রোগীর সেবা-যত্নে ইসলাম
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম; কিন্তু তুমি আমার সেবা করনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তো গোটা বিশ্বের প্রতিপালক। আমি কী করে আপনার সেবা-শুশ্রুষা করতে পারি! তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি কি জানোনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। যদি তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করতে, তাহলে তুমি সেখানে আমি আল্লাহকে পেতে। (মুসলিম শরিফ)
যারা রোগীকে অবহেলা করে, তারা আল্লাহর প্রতি অবহেলা করে। সে জন্য শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এটা চরম সত্য যে, রোগীর সঙ্গে দেখা করলে নিজে রোগী হলে অন্য মানুষ দেখা কিংবা সেবা করতে আসবে। তাই সেবা যে একটা শ্রেষ্ঠ ইবাদত, সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের আলোকে দেখা যায়, এক মুসলিমের অপর মুসলিমের কাছে ছয়টি হক রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হক হলো কারো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি শরিফ)
রোগীকে দেখতে গেলে প্রথমেই তার কপালে হাত রেখে তার অবস্থা জিজ্ঞেস করতে হবে। রোগী অথবা রোগীর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এমন কথাবার্তা বলা উচিত নয় যাতে তারা রোগীর হায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যেতে পারে। সবাইকে সান্ত¡নার কথা বলতে হবে, কোনোভাবেই মনভাঙা কথা বলা উচিত নয়। (আদাবুল মু’আশারাত) রোগীকে দেখতে যাওয়ার পর তার সঙ্গে নম্র-ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে। আপনি ধৈর্য্য ধারণ করুন, আমি আপনার জন্য দোয়া করি, খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। এসব মঙ্গলজনক কথা বলে তাকে সাহস দিতে হবে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলবে। কেননা তুমি যা বলো, ফেরেশতাগণ তার ওপর আমিন আমিন বলেন।’ (মুসলিম ও মিশকাত শরিফ)
আল্লাহর দরবারে রোগীর দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো কবুল হয়। হজরত উমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেন, তুমি কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তোমার জন্য দোয়া করতে বলো। কেননা রোগীর দোয়া ফেরেশতাগণের দোয়ার মতো কবুল করা হয়। [উসওয়াতে রসুলে আকরাম (সা.)]