বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়—যে ব্যক্তি গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তিনি বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী নন অথবা মূল চালক না হয়ে চালকের সহকারী হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। রাজধানীর আদাবরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ১৫ নভেম্বর ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক একটি ঘটনা সেই চিত্রকেই আবার স্পষ্ট করে তুলেছে।

ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৫ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে আদাবরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর রোডের ভেতরে রাস্তার পাশে জেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কোম্পানির একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-৭৪৮৫) দাঁড়ানো ছিল। ওই সময় গাড়িটির মূল চালক মো. অলিউল ইসলাম (২৭) পাশে বসে থাকলেও, গাড়িটির চালকের আসনে ছিলেন তার সহকারী এলিট ফোর্স সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. রাইয়ান জামান দিগন্ত (২১)।
গাড়িটি দাঁড়ানো অবস্থায় রাইয়ান ব্যাক গিয়ারে গাড়ি চালাতে শুরু করেন। এতে রাস্তার পাশে নিজেদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিশু, তার মা ও দাদী গাড়ির পেছনের অংশের নিচে চাপা পড়েন।
দুর্ঘটনায় শিশুটি অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও তার কলার বোন ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শিশুটির মা ও দাদীও এই ঘটনায় আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় আহত তিনজনকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, গাড়ি চালানো ব্যক্তি ছিলেন অনভিজ্ঞ এবং তিনি মূল চালক নন। ঘটনার পর তারা গাড়িতে থাকা অলিউল ও চালক রাইয়ানকে আটক করে। পরে আদাবর থানা পুলিশ এসে দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে এবং চালকের সহকারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে—রাজধানীতে কীভাবে লাইসেন্সহীন ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা গাড়ি চালাচ্ছেন।
মামলার বাদি ও আহত শিশুটির মামা জাফর মোহাম্মদ জানান, ‘অভিযুক্ত রাইয়ান ও অলিউল যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাদের লোকজন ব্যাপারটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া ও সবার সচেতন হওয়া জরুরি বলে আমরা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আদাবর থানা পুলিশ এ ব্যাপারে দ্রুত সাড়া দিয়ে অভিযুক্তদের আটক করেছেন এবং মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়াও চলমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। আরেকটু হলে এ পরিবারের ওপর অনেক বড় ট্রাজেডি নেমে আসতো। এ ঘটনার সঠিক বিচার হলে ভবিষ্যতে কেউ লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তির হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার সাহস পাবে না। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমরা।’
ঘটনায় আটক মো. রাইয়ান জামানের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার মুন্সিপাড়া এলাকার শহীদ মিনার রোডে এবং মো. অলিউল ইসলামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার চিংড়াখালী গ্রামে।


















