Monday, December 23
Shadow

স্বামীকে বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ নারীর, তবুও শেষ রক্ষা হলো না

রিফাতসর্বোচ্চ চেষ্টা করেও দুর্বৃত্তের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না সদ্য বিবাহিত এক তরুণী। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে তার স্বামী রিফাত শরীফকে (২৫) গুরুতর আহত করে। এরপর বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে তারা। বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে দশটার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের ঠিক সামনে এ ঘটনা ঘটে। আশপাশের অনেক লোক সন্ত্রাসীদের এ তাণ্ডব দেখলেও একজন ছাড়া তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করেনি কেউ। ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত রিফাতের বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আয়শা আক্তার মিন্নি নামের ওই তরুণীর দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই নয়ন নামে এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। ওই যুবক নিজেকে তরুণীর সাবেক স্বামী এবং প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে। এ ঘটনায় রিফাতের সঙ্গে নয়নের বচসা হয়। এর জের ধরে বুধবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ দলবলে ওঁৎ পেতে থাকে নয়ন। রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি সকালে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা রামদা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। এ সময় মিন্নি তাদের বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু, তার বাধা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা রিফাতের সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে কোনও রকমে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান রিফাত। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। সন্ত্রাসীরা তার বুক, পিঠ, পাসহ সারা শরীর কুপিয়ে রক্তাক্ত করতে থাকে। মিন্নি এ সময় একবার সন্ত্রাসী নয়নকে, আরেকবার নয়নের সহযোগী দুর্বৃত্ত রিফাত ফরাজীকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’, ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু, ততক্ষণে রামদার কোপে মারাত্মক আহত হন রিফাত।

এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পরপরই রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৪টার দিকে রিফাতের মৃত্যু হয়। রিফাত তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।

নিহত রিফাত বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের মাইঠা-লবণগোলা এলাকার দুলাল শরীফের ছেলে।

নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে রিফাত বরগুনার পুলিশ লাইন এলাকার কিশোরের মেয়ে আয়শা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামের এক যুবক মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধ সৃষ্টি হয়।

তার দাবি, এর জের ধরে সকালে নয়ন, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও রাব্বি আকন রিফাতকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!