Friday, April 26
Shadow

ফুল ব্যবসা , কাজ করছে ২৫ লাখ মানুষ

গরমে ফূলচাষে রজনী গন্ধা ফুলের চাষ লাভ জনকনিকট অতীতে এতো ব্যাপক আকারে বানিজ্যিকভাবে ফুল ব্যবসা হতো না। চাহিদা মিটতো আমদানী করা ফুলে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ফুল ব্যবসা বিরাট সফলতার সঙ্গে দেখা দিয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সৃষ্টি হয়েছে সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল উৎপাদনের রঙীন ইতিহাস।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, যশোর, ঝিনাইদহ, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ব্যাপক আকারে ফুল ব্যবসা শুরু হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের ফুলের ব্যাপক চাহিদার কারণে আগের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হচ্ছে। তাছাড়া ফুল ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা গাবতলী ভেড়িবাঁধের পাশে স্থায়ীভাবে ফুলের একটি পাইকারি মার্কেট স্থাপন হচ্ছে। বিদেশে রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা সেন্ট্রাল মার্কেটের লিংকে যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সাভারে আরো ৪টি ফুল মার্কেট হবে। ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালিতে কেন্দ্রীয় ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। গদখালির পানিসারায় ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও আধুনিক ফুল বাজার তৈরির ক্ষেত্রে ইউএসএইড সাপোর্ট দিচ্ছে। তিনি জানালেন, ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন হলে পিকসিজনে ফুল নষ্ট হবে না।

ফুল ব্যবসা কীভাবে করবেন?

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, দেশে প্রতিবছর গড়ে ১৪ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ফুল রফতানি হচ্ছে। এ অংক অনায়াসেই হাজার কিংবা দেড় হাজার কোটিতে উন্নীত করা সম্ভব। যার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। জাপান ও হল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে যেভাবে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয় ফুল উৎপাদনে, বাংলাদেশে সেটি অনায়াসেই করা যায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার মাটি রকমারি ফুল উৎপাদনে খুবই উপযোগী।

সূত্র জানায়, যশোর, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ ২৫ জেলায় ১০ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে বানিজ্যিকভাবে ফুল ব্যবসা হচ্ছে। যার প্রায় ৭০ ভাগ উৎপাদন হয় ফুলরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত যশোরের গদখালি এলাকায়। উৎকর্ষতার প্রতীক ফুল সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গুনীজন বলেছেন, যে ফুল ভালোবাসে না, সে মানুষ খুন করতে পারে। শুধু সৌন্দর্য কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, এখন ফুল থেকে আসছে কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রা। যা কিছুদিন আগে কল্পনাও করা যায়নি। যশোর-বেনাপোল সড়কের গা ঘেঁষা ঝিকরগাছার গদখালী ফুলের রাজ্য ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে নানা জাতের ফুল আর ফুল। সবুজের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা আর লাল, হলুদ. কমলা, খয়েরী ও মেজেন্ডা রঙের জারবেরা, ঝাউ কলম ফুল, গ্লাডিওলাস, লিলিয়াম, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কালো গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা ও জুঁইসহ বিভিন্ন ফুলের চাদর বিছানো মনমাতানো এক অভুতপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য।  নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। তাছাড়া বছরের বারো মাসই দেশে ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। এবারের পিকসিজনে হল্যান্ড থেকে আমদানি চারায় কার্ণিশন ফুল ব্যবসা এর কাজ চলছে। যা দেখতে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের মতো। তবে পাপড়িগুলো খাঁড়া লাল সাদা মেজেন্ডাসহ বিভিন্ন রঙের হয়। জানালেন গদখালির পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি রফিকুল ইসলাম।

ফুল ব্যবসা

যশোর মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতির প্রফেসর সেলিম রেজা জানালেন, ফুল ব্যবসা এখন বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। এর রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। আমাদের দেশের ফুল বিদেশে চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো দিক। রঙীন ইতিহাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগ ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট জানায়, বিপ্লব ঘটেছে ফুল ব্যবসা ও উৎপাদনে। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্নস্থানে ফুল ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, সারাদেশে ফুল ঘিরে চলছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বিশাল এক কর্মপরিধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!