এমন একটি অসুখ, যাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে হলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়া রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকতে হবে।
বিশ্বজুড়ে অসুখ-বিসুখে মৃত্যুর সপ্তম বড় কারণ ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো রোগও বেশি হয়। যা থেকে প্রাণঘাতী নিউমোনিয়া হতে পারে। বছরে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
ধূমপান করলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা বাড়ে। রক্তনালির গাত্র মোটা হয়ে নালি সরু হয়ে যায়। রক্তচাপ বাড়ে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
ডায়াবেটিস থাকলে অঙ্গহানির ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৮৬ হাজার লোকের পা কেটে ফেলতে হয় ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায়।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ ভাগ মানুষ জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে এ হার কিছুটা বেশি।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ২৫ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি।
ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্মৃতিভ্রম ও বিষণœতার কারণ ঘটায়।
রেটিনোপ্যাথি, ছানি ও গ্লুকোমার মতো অসুখে চোখ স্থায়ী তিগ্রস্ত হতে পারে।
কানের অভ্যন্তরের অতিুদ্র রক্তনালিকা তিগ্রস্ত হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
মাড়ির ও অসুখ, যেমনÑজিনজিভাইটিস ও পেরিওডন্টাইস হয়ে দাঁত অকালে পড়ে যেতে পারে।
অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, অনিয়মিত হƒদস্পন্দনজনিত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
লিভারে চর্বি জমে বা ফ্যাটি লিভার হয়ে লিভার সিরোসিস করতে পারে।
ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতা কমতে থাকে। এ কারণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়।
এ অঙ্গ থেকেই রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয়। ডায়াবেটিস হলে যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না।
পরিপাকতন্ত্রের স্নায়ু তিগ্রস্ত হয়। এতে বুকজ্বলা, বমি ও বমিবমিভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনের হার বাড়ে। ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের সৃষ্টি করে।
ধীরে ধীরে মাংসপেশি অ্যাট্রফি হয়ে কার্যকারিতা হারাতে থাকে। এতে শরীর দুর্বল হয়, হাঁটতে অসুবিধা হয়, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়।
স্নায়ুর প্রান্তভাগ তিগ্রস্ত হয়। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বালাপোড়া হয়, অবশ অবশ ভাব হয়, হাতে-পায়ের বোধশক্তি কমে যায়।
স্নায়ু তিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হাত ও পায়ে ঘা হয় এবং এই ঘা সহজে শুকাতে চায় না।
ডায়াবেটিসে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
সব ধরনের ডায়াবেটিসেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু ডায়াবেটিসে এ ঝুঁকি বেশি থাকে।
রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে কেন তি হয়?
রক্তের এই বাড়তি চিনি রক্তনালির গাত্রের প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গাত্র মোটা হয়ে যায়। এতে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বা ইলাস্টিসিটি কমে যায়। ফলে রক্তনালি দিয়ে যেতে বাঁধা পায়।
যখন চোখের পেছনের দিকের রক্তনালি (রেটিনার) তিগ্রস্ত হয়ে ফুলে যায়, ডায়াবেটিসজনিত চোখের জটিলতা তখন থেকে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যা ননপ্রোলিফারেটিভ রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত। সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টিশক্তিতে এর প্রভাব পড়ে না। পরে রক্তনালি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে রেটিনার কোষ নষ্ট হতে থাকে।
কিডনি রক্তের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে কিডনির অভ্যন্তরের অতিুদ্র রক্তনালিকা আর আগের মতো ছাঁকনির কাজ যথাযথভাবে করতে পারে না। এতে রক্ত ছাঁকার সময় বর্জ্যপদার্থের সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রোটিনও প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে কিডনি তার কর্মমতা হারাতে থাকে।
রক্তনালির গাত্র মোটা হয়ে নালির ভেতর সরু হতে হতে তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যখন হার্টের নিজস্ব রক্তনালিও বন্ধ বা ব্লক হয়ে হার্টঅ্যাটাকসহ হার্টের মারাÍক অসুখ করতে পারে।
রক্তে উচ্চ চিনির উপস্থিতির কারণে নার্ভ বা øায়ুর ফাইবার তিগ্রস্ত হয়। ঠিক কিভাবে এই তি হয় তা বিস্তারিত জানা যায়নি। এতে শরীরের কিছু অংশের, যেমন হাত ও পা, তাপ-চাপ ও ব্যথার অনুভূতি কমে যায়। এ কারণে ওই সব অংশে আঘাত পেলে বা কেটে গেলেও রোগী টের পায় না।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের লিভারে গ্লাইকোজেন জমা হতে থাকে। লিভারের স্বাভাবিক বিপাকীয় কার্যক্রম বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। আবার ট্রাইগ্লিসারাইডের মতো চর্বিও ঠিকমতো বিপাক হতে পারে না। যা লিভারে জমে গিয়ে লিভারকে তিগ্রস্ত করে।
মাংসপেশির তি বেশি হয় টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে। মাংসপেশির গ্লাইকোসাইলেশন ও কোলাজেন জমে যায়, পাশাপাশি øায়ু ও রক্তনালিও তিগ্রস্ত হয়। এ কারণে মাংসপেশি তার সংকোচন-প্রসারণসহ স্বাভাবিক কাজ করার মতা ক্রমেই হারাতে থাকে।