সাধারণত বৃক্ষরাজি যে ভূমিতে সমারোহ ঘটায় তাকে বনভূমি বলা হয়। বনভূমি থেকে বিভিন্ন বনজ সম্পদ যেমন কাঠ,মোম,মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়। একটা দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১৩ ভাগ মাত্র। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় প্রায়,অর্ধেক। যেহেতু জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে,তাই মানুষের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রের চাহিদাও দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি আসবাবপত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঠ বনভূমি থেকেই সরবারহ করতে হয়। এতে বনভূমির পরিমাণ দিন দিন আরও কমে আসছে।
সব অঞ্চলের বনভূমি কিন্তু একরকম নয়। ভূমি ও জলবায়ুগত কারণে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরণের বনভূমি রয়েছে। অঞ্চলভেদে বাংলাদেশের বনভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১.চট্টগ্রামের বনাঞ্চল
২.সিলেটের বন
৩. সুন্দরবন ও
৪.ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের বনভূমি।
আবার উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বনাঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
১.ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পত্র পতনশীল বনভূমি
২.ক্রান্তীয় পাতাঝরা বা পত্র পতনশীল বনভূমি
৩. স্রোতজ (ম্যানগ্রোভ) বা গরান বনভূমি।
১.ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পত্র পতনশীল বনভূমি : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চলকে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পত্র পতনশীল বন নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে উষ্ণ ও আর্দ্রভূমির কিছু এলাকা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, তরুলতা, ঝোপঝাড় ও গল্ম জন্ম নেয়। এসব উদ্ভিদের পাতা একত্রে ঝরে না যাওয়ায় বনগুলো সারাবছর সবুজ থাকে। এজন্যই এসব বনকে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ বন বলা হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চল যেমন চটগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও সিলেট এই অঞ্চলের অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। আবার এই অঞ্চলের মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে রাবারের চাষ হয়। এই অঞ্চলে জন্মে এমন কিছু গাছ হলো গর্জন,সেগুন,জারুল,মেহগনি,তেলসুর,চাপালিশ ইত্যাদি। এছাড়াও সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ে প্রচুর বাঁশ ও বেত জন্মে। প্রায় চৌদ্দ হাজার কিলোমিটার জুড়ে এই বনাঞ্চলের বিস্তৃতি।
২. ক্রান্তীয় পাতাঝরা বা পত্র পতনশীল বন: শুষ্ক মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) এই বনের গাছের পাতা ঝরে যায় বলে এই বনকে পাতাঝরা বন বলা হয়। এ বন মূলত গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলায় অবস্থিত। তাছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুর, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় অল্প কিছু পাতাঝরা বন রয়েছে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ শাল বা গজারী, তাই এই বনকে শালবনও বলা হয়। এ বনের পরিমাণ প্রায় ১,২০,০০০ হেক্টর।এ বনের মূল প্রজাতি শাল যা অনেকেই গজারী বলে জানেন। শাল ছাড়াও এই বনে রয়েছে হরিতকি, বহেরা, কড়ই, শিমুল, অর্জুন ইত্যাদি প্রজাতির বৃক্ষ। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে এটি মধুপুর ভাওয়াল এবং দিনাজপুরে বরেন্দ্র বনাঞ্চল নামে পরিচিত।
৩. স্রোতজ (ম্যানগ্রোভ) বা গরান : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ খুলনা,নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলে জোয়ার-ভাটার লোনা মাঠিতে যেসব উদ্ভিজ্জ জন্মায় তাদের স্রোতজ বা গরান বনভূমি বলা হয়। প্রধানত সুন্দরবনে এসব উদ্ভিদ বেশি জন্মে।সুন্দরী, গেওয়া,পশুর,ধুন্দল,কেওড়া,বাইন,গরান,গোলপাতা ইত্যাদি উদ্ভিদ এই বনভূমিতে জন্মে। বাংলাদেশে এ বনভূমি ৪১৯২ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের নাম সুন্দরবন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার, এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার।
লিখেছেন আরাফাত বিন হাসান
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (পাঠ্যবই, নবম-দশম শ্রেণি) এবং বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর।