আপনি কি জানেন মাইগ্রেন কেন হয়?
আমাদের একটু আকটু মাথা ব্যথা হলেই আমরা চিন্তায় পরে যাই। মনের ভিতর প্রশ্নের উদয় হয় আমার মাইগ্রেন হয় নি তো? মাথা ব্যথা হওয়া মানেই কি মাইগ্রেন? আসলে বিষয় এমন নয়। মাথা ব্যথা হতে পারে নানাবিধ কারণে। মাইগ্রেনের কারণে মাথা ব্যথা একটু ভিন্ন রকমের।
আসুন আমরা জেনে নেই মাইগ্রেন আসলে কি?
মাইগ্রেন হলে মাথার যেকোন একপাশে ব্যথা করে অথবা যেকোন একপাশ থেকে ব্যথা শুরু হয়ে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সমস্যার কারণে মাথায় স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে শব্দ, আলো ও গন্ধ অসহনীয় মনে হয়। বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয় মাথা ব্যথার কারণে।
আপনি কি জানেন মাইগ্রেন কেন হয়?
এখন পর্যন্ত মাইগ্রেনের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় নি। তবে বিশেষ কিছু কারণে দেখা দেয় এই সমস্যাটি।
বিশেষ কিছু খাবারঃ চকলেট, পনির, কফি, চিজ, বেশি লবনযুক্ত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদি অতিমাত্রায় খাওয়ার কারণে দেখা দিতে পারে মাইগ্রেন।
জন্মবিরতিকরণ পিলঃ জন্মবিরতিকরণ পিল খেলে বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিলে অনেকের হতে পারে এই সমস্যাটি।
মানসিক চাপঃ দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ কারণে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ।
অতিরিক্ত ব্যায়ামঃ আমরা অনেক সময় না বুঝেই ব্যায়াম করি। ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। অতিরিক্ত ব্যয়াম মাইগ্রেনের জন্য দায়ী।
অনিদ্রাঃ ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু অনিয়মিত ঘুম শরীরের জন্য ডেকে আনে নানা ধরনের সমস্যা। এর মধ্যে মাইগ্রেন অন্যতম।
কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহারকারীঃ কম্পিউটারের সামনে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এটি মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ।
অতিরিক্ত মোবাইলে কথা বললে চাপ পড়তে পারে আপনার মস্তিষ্কের উপর।
টিভি দেখাঃ অনেক সময় ধরে টিভি দেখা অনেকেরই একটি বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গৃহিনীদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ বেশি দেখা যায়। এর ফলে বেড়ে যায় মাইগ্রেনে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা।
মাইগ্রেন কাদের বেশি হয়?
এই সমস্যা দেখা দেয় ১০ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। মাইগ্রেন ছেলেদের চেয়ে বেশি হয় মেয়েদের। বংশে কারো মাইগ্রেন থাকলে আপনারও দেখা দিতে পারে এই সমস্যাটি।
মাইগ্রেনের লক্ষণ সমূহ জানেন কি?
- মাইগ্রেনের ব্যথা কয়েক ঘন্টা এমনকি দুই/ তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
- এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি দূর্বলতা অনুভব করে।
- চোখের সামনে তীব্র আলো অনুভূত হয়।
- হাত- পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি হয়।
- মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচুর ঘাম হয়।
মাইগ্রেন হলে কি করবেন?
মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে বিট লবনের জুরি নেই। অর্ধেক লেবুর রসের সাথে সামান্য পরিমাণে বিট লবন মিশিয়ে খেলে বেশ স্বস্তি পাওয়া যায়।
ব্যথা হলে দারুন কাজে দেয় আঙ্গুরের রস। কোন প্যাকেটজাত জুস নয় বাড়িতে ব্লেন্ড করে নিন তাজা আঙ্গুর।
মাইগ্রেনের ব্যথা হলে চা- কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনি জানেন কি মাইগ্রেন প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি?
- প্রতিদিন পরিমিত ও নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে।
- অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
- উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
- দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ও টিভি না দেখা।
আসুন মাইগ্রেন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এড়িয়ে চলি।
মাইগ্রেন মানেই কি শুধু মাথা ব্যথা?
মাইগ্রেন মানেই শুধু মাথা কথাটা ঠিক নয়। মাথা ব্যথা ছাড়াও দেখা দিতে পারে মাইগ্রেন।
মাইগ্রেন কি শুধুমাত্র মহিলাদের হয়?
অনেকে মনে করেন মাইগ্রেন শুধু মেয়েদের হয়। আসলে নারী- পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন এই সমস্যায়।
মাইগ্রেন হলে রক্ষা নাই!
ধারণাটি একেবারেই ঠিক নয়। লক্ষণ সমূহের ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
মানসিক চাপই কি মাইগ্রেনের একমাত্র কারণ?
মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ মানসিক চাপ। তবে অন্যান্য কারণেও আপনার হতে পারে সমস্যাটি।
অল্প সময় স্থায়ী ব্যথাঃ
অনেকে মনে করেন মাইগ্রেনের ব্যথা বেশি সময় থাকে না। আসলে এমন ধরণা ঠিক নয়। মাইগ্রেনের ব্যথা কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সব মাথা ব্যথা মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টি সল্পতা, ব্রেইন টিউমার, স্ট্রোক ইত্যাদি কারণে হতে পারে এই সমস্যাটি। তাই আসুন নিজে মাইগ্রেন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানি এবং অন্যকেও জানতে অনুপ্রাণিত করি।