class="post-template-default single single-post postid-17823 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

পিজি হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বললেন, শ্বাসতন্ত্রের জটিল অসুখ আইএলডি

শ্বাসতন্ত্রের

পিজি হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বললেন, শ্বাসতন্ত্রের জটিল অসুখ আইএলডি

ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ বা আইএলডি হলো ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী প্রায় ২০০ রোগের সমাহার। এর ফলে রোগীরা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে। ক্রমান্বয়ে জটিলতার দিকে যেতে থাকে। তবে শুরুতে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি  মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন

শ্বাসতন্ত্রের জটিল অসুখ আইএলডি

ফুসফুসের বায়ুথলির চারদিকের শূন্যস্থান ও টিস্যুর (যেমন—এথভিউলার এপিথেলিয়াম, ক্যাপিলারি এনডোথেলিয়াম, বেসমেন্ট মেমব্রেন ইত্যাদি) সমন্বয়ে অসংখ্য জালের মতো নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাকে বলে ইনটেস্টিটিয়াম। এই ইনটেস্টিটিয়াম অতি সূক্ষ্ম বায়ুকণা ধারণ করতে পারে। ভেতরে থাকা রক্তপরিবাহী নালির মাধ্যমে বাতাস থেকে রক্তে অক্সিজেন স্থানান্তর হয়। এসব স্থানে যেসব রোগ হয়, তাদের একত্রে বলা হয় ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ। দুই শতাধিক রোগ এই আইএলডি গ্রুপে রয়েছে। কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তার ইনটেস্টিটিয়ামের মেমব্রেন বা দেয়ালগুলো বেশ মোটা হয়ে যায়। তখন দেহে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা পেয়ে ফুসফুস অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে যেতে থাকে।

বাংলাদেশে ৫০ বছরের ঊর্ধ্ববয়সীদের এ রোগ বেশি দেখা যায়। রোগটি নারীদের চেয়ে পুরুষের বেশি হয়। ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের কারণেই রোগী মারা যায়। অনেক সময় এ রোগের সঙ্গে ফুসফুসের ক্যান্সারও দেখা যায়। রোগীরা সাধারণত শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বা হাঁপানি মনে করে একে গুরুত্ব দেন না, যে কারণে প্রচুর রোগীর মৃত্যু হয়।

 

কারণ

বিভিন্ন কারণে আইএলডি হতে পারে। এর মধ্যে আবার অজানা কারণও রয়েছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক উদ্দীপকের মাধ্যমেই সব সময় ফুসফুসের ক্ষতি হয়। এই উত্তেজক দেহের ভেতরের বা পরিবেশের—দুই ধরনেরই হতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া, ধূলিকণা, ওষুধ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অটোইমিউন ডিজিজ যেমন—এসএলই ইত্যাদি এই উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

এলভিউলার এপিথেলিয়াল কোষ আহত হলে সেখান থেকে গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসৃত হয়। এই উপাদান ফাইব্রোব্লাস্ট বিভাজন, মাইয়োফাইব্রোব্লাস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এই মাইয়োফাইব্রোব্লাস্ট থেকে কোলাজেন নিঃসৃত হয়। এভাবেই ফুসফুসের ক্ষতের মেরামতপ্রক্রিয়া চলতে থাকে। সাধারণত এই মেরামতপ্রক্রিয়া ফুসফুসের ক্ষত নিরাময় করে ফুসফুসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। তবে জেনেটিক প্রবণতা, অটোইমিউন ডিজিজ নানা কারণে ফুসফুসের ক্ষত মেরামতে বিচ্যুতি ঘটে। এতে ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়ে থাকে।

 

শ্রেণিবিভাগ

এই রোগগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—

 

নিঃশ্বাসবাহিত জৈব পদার্থ

ফুসফুসে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন এন্টিজেন প্রবেশ করে হাইপারসেনসিটিভিটি নিউমোনাইটিস করে থাকে। এন্টিজেনের ওপর ভিত্তি করে এই রোগ কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

বার্ড ফ্যানসিয়ার লাং : পাখির পালক ও বিষ্ঠায় যে এভিয়াম প্রোটিন থাকে, তা পাখিপ্রেমীদের ফুসফুসে বার্ড ফ্যানসিয়ার লাং রোগ সৃষ্টি করে এই রোগ ধরায়।

ব্যাগাসোসিস : আখের ছোবড়ার ফাংগাস ব্যাগাসোসিস রোগ সৃষ্টি করে।

কৃষকের সমস্যা : ঘাসের কণা, ছত্রাকের স্পোর ও অন্যান্য কৃষিকাজে ব্যবহৃত কেমিক্যাল থেকে এই রোগ হয়।

এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার  : এখানে ছত্রাক সৃষ্টি হয়, যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে এই রোগের সৃষ্টি করে।

 

নিঃশ্বাসবাহিত অজৈব পদার্থ

সিলিকসিস : ভূত্বকের ৭৫ শতাংশ উপাদান তৈরি করে সিলিকা বা বালু। সিলিকা ধূলিকণার মতো নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে ফুসফুসের সিলিকসিস রোগ তৈরি করে।

এসবেসটোসিস : বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর, বিল্ডিংয়ের অগ্নি প্রতিরোধক ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মৌল এসবেসটোসের আঁশ ফুসফুসে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করে এই রোগের সৃষ্টি করে।

বেরিলিয়সিস : ফ্লোরেসেন্ট বাল্ব, মহাকাশ বা এরোস্পেস যন্ত্রাদি উৎপাদনে বেরিলিয়সিস ব্যবহৃত হয়। বেরিলয়াম নামক অজৈব পদার্থ ফুসফুসে ঢুকে রোগের সৃষ্টি করে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : বিভিন্ন ড্রাগ বা ওষুধের কারণে আইএলডি হতে পারে। বিশেষ করে সাইটোটক্সিক—ব্লিওমাইসিন, সাইক্লোফসফ্যামাইড, বিউসালফ্যান, হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত এমিড্যারন, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, স্টেরয়েড ইত্যাদি ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে আইএলডি হতে পারে।

আবার প্রদাহবিরোধী ওষুধ মেথোট্রেক্সেট, এজোথায়াপ্রিন ইত্যাদি, নাইট্রোফুরান্টয়ন, সালফোনামাইড, সালফাস্যালাজিন, এমফোটেরিসিন ইত্যাদি এন্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট, ব্রোমোক্রিপটিন, বায়োলজিক্যাল এজেন্ট প্রভৃতি ওষুধের প্রভাবেও এসব রোগ হয়। ক্যান্সার, নানা ধরনের চর্মরোগ, বাতরোগের কারণেও হতে পারে।

 

উপসর্গ

►  প্রায় সব রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণ হলো, শুষ্ক কাশি ও পরিশ্রমের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া। সাধারণত কাশির সঙ্গে কফ থাকে না।

►   আইএলডিতে সাধারণত বুকে ব্যথা হয় না। তবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদি রোগ থাকলে আবার প্রদাহ হয়ে বুকে হালকা বা তীব্র ব্যথা হতে পারে।

►   জ্বর, দুর্বলতা, গিরা ব্যথা ও ফোলা, চোখ ও মুখ শুষ্ক, ওজন কমে যাওয়া।

►   হাত ও পায়ের নখ মোটা হয়ে বিশেষ আকৃতি ধারণ (ক্লাবিং)।

►   ফুসফুসে স্টেথোস্কোপের সাহায্যে নিঃশ্বাসের শেষ দিকে এক ধরনের শব্দ পাওয়া যায়, যাকে বলে ক্রেকলস। এই শব্দ অনেকটা জিপার খোলার শব্দের মতো। বুকের এক্স-রে স্বাভাবিক পেলেও অনেক সময় এই ক্রেকলস শুনতে পাওয়া যায়।

►   যদিও আইএলডি হলো ফুসফুসের অসুখ। তথাপি তীব্র অবস্থায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে পালমোনারি হাইপারটেনশন বা হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। পা ফুলে যেতে পারে, পেটে ও যকৃতে ব্যথা হতে পারে।

 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

এই রোগের কারণ ও তীব্রতা জানা যায় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। যেমন—

►   বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে করালে দানা ও জালের মতো অস্বচ্ছতা দেখা যায়।

►  বুকের হাইরেজল্যুশন সিটি স্ক্যান পরীক্ষাটি বেশ দরকারি। এতে জাল ও দানাদার অস্বচ্ছতা, মৌচাকের মতো বায়ুর থলি, ব্রংকিয়াকটেসিস বা শ্বাসনালির ছিদ্র প্রসারিত হওয়া, ফুসফুসের আকার সংকুচিত হওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

►   রক্তের আরএ ফ্যাক্টর, অ্যান্টি নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি ইত্যাদি পরীক্ষা।

►   স্পাইরোমেট্রির মাধ্যমে ফুসফুসের ভলিউম ও ফুসফুসের গ্যাস দ্রবীভূত হওয়ার ক্যাপাসিটি ও রোগের তীব্রতা বোঝা যায়। চিকিৎসার অগ্রগতিও মনিটর করা যায়।

►   ৬ মিনিট হাঁটার একটি পরীক্ষা রয়েছে, যার মাধ্যমে রোগী ওই সময় কতটুকু হাঁটতে পারে, তখন রক্তে অক্সিজেন সম্পৃক্তি কমে যায় কি না এবং রোগের তীব্রতা কেমন—তা বোঝা হয়।

►   ইকোকার্ডিওগ্রাফির সাহায্যে পালমোনারি ধমনির রক্তচাপ দেখা হয়। যদি বেশি থাকে, তাকে পালমোনারি হাইপারটেনশন ধরা হয়। এ ধরনের উচ্চ রক্তচাপেরও চিকিৎসা করাতে হয়, যা আইএলডির জটিলতা।

►  ব্রংকোস্কপি, থোরাকোস্কপি বা থোরাকোটমি করে ফুসফুসের বায়োপসি করেও আইএলডি নির্ণয় করা যায়।

 

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দিয়ে ফুসফুসের এই রোগের অবনতি খুব একটা ঠেকানো যায় না। তা ছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোগীর কাছে অসহ্য হয়। তবে চিকিৎসকরা এই রোগের সাধারণ চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগীকে এক ও তিন বছর পর পর ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক টিকা দিতে বলেন।

►   পালমোনারি রিহেবিলিটেশনে রোগীকে নিয়মিত দৈহিক ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা হয়।

►   নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা যেমন—স্টেরয়েড, অ্যাযোথায়াপ্রিন, সাইক্লোফসক্যাইড, পিরফেনিডন ইত্যাদি বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া হয়।

►   অজ্ঞাত কারণে ফুসফুসের ফাইব্রোসিস ঘটে থাকলে তখন ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেও রোগীর আয়ুষ্কাল বাড়ানো যায়।

শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসতন্ত্রের

করণীয়

►   আইএলডি হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলো মেনে চলা। যা নিষেধ তা বর্জন করা।

►   মাস্ক ব্যবহার বা সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে ফুসফুসে ধূলিকণা ও জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঠেকানো।

►   ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা।

►   পশুপাখির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা।

►   আখ বা ইক্ষুর ছিবড়ায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সলিউশন ব্যবহার করে ছত্রাকের বৃদ্ধি কমানো।

►   চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার না করা ও সতর্ক থাকা।

https://www.youtube.com/watch?v=r0t64gzuqtg

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!