পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ভিনগ্রহীদের পাঠানো কোনও মহাকাশযান? তা আদতে কোনও ধূমকেতু নয়? নয় কোনও গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড?
এ বার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল জানাল, না, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ওই মহাজাগতিক বস্তু ‘আউমুয়ামুয়া’ আদতে কোনও ধূমকেতু নয়। খুব সম্ভবত ওটা ভিনগ্রহীদের পাঠানো কোনও মহাকাশযান। আর সেটাকে চালাচ্ছে আলো। আমাদের সূর্য বা তার মতো কোনও নক্ষত্র (দের) আলোই তাকে ঠেলেঠুলে ব্রহ্মাণ্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে নিয়ে চলেছে। অন্য কোনও নক্ষত্রমণ্ডল থেকে তাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলে। আবার হয়তো কোনও কালে তাকে ঠেলেঠুলে আমাদের সৌরমণ্ডল থেকে ‘আউমুয়ামুয়া’কে টেনে বের করে নিয়ে যাবে সেই আলোই।
গত বছরের অক্টোবরে হাওয়াই দ্বীপের হালিকালা অবজারভেটরির টেলিস্কোপে জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট ভারিকের চোখে তা প্রথম ধরা পড়ার পর থেকেই এই মহাজাগতিক বস্তুটিকে নিয়ে তোলপাড় বিজ্ঞানী মহল। তখনই প্র্শ্ন ওঠে, ব্রহ্মাণ্ডের আলো-আঁধার ফুঁড়ে কি কখনও কোনও কালে আমাদের সৌরমণ্ডলে ঢুকে পড়েছিল অন্য কোনও নক্ষত্র (ইন্টারস্টেলার) বা গ্যালাক্সি (ইন্টার-গ্যালাক্টিক) থেকে আসা এক অচেনা আগন্তুক? সেই আগন্তুক আদতে কি ধূমকেতুর মতো কোনও মহাজাগতিক বস্তু? বা, কোনও গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড? নাকি, ভিনগ্রহীদের ব্রহ্মাণ্ড ঢুঁড়ে বেড়ানো কোনও মহাকাশযান?
এই মহাজাগতিক বস্তুটির আবিষ্কারের পরেই তার নাম রাখা হয় ‘আউমুয়ামুয়া’। হাওয়াই দ্বীপের ভাষায় যার অর্থ, বহু দূর অতীত থেকে আসা কোনও বার্তাবাহক। ২৩০ মিটার লম্বা, ৪০ মিটার চওড়া কালচে-লাল রংয়ের ‘সিগার’-এর মতো দেখতে ‘আউমুয়ামুয়া’র বয়স, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমানে, প্রায় কয়েকশো কোটি বছর। এটা পুরু বড়জোর এক মিলিমিটার। এর শরীর পুরোপুরি মোড়া কার্বনের কোনও যৌগে। এর গতিবিধি এখনও সঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। গত বছরের অক্টোবরে সূর্যের অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে ‘আউমুয়ামুয়া’ আমাদের নক্ষত্রের কাছে আসার সময়েই তা প্রথম চোখে পড়েছিল বিজ্ঞানীদের। তার তিন মাস পর থেকেই আবার তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না পৃথিবীর কোনও প্রান্তের কোনও অবজারভেটরির কোনও শক্তিশালী টেলিস্কোপ থেকেই। সূর্যের কাছে আসার পরপরই অসম্ভব দ্রুত গতিতে ‘আউমুয়ামুয়া’ আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে আমাদেরই ছায়াপথ ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’র কোথাও না কোথাও ‘মুখ লুকিয়েছে’। বা, ‘আত্মগোপন’ করেছে আমাদের সৌরমণ্ডলেরই কোনও অচেনা, অজানা প্রান্তে।
একটি বিবৃতিতে অধ্যাপক লোয়েব বলেছেন, ‘‘আউমুয়ামুয়া ভিনগ্রহীদের ব্যবহার করা কোনও যন্ত্রাংশের ভেঙে পড়া, অচল হয়ে যাওয়া অংশ নাকি তা এখনও সক্রিয়, সচল, তা স্পষ্ট নয়। হতে পারে কোনও নক্ষত্রের তীব্র বিকিরণের চাপ বা দৈত্যাকার কোনও লেসার রশ্মির ঠেলাই ‘আউমুয়ামুয়া’কে আমাদের সৌরমণ্ডলে ঢুকিয়ে দিয়েচিল কোনও কালে। আলোর ‘ঠেলা’ দিয়ে যে কোনও মহাকাশযান চালানো সম্ভব, তা আর কল্পবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নয়। আজ থেকে আট বছর আগেই জাপানের ‘আইকারস’ মহাকাশযানকে আলোর ঠেলা দেওয়া হয়েছিল, তার গতি হঠাৎ করে অনেকটা বাড়িয়ে তুলতে।
গত বছর একদল বিজ্ঞানী বলেছিলেন, ‘আউমুয়ামুয়া’ আদতে একটি ধূমকেতু, যার কোনও বরফের লেজ নেই। আবার ধূমকেতুর মাথায় যেমন গ্যাস আর ধুলোকণার জমাট বাঁধা একটি অংশ থাকে, তেমন কিছুও নেই ‘আউমুয়ামুয়া’-র মাথায় বা তার শরীরের কোনও অংশেই। তবে এর আগেও হদিশ মিলেছে লেজকাটা ধূমকেতুর।
এ বছরের জুনে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানী মার্কো মিশেলি অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন, শুধুই সূর্য বা কোনও নক্ষত্রের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে এই ব্রহ্মাণ্ডে ছুটে বেড়াচ্ছে না ‘আউমুয়ামুয়া’। তাই এটা কোনও গ্রহ বা গ্রহাণু নয়। বরং এটা যেন চলছে বাইরে থেকে আসা কোনও গ্যাসের ঠেলায়। তাই তাঁরা এটাকে ধূমকেতু বলেই মনে করেছিলেন। কিন্তু এই অক্টোবরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রোমান রাফিকভ জানান, এটা এমনই ‘উড়নচণ্ডী, পাগলাটে’ যে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ নেই। সেই কক্ষপথে সূর্য বা কোনও নক্ষত্রের কাছে এলে যেমন তার জোরালো টানে ধূমকেতুর বরফ বা গ্যাসের অংশগুলি ছিটকে বেরিয়ে আসে, ‘আউমুয়ামুয়া’-র ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই এটা কোনও ধূমকেতু নয়। নয় কোনও গ্রহাণুও।