Saturday, April 27
Shadow

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ও সচেতনতা

স্তন ক্যানসারেরপৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্তন ক্যানসার বাংলাদেশে নারীদের এক নম্বর ক্যানসার সমস্যা। ক্যানসারে আক্রান্ত প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। পুরুষেরাও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। প্রতি ১০০ জন নারী আক্রান্ত হলে ১ জন পুরুষকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসারের সংখ্যা ২০০৮ সালের জরিপের তুলনায় বর্তমানে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার আরও বেশি।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন ৪০-৪৯ বছর বয়সী নারীরা। গড় বয়স ৪৬.৮৬ বছর। পশ্চিমা নারীদের তুলনায় কম বয়সে স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হন বাংলাদেশের নারীরা।

বাংলাদেশের প্রায় সব রোগীই (১০০ শতাংশ) স্তনে চাকা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত হন। আক্রান্ত হওয়ার আগে ৮০ শতাংশ রোগী এ রোগের নামই শোনেননি। ৯৫ শতাংশ রোগী জীবনে কোনো দিন নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করে দেখেননি। তবে স্তনে চাকা অনুভব হলেও রোগ নির্ণয় করতে বিলম্ব হয় ৩ মাস থেকে ৫ বছর; গড়ে ১৮ মাস। [জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৫৫৪ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর ওপর পরিচালিত গবেষণা (অক্টোবর ২০১২–এপ্রিল ২০১৩)।

ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হয় মাত্র ২ শতাংশ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ১৬ শতাংশ। উন্নত দেশের নারীরা স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে নিয়মিত অংশ নেন। এতে ৬২ শতাংশ রোগ নির্ণয় হয় প্রাথমিক পর্যায়ে। শুরুতেই রোগ ধরা পড়লে তা নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় শতভাগ (৯৯ শতাংশ)।
সচেতনতা ও আতঙ্ক
স্তনে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন স্তনে ব্যথা, চাকা বা পিণ্ড বোধ হওয়া, স্তন ফুলে ওঠা, ভারী ভারী বোধ হওয়া, স্তনবৃন্ত থেকে তরল ঝরা, বৃন্ত দেবে যাওয়া, বৃন্তর ত্বক শুষ্ক হওয়া, ক্ষত হওয়া ইত্যাদি। এসব উপসর্গ সব সময় যে রোগের কারণে হয়ে থাকে তা নয়। এর বেশির ভাগই স্তনের স্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে।

জন্ম থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে স্তনে যে পরিবর্তন হয়, দেহের আর কোনো অঙ্গে এ রকম পরিবর্তন হয় না। স্তনের এ স্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণ বিভিন্ন ধরনের হরমোন ও গ্রোথ ফ্যাক্টরের প্রভাব। স্তনের গ্রন্থি (গ্ল্যান্ড) এবং গ্রন্থিকে ঘিরে থাকা অন্যান্য টিস্যু প্রভাবিত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য অনেক কারণে স্তনে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দেয়।

স্তনে ব্যথা ও স্তন ক্যানসার
স্তনে ব্যথা নিয়েই বেশির ভাগ নারী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যান। এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। পুরুষেরও কদাচিৎ স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে। ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ নারীর জীবনে কোনো না কোনো সময় স্তনে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। স্তনে ব্যথা, অপর কথায় বলা হয় মাস্টালজিয়া। এটি একটি উপসর্গ, রোগ নয়। স্তনের এ রকম ব্যথা এক বা দুই স্তনেই হতে পারে, আবার বগলের নিচেও হতে পারে। ব্যথার মাত্রা ও ধরন সবার বেলায় এক রকম নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্তনের এ ব্যথার কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। ১৫ শতাংশের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

স্তনে ব্যথা কি স্তন ক্যানসারের লক্ষণ?
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সাধারণত স্তনে ব্যথার উপসর্গ থাকে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর রোগ শনাক্তকরণের সময় মাত্র ১.২ থেকে ৬.৭ শতাংশের ব্যথার উপসর্গ থাকে। শারীরিক পরীক্ষায় যদি স্তনে কোনো অস্বাভাবিকতা না থাকে এবং বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা যেমন ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টও যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে শুধু স্তনে ব্যথা নিয়ে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল।

স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণ (স্ক্রিনিং) পদ্ধতির বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, উপসর্গসহ যেসব নারীর স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই উপসর্গ হলো স্তনে চাকা বা পিণ্ড। শুধু স্তনে ব্যথা রয়েছে এমন প্রায় এক হাজার এবং স্তনে ব্যথা নেই এমন এক হাজার নারীকে নিয়ে করা একটি পর্যবেক্ষণ গবেষণা করা হয়। তাঁদের ওপর দুই বছর ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ফলোআপ করার পর দেখা গেছে, ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার হার দুই দলেরই সমান।
শুধু স্তনে ব্যথা স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা যায় না। তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং ব্যথার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্তনে চাকা এবং স্তন ক্যানসার
স্তনে চাকা নিয়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় সব রোগীর রোগ শনাক্ত হয়। চাকা অনুভূত হলে ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক।

আবার ৮০ শতাংশ চাকাই ক্যানসার নয়। স্তনে বিভিন্ন কারণে চাকা হয়। যেমন ফাইব্রোএডনোমা, ফাইব্রোসিস্টিক চাকা, ইন্ট্রাডাক্টাল পেপিলোমা, চর্বি জমে যাওয়া, ফোঁড়া এবং ক্যানসার। স্তন ক্যানসারের চাকা হঠাৎ করে বেড়ে ওঠে না। খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।

স্তন ক্যানসারের চাকা সাধারণত শক্ত, অসমান ও অমসৃণ। স্তনের যেকোনো স্থানে হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্তনের ওপরের দিকে বেশি হয়। এ ধরনের চাকা রাতারাতি সৃষ্টি হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় কোনো ব্যথা থাকে না। তবে স্তনের চাকা বড় হয়ে উঠলে ব্যথা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!