class="post-template-default single single-post postid-21020 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ফেসবুক থেকে : মারাত্মক হুমকি আকাশমণি চারা

আকাশমণী চারা
আকাশমণী চারা

কী দেখছেন? সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ক্যান্টিনের পাশে এতগুলো গাছ এর চারা! খুশি লাগছে না? খুব বৃক্ষরোপণ হচ্ছে! খুব বনায়ন হচ্ছে! খুব উপকার হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে পরিবেশের! আনন্দে বিমোহিত চিত্তে একটু বাগড়া দিই।আজকে দুপুর ১২ টা নাগাদ এসে পৌঁছানো এ বিপুলসংখ্যক চারাগুলো হচ্ছে একাশিয়া গাছের চারা।#একাশিয়া#আকাশমণি,#Acacia_Mangium অথবা #Black_Wattle। বাড়ি তার অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলে।এই ব্ল্যাক ওয়াটেলেরই আরেক প্রজাতি একাশিয়া মরিনসি পৃথিবীর ভয়ানক আগ্রাসী ১০০ প্রজাতির তালিকাভুক্ত যা আঞ্চলিক জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচ্য।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পাহাড়ে,জমিতে খুব জাঁকিয়ে বেড়ে ওঠা এই আকাশমণির দাপট দেখে আপনাদের অন্ধ চিত্ত যতই আনন্দিত হোক পরিবেশ, পাখি,পোকামাকড় এমনকি আমাদের মাটি কিন্তু তাতে মোটেও উপকৃত হয় না। উপকার করা, বিশেষত যে প্রকৃতি আপনাকে আলো,বাতাস,মাটি,পানি,খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,চিকিৎসা সমস্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে তার উপকার করা এত হুজুগে কাজ না। সে কাজ করতে গেলে তাকে বুঝতে হয়,বোঝার মতো যথেষ্ট ইচ্ছা থাকতে হয়।

এই যে আকাশমণির চারা দেখে সবুজায়নের খুশিতে গদোগদো হচ্ছেন, তাদের রোপণের জন্য জায়গা করতে কিন্তু কোনো একটা পাহাড় অথবা বন উজাড় হয়ে গেছে। সেখানে অনেক পাখির সংসার ছিলো,অনেক পোকামাকড় শতসহস্র বছর ধরে টিকে ছিলো সেখানে।তারা কখনোই এই আকাশমণিকে আপন করে নেবে না। কারণ আকাশমণি গাছ এই অঞ্চলের না। উদ্ভিদ প্রতিকূল আবহাওয়াতে এরা বেশ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে।খুব বেশি বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। সেখানে বাতাসকে বেশ উষ্ণ রাখে এরা। কিন্তু এই বইঙ্গাকে যখন এদেশে আনা হয় ব্যবসাপণ্য হিসেবে, তখন এই নাতিশীতোষ্ণ উদ্ভিদ অনুকূল আবহাওয়ার উর্বর মাটিতে তারা কেবল বাড়তেই থাকে না,বাড়াবাড়ি শুরু করে দেয়।
হ্যাঁ, ব্যাবসার জন্য অবশ্য বেশ ভালো জিনিস আকাশমণি। জ্বালানী কাঠ যোগায়।ভাল জ্বলে বলে দাবানলও যোগায় বৈকি! আবার মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে নাইট্রোজেন শোষণ করে আশেপাশের দেশি ফলদ বৃক্ষের বংশ নাশ করে।এর পাতা জলাশয়ে পড়লে ধ্বংস হয় জলজ প্রাণ এবং মাছ, মাটিতে পচলে নষ্ট হয় মাটির মাতৃগুণ। তাই ফলে, ফসলে ভরে থাকা দেশে আমদানি করতে হয় খাদ্যশস্য, ফলমূল। সুতরাং, ব্যবসার প্রসার ঘটাতে এ গাছের জুড়ি নাই, প্রকৃতি চুলায় যাক!

অথচ এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মতো জীববৈচিত্র্য ভরপুর একটা বিশাল জায়গায় বছরের পর বছর ধরে আকাশমণির বিস্তার ঘটানো হয়েছে।দেশি গাছের বন,ঝোপ,পাহাড় উজাড় করে আকাশমণিতে ভরে ফেলা হয়েছে পাহাড়ি ক্যাম্পাস।এত শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থীদের কেউ কখনও জিজ্ঞেস করে নি “কেনো”? এই ” কেনো” জিজ্ঞেস করার লোকের বড় অভাব এ তল্লাটে! শুধু পাখিগুলো বাসা বাঁধতে না পেরে দুর্বোধ্য ভাষায় অভিযোগ করে করে ক্লান্ত হয়ে চলে যায়।

আচ্ছা পাখি, পোকার কথা বাদ দিই। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। কিন্তু অনার্স মাস্টার্সের সার্টিফিকেট এর সাথে এই ক্যাম্পাস যে আকাশমণির ফুলের রেণু থেকে উৎপন্ন এ্যাজমা, নিউমোনিয়া সহ বিবিধ এলার্জি রোগের বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করে রেখেছে তার কী হবে?

এই চারাগুলো দেখে তাই বৃক্ষায়ন, সবুজায়ন বা বনায়ন কোনো খুশিতেই খুশি হতে পারলাম না। কিন্তু তবুও কি আমরা জিজ্ঞেস করবো, এত আকাশমণি নামক অভিশাপ ক্যাম্পাসে থাকা সত্ত্বেও আবার কোন বন উজাড় হলো এদের জায়গা করতে? কারা এনেছে এতগুলো চারা? শুধু সহজে পাওয়া যায় বলে অশিক্ষিত, বোধবুদ্ধিহীন জনগোষ্ঠীর মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ও এ ধরণের আগ্রাসী, বিদেশি, ক্ষতিকর প্রজাতির বিস্তার ঘটাবে বা তার অনুমতি দেবে সেটা কী মেনে নিতে হবে? নাকি সহজলভ্যতা ছাড়াও আরও অন্য প্রভাবক কাজ করে এখানে?
কারা করেছে এই আকাশমণি রোপণের অর্থায়ন? কোন অনুষদের কতৃপক্ষের আওতায় এতগুলো আকাশমণি আবার লাগানো হবে এই ক্যাম্পাসে? কারা অনুমতি দিয়েছে এসব আকাশমণি রোপণের? কারা এ আকাশমণির বাণিজ্যে লাভবান হচ্ছে আমাদের সুস্থতা ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!