হাত ধোয়ার নিয়ম আছে
ডা. রাজিবুল ইসলাম
কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে
বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষের মধ্যে প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য। কেননা শুধু খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর হাত না ধোয়ার কারণে আমাদের নানা রকম রোগ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মল হচ্ছে ডায়রিয়া জীবাণুর প্রধান উৎস। তা ছাড়া এটি সিজেলোসিস, টাইফয়েড, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য ইনফেকশন সৃষ্টিকারী জীবাণুর অন্যতম উৎস।
নানা কারণে হাত নোংরা হয়ে প্রতিদিন হাজারো জীবাণু দেহে সংক্রমিত হয়। তাই নিয়মিত দিনে অন্তত পাঁচবার সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া দরকার। কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস ডায়রিয়া এবং নানা রকম শ্বাসতন্ত্রের রোগের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া।
কখন ধোবেন হাত?
♦ ঠাণ্ডা লাগলে বা ফ্লুর সিজনে হাত বারবার ধুতে হয়। এতে ফ্লু বা সর্দি-জ্বর লাগা অথবা ছড়ানো দুটিই ঠেকানো যায়।
♦ প্রতিবার খাওয়ার আগে ও পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা উচিত।
♦ খাদ্য প্রস্তুত করা বা পরিবেশনের আগে ও পরে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে ফুড পয়জনিং অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
♦ মুরগি বা গৃহপালিত পাখির মাংস, কাঁচা ডিম বা সি ফুড ধরা, খাবার তৈরি করার আগে ও পরে অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত।
♦ প্রতিবার বাথরুমে যাওয়ার পর ও ডায়াপার ব্যবহারের পর হাত না ধুলে সালমোনেলা বা হেপাটাইটিসের মতো সংক্রামক রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে।
সঠিক নিয়ম
হাত ধোয়ার কিছু নিয়ম আছে। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হয় সত্যি; কিন্তু জীবাণুমুক্ত হয় না। জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছে সাবান, লিকুইড সোপ ও হ্যান্ড রাব। হাসপাতাল ছাড়া সাধারণ গৃহস্থালি, অফিস-আদালতে হাত জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুলেই চলে। লিকুইড সোপ নিলে প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় অন্তত তিন মিলিলিটার নেওয়া উচিত।
দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন হাত ধোয়ার জন্য কিছু নিয়ম নির্দেশ করেছে; যেমন—
♦ উষ্ণ ধারাপানি ও সাবান দিয়ে হাত কচলে ধোবেন। শিশুরা নাতিউষ্ণ পানির ধারায় হাত ধোবে।
♦ দুটি হাত কচলাতে ও ঘষতে হবে একনাগাড়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড।
♦ হাতের কবজি, হাতের পেছন দিক, আঙুলের ফাঁক ও নখের নিচে ভালো করে ধুতে হবে। এরপর কাগজের টাওয়েল দিয়ে হাত শোকাতে হবে।
♦ পানির কল বন্ধ করার সময় কাগজের টাওয়েল দিয়ে ধরে বন্ধ করা ভালো। সাবান ও পানি না পাওয়া গেলে সংগ্রহ করা যায় জেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অ্যালকোহল হ্যান্ড ওয়াইপস।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg