শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সরদার নাসির উদ্দিনের (কালু) মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টেলিফোন বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে গত রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এ সময়কালে নাসির উদ্দিনের কাছে ৩ হাজার ৮১৫ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে।
সরদার নাসির উদ্দিন অভিযোগ করেন, মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পরিকল্পিতভাবে ভুতুড়ে টেলিফোন বিলের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাছাইয়ের সময় বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ ৩০ বছর আগের বিল বকেয়া রয়েছে বলে আপত্তি তোলে। তাৎক্ষণিক আমরা তাদের ফরিদপুর রাজস্ব কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। আমার কাছে কোনো বিল বকেয়া নেই এমন প্রত্যয়নপত্র দেয়। সেই কপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তারা ফ্যাক্সযোগে পৌঁছে দেয়। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তা আমলে না নিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।’
সাবেক এই সাংসদ আরও বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ওই টেলিফোন ব্যবহার করতাম। ১৯৯৩ সালের ১৯ মে ফোনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ওই বছরের মে পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা রয়েছে। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তখন তো এ বিলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করব। আশা করছি আমার প্রার্থিতা ফিরে পাব।’
এদিকে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। রোববার বিকেলে এ খবর জানার পর দলটির সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেন। অনেকে ফেসবুকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী বিলখেলাপি হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীর বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার। বিষয়টি নিয়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা খুশি।’
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেন (অপু) বলেন, ‘এ আসনটিতে বরাবর আওয়ামী লীগ জয় পায়। বিএনপি এখান থেকে একটি ইস্যু তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা সে সুযোগ দেব না। নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমি আশা করছি, তিনি আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান এবং ভোটের মাঠে সক্রিয় হন।’
এদিকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আবদুস সালাম বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। হামলা-হামলার ভয় উপেক্ষা করে নির্বাচনী মাঠে সংগঠিত হচ্ছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে একটি ভুতুড়ে টেলিফোন বিল সামনে এনে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলো।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা ৩ ডিসেম্বর থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। শরীয়তপুর-১ আসনের প্রার্থী বকেয়া বিল পরিশোধের কোনো নথি দেখাতে পারেননি। মনোনয়ন বাছাইকালে তিনি বিল পরিশোধের জন্য নগদ টাকা বিটিসিএলের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আইনের মধ্যে না থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র-প্রথম আলো