হিলচেহারা ও পোশাকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একটা মনের মতো জুতো! অফিস হোক বা বেড়াতে যাওয়া— এক জনের ব্যক্তিত্বে বিশেষ ছাপ ফেলে তার জুতো। কিন্তু পছন্দের জুতো বাছতে বসলেই কি হাই হিল জুতোর দিকে নজর যায়? তা হলে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।

চাহিদার কথা মাথায় রেখে আজকাল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জুতোর নীচেই একটু-আধটু হিল রাখছে জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই হিলের উচ্চতা ও সরু গঠন দিনকে দিন বাড়ছে। জুতোর দোকানে ছেলেদের শু র‌্যাকেও একটু উঁচু হিল চোখে পড়ছে সহজেই।

 আর এখানেই প্রমাদ গুনছেন হাড় ও স্নায়ুবিশেষজ্ঞরা। ‘‘আজকাল অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগেরই হাঁটুর অসুখ কেন জানেন?এর জন্য অন্যতম দায়ী এই হিল জুতো। ছেলেদের ফর্মাল বুটের তলাতেও আজকাল একটু উঁচু প্ল্যাটফর্ম গুঁজে দিচ্ছে জুতোর কোম্পানিগুলি। ফলে কম বয়সে আর্থ্রাইটিসকে একপ্রকার ডেকে আনা হচ্ছে’’— বলছেন অস্থি রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়।

সহমত প্রকাশ করছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ত্রিদিব চৌধুরীও। তাঁর কথাতেও ফুটে উঠছে আশঙ্কার সুর। ‘‘হিল পরা বন্ধ না করলে পায়ের নানা অসুখ তো বটেই, এমনকি একালে প্যারাসাইসিস হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।”

জানেন কি, আপনার পায়ের হিল কোন কোন অসুখের দিকেঠেলে নিয়ে যাচ্ছে আপনাকে?

হাঁটুর সমস্যা: ছেলেদের জুতোর নীচে হিল কিছুটা ফ্ল্যাট হয়, তাই ছেলেরা এই সমস্যায় ভোগেন কম। কিন্তু মেয়েদের হিল লম্বা ও সরু হওয়ায় তাদের জুতো কোনও রকম আচমকা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে না। লম্বা হিল থাকায় পা সব সময় তেরচা ভাবে উঁচু হয়ে থাকে। এতে রক্তসঞ্চালনে যেমন সমস্যা হয়, তেমনই দীর্ঘ ক্ষণ পা ওই ভাবে থাকায় পায়ের উপর পড়া যাবতীয় চাপ সহ্য করতে হয় হাঁটুকেই। শরীরের ভারসাম্যও রাখতে হয় তাকে। ফলে হাঁটু সহজেই বিগড়োয়। ডেকে আনে অস্টিওআর্থ্রাইটিস।

মেরুদণ্ডের নীচের দিকে ব্যথা: এমন জুতোয় শরীরের ভার পুরোটাই হাঁটুকে বহন করতে হয় বলে মেরুদণ্ডকেও ভারসাম্য রাখতে হয় এই অতিরিক্ত চাপের সঙ্গে। এই সমস্যায় পড়েন উঁচু প্ল্যাটফর্ম হিল পরা পুরুষরাও।

পায়ে ব্যথা: এমন জুতোয় পায়ের তালু কখনওই মাটির সঙ্গে সমান্তরাল থাকে না। আঙুলের দিক কিছুটা তেরচা হয়ে মাটিতে পড়ে। ফলে আঙুলে ব্যথা থেকে পাতা ফুলে যাওয়া, নানা সমস্যা দেখা যায়। প্ল্যাটফর্ম হিলে এই সমস্যা অত বেশি না থাকলেও উঁচু সরু হিলে তো আছেই। তবে প্ল্যাটফর্ম হিলও খুব উঁচু হলে পায়ের পাতার ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

মস্তিষ্কে প্রভাব: পায়ের পাতার অবস্থান মাটির সঙ্গে সমান্তরালে না থাকায় রক্ত সঞ্চালনে বাধা আসে। আর এর প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসেও। চিকিৎসকদের মতে, এই কারণে ভয়ানক মাথা যন্ত্রণা হওয়াও বিচিত্র নয়।

স্নায়ুর সমস্যা: এমন জুতোর জেরে পায়ের স্নায়ুগুলিতে রক্তসঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে। হাঁটুকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় বলে স্নায়ুর উপর চাপও পড়ে। তাই এমন অভ্যাস খুব বেশি থাকলে তা ডেকে আনতে পারে স্নায়ুর নানা সমস্যা। এমনকি, পা অবশ করে প্যারালাইসিসও ডেকে আনতে পারে।

জুতো কেনার আগে লক্ষ রাখুন তার হিলের আকারের উপর। ছবি: শাটারস্টক।

তা হলে উপায়?

  • হিল পরা কি ছেড়েই দেবেন তবে? তা কেন! চিকিৎসকরা বাতলাচ্ছেন তারও সমাধান। তাঁদের পরামর্শ:
  • হিল পরলে চেষ্টা করুন জুতোর নীচের হিল যতটা চওড়া ও সমান্তরাল হয় সে দিকে নজর রাখার।
  • হিল পরুন, তবে সে হিল যেন খুব উঁচু ও সরু না হয়। বরং প্ল্যাটফর্ম হিলের বুট পরলেও তার উচ্চতা ও বুটের মুখ কতটা সরু সেটা দেখে নিন। খুব সরু মুখের বুট পরলে পায়ের পাতা স্বাভাবিক ভাবে নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয়, তেমন জুতো এড়ান।
  • হিল পরতে খুব ভালবাসলে জুতোর নীচে লাগান অতিরিক্ত প্যাড। যা জুতোর সোলের সঙ্গে জুতোর নীচের সোলের সঙ্গে হিলের দূরত্ব কমাবে।