায়, তেমন প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে রিকশার নবায়ন। সবচেয়ে কম জ্বালানি খরচে বিদ্যুৎচালিত রিকশা, যার গতি সীমিত, যার চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অনুমোদিত, যারা অবশ্যই নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে একটার পেছনে আরেকটা যাবে– ঢাকার মত নগরে রিকশাই সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন হতে পারে।
৩. নিউমার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রিকশার রাস্তাটার কথা ভাবুন, কতটা কার্যকর ভাবে একটার পেছনে আরেকটা রিকশা ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, ঝিগাতলার বিপুল এলাকার মানুষকে সেবা দিচ্ছে। ঝটপট রিকশা উচ্ছেদ এর কথা না ভেবে এমন বিকল্পের কথা ভাবাটা জরুরি। রিকশা নাই, এমন বহু রাস্তাতেও ভয়াবহ যানজট, এর কারণ তো রিকশা না, ব্যক্তিগত গাড়ির অধিক্য।
৪. ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর বিপুল কর বসিয়ে তাকে নিরুৎসাহিত করা এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া কোন উচ্ছেদ, কোন মেট্রোরেল বা অন্য কোন কিছুই ঢাকার পরিবহন সংকট সমাধান করবে না। স্মরণ রাখা উচিত যে, ভয়াবহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ঢাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ আসলে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাতেই নামেন না। কাজ থেকে ফিরে বাড়িতে আটকা থাকেন। আত্ময়ীতা, সামাজিকতা, বিনোদন, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদি নাই হয়ে যাচ্ছে যানজটর কারণে, এমন যে আক্ষেপ দেখি, তাও মিথ্যা না, তার অর্থনৈতিক মূল্যও বিশাল। সাধারণ মানুষ একটা আধুনিক শহরে যত কিলোমিটার প্রতিদিন ভ্রমন করে, সেই তুলনায় ঢাকার চাহিদা মেটাতে বহু, বহুগুন বেশি গণপরিবহন প্রয়োজন।
৫. নগরের একটা মর্মান্তিক দিক হলো শুধু নিজেদের প্রয়োজন নিয়েই ভাবে সে। যুক্তি হলো, যাকে উচ্ছেদ করা হবে, তার জীবিকা ঠিক রাখার দায়িত্ব নগরের না। এটা রাষ্ট্রের দায়। বাংলাদেশে প্রতিদিন কর্মসংস্থান কমছে। গত ৬ বছরে দেশে কারখানার সংখ্যা কমেছে। ফলে এই বিষয়ে সরকারের ভাবনা কী, সেটা নগরকর্তৃপক্ষ না জানাক, সরকারকে তো জানাতে হবে।