Monday, December 23
Shadow

কিডনি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা ডা. হারুন আর রশিদ বললেন, জটিলতা বাড়ে ভিটামিন ‘ডি’ র অভাবে

ভিটামিন ‘ডি’

জটিলতা বাড়ে ভিটামিন ‘ডি’ র অভাবে

 সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে কি না, এটা জানা যায় ‘২৫ হাইড্রোক্সি ভিটামিন ডি লেভেল’ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে

শরীরের অতি প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর একটি হলো ভিটামিন ‘ডি’। এর মাত্রা সঠিক না থাকলে জটিল রোগ বাসা বাঁধে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি।  লিখেছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ

 

বেশ কিছু খাদ্যপ্রাণের মধ্যে শরীরের দ্রবণীয় চর্বিজাতীয় (ফ্যাট সলিউবল) গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপ্রাণ হলো ভিটামিন ‘ডি’। অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করা, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম দ্রবীভূত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে এই গ্রুপের ভিটামিন। বিশেষ করে ইমুইন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে বলে ক্ষতিকর ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও রুখতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

কিন্তু অনেক সময় অজ্ঞাতেই শরীরে অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি বা ডিফিসিয়েন্সি ঘটে। তখন দেখা দেয় নানা বিপত্তি, শরীরে বাসা বাঁধে জটিল কিছু রোগ।

সারা বিশ্বে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ এই ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতিজনিত সমস্যায় রয়েছে। আমেরিকায় ২০১১ সালের গবেষণা থেকে জানা যায়, ৪২ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে ভুগছে, যার মধ্যে হিসপানিক ৭০ শতাংশ এবং আফ্রিকান-আমেরিকান ৮২ শতাংশ। এক বছর আগে বাংলাদেশে কিডনি ফাউন্ডেশনে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর ওপর পরিচালিত জরিপে আমরা পেয়েছি ৮০ শতাংশের রক্তের মধ্যে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব রয়েছে।

 

ঝুঁকি বেশি যাদের

বয়স, অবস্থাভেদে এবং নানা কারণে দেহে ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি হতে পারে। এই ঘাটতিজনিত ঝুঁকিতে যারা থাকে তাদের মধ্যে—

♦ কালো চামড়াসম্পন্ন লোক।

♦ বৃদ্ধ লোক, অধিক স্থূল বা বেশি ওজনসম্পন্ন ব্যক্তি।

♦ বেশি মাত্রায় ঘরে বসে কাজ করা বা অবস্থান করা ব্যক্তি।

♦ সব সময় এসিতে বসবাসকারী।

♦ শরীরে রোদ লাগায় না, বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহারকারী বা সূর্যের আলো কম পায় এমন দেশের মানুষ।

♦ অপর্যাপ্ত মাছ, দুধ বা ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণকারী।

♦ পরিপাকতন্ত্রের অসুখে ভোগা রোগী।

♦ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী।

 

অভাবজনিত সমস্যা

আগে মনে করা হতো ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে শুধুই হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। তবে দেখা গেছে, শুধু হাড় নয়, আরো অনেক রোগের সঙ্গেই ভিটামিন ‘ডি’র সম্পর্ক রয়েছে; যেমন—

♦ ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়। ফলে পেশি দুর্বল, হাড় ভঙ্গুর বা ক্ষয় হয়।

♦ ইনফেকশন বেড়ে যায়, কাটা বা ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হয়।

♦ সর্দি-কাশি, টনসিলের প্রদাহ, শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।

♦ বিষণ্নতা, ক্লান্তি ও অবসাদে ভোগে, কাজে অনীহা আসে।

♦ বাত ব্যথা, বিশেষ করে ব্যাক পেইন বা পেছনের দিকে ব্যথা হয়।

♦ কিডনি রোগীদের জটিলতা বাড়ে।

♦ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ইত্যাদির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

♦ শিশুদের শরীরের হাড়গুলো ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না। তাদের হাড় নরম বা ভঙ্গুর অথবা বেঁকে যায় (রিকেটস), বড়দের হাড়ের গঠনে বিকৃতি (অস্টিওম্যালেশিয়া) দেখা দেয়।

♦ তীব্র হাঁপানি (অ্যাজমা), দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সংক্রমণ হয়।

♦ গর্ভধারণে জটিলতা বাড়ে।

♦ ত্বকের রোগ সোরিয়াসিস বা ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে।

♦ কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চুল পড়ে।

♦ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

♦ মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বা কগনেটিভ ফাংশন অব মেমোরি কমে যায়। স্মৃতিভ্রংশ (আলঝেইমার) হয় বা স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।

♦ যারা পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করে না তাদের মৃত্যুর হার বেশি।

 

আদর্শ মাত্রা

কারো রক্তে ভিটামিন ‘ডি’ সঠিক পরিমাণে রয়েছে কি না, এটা জানা যায় ‘২৫ হাইড্রোক্সি ভিটামিন ডি লেভেল’ রক্ত পরীক্ষাটির মাধ্যমে। এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিটামিন ‘ডি’ স্ক্রিনিং করা যায়। এই পরীক্ষায় সাধারণত ২০ ন্যানোগ্রাম পার এমএল থেকে ৫০ ন্যানোগ্রাম পার এমএল স্বাভাবিক ধরা হয়। এর আদর্শ পরিমাপ হলো ৩০ থেকে ৫০ ন্যানোগ্রাম পার এমএল। কিডনি রোগীদের জন্য ২০ থেকে ৩০ ন্যানোগ্রাম থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে কারো লেভেল ২০ ন্যানোগ্রামের নিচে পাওয়া গেলে ওই ব্যক্তির ভিটামিন ‘ডি’ ডিফিসিয়েন্সি বা ঘাটতিজনিত সমস্যা রয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়। তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।

 

দৈনিক প্রয়োজনীয়তা

বয়সভেদে প্রত্যেক মানুষের দেহে ভিটামিন ‘ডি’র প্রয়োজনীয়তারও তারতম্য রয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৬০০ আইইউ (একটি আন্তর্জাতিক ইউনিট, যা চর্বি দ্রবণীয় ভিটামিন পরিমাপে ব্যবহৃত হয়) ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা দরকার। আর যদি সূর্যের সংস্পর্শে কম থাকা হয়, তবে ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণের পরিমাণ হবে ১০০০ আইইউ।

 

যেভাবে পাওয়া যাবে

ভিটামিন ‘ডি’র অভাব হলে তা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত সূর্যের আলো, প্রয়োজনীয় খাবারদাবার ও সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করলে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব পূরণ হয়।

সূর্যরশ্মি : ভিটামিন ‘ডি’র প্রধান (৮০ শতাংশ) উৎস হলো সূর্যের আলো, যা আমরা প্রাকৃতিকভাবেই পেয়ে থাকি। সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি যখন ত্বকের নিচে পড়ে তখন প্রকৃতির নিয়মেই শরীরে ভিটামিন ‘ডি থ্রি’ উৎপন্ন হয়। তাই কোনো ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার ছাড়াই শরীরে, বিশেষ করে হাত, বাহু, মুখের ওপর যথাসম্ভব রোদ লাগানো উচিত। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বা সম্ভব হলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট এবং সকালে হালকা রোদ খালি গায়ে লাগানো ভালো।

খাবারদাবার : প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকেও ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়। এ জন্য ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল, সয়া দুধ, মাশরুম, গরুর কলিজা, দই, বাদাম, কমলার শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

সাপ্লিমেন্টস : প্রতিদিন ৬০০ আইইউ সাপ্লিমেন্ট তিন থেকে ছয় মাস খেলে ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতিজনিত সমস্যায় যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে ৮০০ থেকে ১০০০ আইইউ বা খুব বেশি ঘাটতি থাকলে ১০০০ থেকে ৪০০০ আইইউ প্রতিদিন দেওয়া যেতে পারে তিন মাস পর্যন্ত। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী, তাদের জন্য ১২৫ ভিটামিন ‘ডি থ্রি’ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হয়।

লক্ষ রাখতে হবে, বেশি মাত্রায় ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ যেন বেড়ে না যায়। এতে কিডনিতে পাথর হতে পারে, রক্তনালি বা শিরায় ক্যালসিয়াম জমা হয়ে হৃদরোগের প্রবণতা বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে এবং পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক মাত্রা পরিমাপ করা উচিত।

https://www.youtube.com/watch?v=AoO_iZhlnGs&fbclid=IwAR3YHQ3alDWe7F8HJuHn_RQG0g5HYZ6qBWBydooV2_lgdFpB8WJ1sAFD14s

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!