বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার বলে একটি বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠনটি বলছে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না৷
তাদের দাবি, সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করেন না অভিযোগকারীরা৷ বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত মানবাধিকারকর্মীরাও৷ তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে৷ তবে যেই নির্যাতিত হোক তার আইনি সুরক্ষার দাবি জানান তারা৷
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু বেসরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করছে৷ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পুরুষ দিবস পালন করছে৷ চলতি বছরও ছোট পরিসরে এমন আয়োজন করা হবে বলে জানায় সংগঠনটি৷
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্যাতিত পুরুষদের’ পরামর্শ ও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ৷
তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন যে ফোন আসছে তাতে আমরা দেখেছি, নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পুরুষ৷ লজ্জায় তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না৷ কোনো নারী নির্যাতিত হলে তিনি তো বিচার চাইতে পারেন৷ অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়৷ নির্যাতিত পুরুষদের সহযোগিতার জন্য আমরা এ সংগঠনটি করেছি৷
নিজেও এমন নির্যাতনের শিকার দাবি করে তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি অনেক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গিয়েছি৷ তারা কেউই নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়নি৷ অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা এই সংগঠন করেছি৷ এখন আমরা নির্যাতনের শিকার পুরুষকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করছি৷ তাদের পরামর্শ দিচ্ছি৷ জাতীয় সংসদে পুরুষ নির্যাতনবিরোধী আইন করার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি৷ এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রচারণাও চালাচ্ছি৷
সংগঠনটির গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে আলম বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন যে অভিযোগ আসে তার ভিত্তিতেই আমরা গবেষণাটি করেছি৷ তবে সমস্যা হলো, কেউই লিখিত অভিযোগ করতে চান না৷ ফলে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো দলিলাদি নেই৷
সংগঠনটির দাবি, বিদেশ থেকে ফোন করেও অনেকে তাদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করছে৷
বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সানজীদা আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সমাজে পুরুষ একই সঙ্গে কিন্তু নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে তারা নির্যাতিত হলেও হতে পারে৷
তিনি বলেন, গত বছর আমাদের এখানে (বাংলাদেশে) ছোট পরিসরে পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছে৷ পুরুষ নির্যাতন নিয়ে আমরা এখনো কোন গবেষণা বা পরিসংখ্যান পাইনি৷ পুরুষরা যত বেশি পুরুষ হিসেবে নির্যাতিত হয়ে থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেণী, অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক দুর্বল অবস্থানের কারণে নির্যাতিত হন৷ একই কারণে নারীও নির্যাতিত হন৷ আমি মনে করি সব নির্যাতনেরই আইনী সুরক্ষা থাকা প্রয়োজন৷