Sunday, April 28
Shadow

স্বাস্থ্য টিপস : রোজকার ভুল

আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, মেডিক্যাল সায়েন্সে যার কোনো ভিত্তি নেই। এমন কিছু ভুল ধারণা ও বাস্তবতা সম্পর্কে স্বাস্থ্য টিপস লিখেছেন ডায়েট প্লানেট বাংলাদেশের পুষ্টিবিদ মাহবুবা চৌধুরী

স্বাস্থ্য টিপস

ভুল : ১. বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়।

বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়—এ ধারণাটি মোটামুটি অনেকের মধ্যেই আছে। প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য মিষ্টি কিন্তু দায়ী নয়। বরং ডায়াবেটিস হওয়ার পর মিষ্টি খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু কারো ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যতই মিষ্টি খাওয়া হোক, সুগারের পরিমাণ কিন্তু ঠিকই থাকবে। যদি প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে ঠিকমতো ইনসুলিন তৈরি এবং নিঃসরণ হয়, তাহলে মিষ্টি খেলে কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য দায়ী হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, পারিবারিক ইতিহাস এবং আরো অনেক কারণ।

 

ভুল : ২. দুশ্চিন্তা করলে চুল পেকে যায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মানুষের ভেতরের আর বাইরের বয়স দুটিই বাড়িয়ে দেয়। তবে এর কারণে যে চুল পেকে যায়—এই ধারণাকে সমর্থন করে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বরং জিনগত কারণে মানুষের চুল পাকে। তাই চিন্তা করুন আর নাই করুন, এর সঙ্গে চুল পাকার কোনো সম্পর্ক নেই।

 

ভুল : ৩. বেশি খেলে গর্ভের বাচ্চা বড় হয় না।

বয়স্ক নারীদের মধ্যে এ ধারণাটি ব্যাপক। গ্রামে-গঞ্জে প্রায় সবার মধ্যেই এ ধারণাটি আছে। তাদের যুক্তি, গর্ভকালীন বেশি খেলে পেটের জায়গা দখল হয়ে যায় খাবার দিয়ে। ফলে গর্ভের বাচ্চাটি বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পায় না। কিন্তু এটি খুবই ভুল একটি ধারণা।

গর্ভকালীন মায়ের জন্য বরং আরো অতিরিক্ত খাবার প্রয়োজন গর্ভস্থ বাচ্চা সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য। গর্ভের সময় মা কম খেলে বাচ্চা বরং ওজনে কম হতে পারে।

 

ভুল : ৪. ভিটামিন খেলে শক্তি বাড়ে।

ভিটামিন হলো খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় জৈব রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের ভেতরে তৈরি হয় না এবং অবশ্যই খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। আমাদের অনেকেরই ধারণা, ভিটামিন শরীরে শক্তি জোগায়, ভিটামিন খেলে দুর্বলতা কমবে বা খারাপ স্বাস্থ্য ভালো হবে।

আসলে এমন ধারণা সঠিক নয়। ভিটামিন থেকে শরীরে সরাসরি কোনো শক্তি উৎপন্ন হয় না। তবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, যেমন—শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাবারের বিপাকপ্রক্রিয়ায় ভিটামিন অংশ নেয়। ফলে দেহে কোনো একটি ভিটামিনের অভাব হলে সেই নির্দিষ্ট উপাদানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।

 

ভুল : ৫. ক্রিম রং ফরসা করতে পারে।

বিজ্ঞাপনের শক্তিশালী ভাষার কাছে বিজ্ঞান নিতান্তই অসহায়। ত্বকের মেলানিন নিয়ন্ত্রণ করে বা কমিয়ে ক্রিম নারীকে করছে অপরূপ। ইদানীং পুরুষদের রং ফরসা করারও ক্রিম এসেছে। প্রকৃতপক্ষে ত্বকের কেরাটিনযুক্ত স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম ভেদ করে ক্রিমের কোনো উপাদানই ভেতরে যেতে পারে না এবং এগুলো ত্বকে অ্যাবজর্ব বা শোষিতও হয় না। বরং খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করুন, তাতে ফ্রেশ ও সুন্দর থাকতে পারবেন। তবে শীতকালে ক্রিমের ব্যবহার উপকারী। এ সময় ক্রিমের ব্যবহারে ত্বকের পানি বা ময়েশ্চার বের হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়।

 

ভুল : ৬. চুল লম্বা করে, মাথা ঠাণ্ডা রাখে তেল।

অনেকে ভাবেন, তেল হয়তো মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং চুল শক্ত, ঘন ও লম্বা করে। কেউ কেউ আবার চুলে লাগায় ভিটামিন। এতে নাকি চুল পড়াও বন্ধ হয়। অথচ এর সবই ভুল।

তেল মাথার মোটা চামড়া ও খুলি ভেদ করে ব্রেন পর্যন্ত যাওয়ার কোনো সুযোগই পায় না, ঠাণ্ডা করা তো দূরের কথা। তবে অনেক তেলে মেন্থল মেশানো থাকে বলে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতি তৈরি করতে পারে শুধু মাথার চামড়ায়। চুল শরীরের অংশ; কিন্তু এটা নির্জীব বা মৃতকোষ। এদের সারা দিন ভিটামিনে ডুবিয়ে রাখলেও কোনো লাভ নেই। ঘন, লম্বা ও শক্ত করার তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং মাথার চুল পরিষ্কার রাখলে চুল সুস্থ থাকবে। এতেই চুল পড়া কমবে। তবে তেল চুলে ময়েশ্চার বজায় রাখে এবং জটা বাঁধা রোধ করে বলে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার সমস্যা কমিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!