Friday, April 19
Shadow

কেউ মারা গেলে করণীয়

কেউ মারা গেলে সংবাদ শোনামাত্র ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়বে। ইন্তেকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত-পা সোজা করে দেওয়া। চোখ-মুখ বন্ধ করে দেওয়া। খাটিয়ার ওপর শুইয়ে সম্পূর্ণ শরীর চাদর দ্বারা ঢেকে দেবে। যত দ্রুত সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১৮, তিরমিজি : ১/২০৬, ফাতাওয়া শামি : ২/১৯৩, ৩/১৫১-১৫২)

কেউ মৃত্যুবরণ করলে চওড়া পট্টি দিয়ে তার চোয়াল বেঁধে দেওয়া মুস্তাহাব (ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য) এবং তার চোখ বন্ধ করে দেওয়া। (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৮)

চোখ বন্ধ করার সময় এ দোয়া পাঠ করবে

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইয়াসসির আলাইহি আমরাহু ওয়া সাহহিল আলাইহি মা-বাদাহু, ওয়াস আদহু বি-লিকাইকা, ওয়াজআল মা খারাজা ইলাইহি মিনমা খারাজা মিনহু।

অর্থ : আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ে আসা দ্বিন অনুযায়ী। হে আল্লাহ! তার বিষয়াদি সহজ করে দিন এবং পরের বিষয়গুলোও তার জন্য সহজ করে দিন। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তাকে দান করুন। তার কাছে আগন্তুক বস্তুগুলোকে প্রস্থানকৃত বস্তু থেকে উত্তম করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৭)

মৃত ব্যক্তির হাতদ্বয় সিনার ওপর রাখবে না, বরং তার দুই পাশেই রাখতে হবে। (সুনানে কুবরা, হাদি : ৬৮৪৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪১)

গোসল দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির পাশে উচ্চৈঃস্বরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। (আবদুর রাজ্জাক : ৩/৩৮৬)

মৃত্যুর খবর প্রচার করা এবং অনতিবিলম্বে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুস্তাহাব। (বুখারি, হাদিস : ১১৬৮, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪৭)

টাকার বিনিময়ে কোরআনখানি করা বৈধ নয়

মৃত ব্যক্তির নামে সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কোরআন পড়িয়ে টাকা দেওয়া-নেওয়া ও খানা খাওয়া নাজায়েজ। আর যেহেতু টাকা বা কোনোরূপ বিনিময় নিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করলে স্বয়ং তিলাওয়াতকারীই ওই তিলাওয়াতের কোনো সওয়াব পায় না। তাহলে সে মৃত ব্যক্তির রুহে কী পৌঁছাবে? সুতরাং খতম নিজেদের পড়তে হবে বা এমন লোক দ্বারা পড়াতে হবে, যাদের সঙ্গে আগে থেকে মহব্বত ছিল, যারা বিনিময় ছাড়াই কোরআন পড়ে দেবে। (ফাতাওয়া শামি : ৫/৩৯, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৩৮৫)

মারা গেলে কিভাবে গোসল দেবেন

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কেফায়া। কিছু লোক যদি তাকে গোসল করিয়ে দেয়, তাহলে সবার পক্ষ থেকে সে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। যদি কেউ তাকে গোসল করিয়ে না দেয়, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৭০)

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি হলো—এমন চকিতে তাকে রাখবে, যার ওপর বেজোড়সংখ্যক সুগন্ধি দিয়ে ধুনি দেওয়া হয়েছে। তার সতর তথা পুরুষের ক্ষেত্রে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় দ্বারা আবৃত করবে। এরপর তার শরীর থেকে কাপড় খুলবে। নামাজের অজুর মতো তাকে অজু করাবে। তবে কুলি করাবে না এবং নাকে পানি দেবে না। বরং পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ওই কাপড় দ্বারা মুখ মুছবে। এরপর বরইপাতার সিদ্ধ পানি তার ওপর ঢালা হবে। যদি বরইপাতা ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তাহলে বিশুদ্ধ পানি দ্বারা গোসল দেওয়া যাবে। তার মাথা ও দাড়ি সাবান ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করা যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৩২, বুখারি, হাদিস : ১৬২)

এরপর তাকে বাঁ পাশ করে রেখে তার ওপর পানি ঢালতে হবে, যাতে নিচেও পানি পৌঁছে। এরপর ডান পাশ করে শুইয়ে পানি ঢালতে হবে, যাতে সেদিকে নিচে পর্যন্ত পানি পৌঁছে। এরপর তাকে ঠেক লাগিয়ে বসানো হবে। পেট বিনম্রভাবে দাবানো হবে। কোনো মলমূত্র বের হলে সেগুলো ধুয়ে দিতে হবে। পুনরায় গোসল দিতে হবে না। এরপর কাপড় দিয়ে মুছে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১৬২, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৪৫)

এরপর তার দাড়িতে ‘হনুত’ এবং সিজদার স্থানগুলোতে কর্পূর দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ৬৯৫২)

তবে মৃতের নখ ও চুল কাটা যাবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৮৭৬)

আর মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে পরিপূর্ণভাবে সতর আবৃত করে গোসল দেবে। মৃতের মাহরাম বা অন্য নারী ওই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবে।

মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাবেন

মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮১৯)

তাই কমপক্ষে এমন পরিমাণ কাফন পরিধান করাবে, যা দিয়ে মৃত ব্যক্তির পুরো শরীর আবৃত  হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৮, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ৬৯৩৭)

মৃত ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেবে, যাতে অন্যের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে। (বুখারি : ৫/১৪)

যদি নিজের কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে তাকে কাফন দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে—জীবিত অবস্থায় যাদের আহারবিহারের দায়িত্ব তার ওপর ছিল। যদি তাদের কাছেও কোনো সম্পদ না থাকে, তাহলে কাফনের ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে করতে হবে। যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে সক্ষম ও সচ্ছল মুসলমানদের ওপর তার কাফনের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।

কাফন তিন প্রকার
১. সুন্নত কাফন, ২. কেফায়া কাফন এবং ৩. প্রয়োজনীয় কাফন।

পুরুষের সুন্নত কাফন হলো—কমিস, ইজার ও লেফাফা। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৫, মুআত্তা মুহাম্মদ ২/৮৮)

পুরুষের কেফায়া কাফন হলো ইজার ও লেফাফা। এর চেয়ে কম করা মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬)

পুরুষের জন্য প্রয়োজনীয় কাফন হলো, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কাফন পাওয়া যায়। সেটা শুধু সতর ঢাকা পরিমাণই হোক না কেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)

নারীদের সুন্নত কাফন হলো লেফাফা, ইজার, কমিস, ওড়না ও সিনাবন্দ। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫)

নারীদের কেফায়া কাফন হলো ইজার, লেফাফা ও ওড়না। (হেদায়া : ১/৮৯)

নারীদের জরুরি কাফন হলো প্রয়োজনের সময় যতটুকু পাওয়া যায়। উত্তম হলো সিনাবন্দ বক্ষ থেকে রান পর্যন্ত হওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)

কাফনের কাপড় সাদা হওয়া উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯১৫, মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৩)

ইজার মাথা থেকে পা পর্যন্ত হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৮৮)

লেফাফা ইজার থেকে এক হাত লম্বা হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭)

কমিস কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত হবে। কমিসে হাতা হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৬০)

পুরুষকে কাফন পরানোর নিয়ম হলো—প্রথমে লেফাফা রাখবে। তারপর লেফাফার ওপর ইজার রাখবে, অতঃপর কমিস রাখবে। এরপর মৃত ব্যক্তিকে এর ওপর রেখে প্রথমে কমিস পরাবে। অতঃপর ইজারকে বাঁ দিক থেকে চড়ানো, এরপর ডান দিক থেকে চড়ানো। এরপর বাঁ দিক থেকে লেফাফা মুড়ে দেওয়া, তারপর ডান দিক থেকে লেফাফা মোড়ানো। উভয় দিক থেকে কাফনকে বেঁধে দেওয়া, যাতে কাফন এলোমেলো না হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫, বাদায়ে : ৩/২৫৮)

নারীদের কাফন দেওয়ার পদ্ধতি হলো—প্রথমে লেফাফা বিছাবে। লেফাফার ওপর ইজার, তার ওপর কমিস বিছাবে। প্রথমে কমিস পরাবে। চুলগুচ্ছকে দুই ভাগ করে সিনার দুই পাশে কমিসের ওপর রেখে দেওয়া। এরপর ওড়না মাথার ওপর রাখা। ওড়না পেঁচানোও যাবে না, বাঁধাও যাবে না। বরং শুধু রেখে দিতে হবে। এরপর ইজারকে প্রথমে বাঁ দিক থেকে, তারপর ডান দিক থেকে পেঁচিয়ে সিনার দিক থেকে বেঁধে দেওয়া। অতঃপর লেফাফা পেঁচিয়ে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৫২, ২৬৪, আবু দাউদ : ২৭৪৫)

জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম

জানাজার নামাজে ইমাম মৃত ব্যক্তির বক্ষ বরাবর দাঁড়াবে। (বুখারি, হাদিস : ১২৪৬)

ইমামের পেছনে মুক্তাদিদের কাতার হবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩১০২)

সবাই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে জানাজার ফরজ আদায়ের নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস : ১)

উল্লেখ্য, নিয়ত মনে মনে করা ফরজ। মুখে পড়া ফরজ নয়। তাই মনে মনে শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে আদায় করছি। নামাজ আল্লাহর জন্য, দোয়া মাইয়্যেতের জন্য।

এরপর তাকবিরে তাহরিমা বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। এরপর ছানা পড়বে। এরপর তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবে। এই তাকবিরে হাত ওঠাবে না। তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না। তারপর চতুর্থ তাকবির বলবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনি : ১৮৫৩, ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৯৫)

অতঃপর ডান ও বাঁ দিকে সালাম ফেরাবে। (সুনানে কুবরা : ৭২৩৮)

ইমাম তাকবির উচ্চৈঃস্বরে বলবে এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চৈঃস্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চৈঃস্বরে পড়বে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৪, সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭৪৩৩)

জানাজার নামাজের সুন্নত নিয়ম হলো

১। মৃত ব্যক্তি পুরুষ হোক বা নারী, ইমাম তার সিনা বরাবর দাঁড়াবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪৬)

২। প্রথম তাকবিরের পর ছানা পড়া। জানাজার নামাজের ছানা নামাজের ছানার চেয়ে কিঞ্চিৎ ভিন্ন।

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানা-উকা ওয়া লা-ইলাহা গায়রুক।

৩। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়া। (আমাদের নামাজে যেই দরুদ পড়ি) ৪। তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়া। (ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৯৫)

মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ পুরুষ বা মহিলা হয়, তবে এই দোয়া পড়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া ছগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়ামান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান।

অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট এবং বড়দের ও আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৪৫)

মৃত যদি ছেলে শিশু হয়, তবে এই দোয়া পড়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতাঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।

আর মেয়েশিশু হলে এই দোয়া পড়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।

চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে। মনে রাখতে হবে, জানাজার নামাজে প্রথম তাকবির ছাড়া পরের তাকবিরগুলোতে হাত উত্তোলন করবে না। আর নামাজিদের কাতার তিন, পাঁচ, সাত—এভাবে বিজোড়ভাবে দাঁড় করাবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭২৩৮, দারাকুতনি, হাদিস : ১৮৫৩)

বিশেষ অবস্থায় জানাজার নামাজ

যদি মৃত ব্যক্তির অভিভাবক জানাজা আদায় করে ফেলে, তবে আবার জানাজা পড়া যাবে না। (মবসুত : ২/১২০, তাবকাতে ইবনে সাআদ : ৩/৩৬৯)

যদি জানাজা ছাড়া মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়, তাহলে লাশ পচে ফেটে যাওয়ার আগে তার কবরের ওপর জানাজা পড়ে দেওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৫৪, বুখারি, হাদিস : ১২৩৭)

যদি লাশ একাধিক হয়, তবে উত্তম হলো প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে জানাজা পড়া। তবে সব লাশ একত্র করে একবার জানাজা পড়ে দেওয়াও জায়েজ। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭০৫২, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৪৪১৪)

যদি একাধিক মৃত ব্যক্তির জানাজা একসঙ্গে পড়াতে হয়, তবে লম্বা করে লাশের কাতার বানাবে। প্রথমে পুরুষদের লাশ, তারপর বাচ্চাদের লাশ, এরপর নারীদের লাশ রাখা হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৭৯, ইবনে আবি শায়বা : ৩/৩১৫)।

যে শিশুসন্তান জন্ম নেওয়ার পর তার মধ্যে জীবিত থাকার আলামত পাওয়া যায় এবং পরে মারা গেলে তার নাম রাখা হবে এবং জানাজা পড়া হবে। কিন্তু যে শিশুর মধ্যে জীবিত থাকার কোনো আলামতও দেখা যাবে না, তার জানাজা পড়া হবে না। বরং তাকে গোসল দিয়ে একটি কাপড় পেঁচিয়ে দাফন করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১২৭০, তিরমিজি, হাদিস : ৯৫৩)

কোনো ওজর-অপারগতা ছাড়া মসজিদে জানাজা পড়া মাকরুহ। তবে অপারগতা থাকলে যে মসজিদে জামাত হয় সেখানে জানাজার নামাজ পড়াতে কোনো সমস্যা নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫০৬, মুসলিম, হাদিস : ১৬১৫)

যে ব্যক্তি ইমামকে জানাজার দুই তাকবিরের মধ্যে পায় সে অপেক্ষা করবে। ইমাম যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় তাকবির বলবে তখন ইমামের ইকতিদা করবে এবং দোয়ায় ইমামের অনুসরণ করবে। ছুটে যাওয়া তাকবির লাশ ওঠানোর আগে কাজা করবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/৫০৬, আব্দুর রাজ্জাক : ৩/৪৮৪)

যে ব্যক্তি তাকবিরে তাহরিমা বলার পর দ্বিতীয় তাকবির বলার আগে আসবে সে তৎক্ষণাৎ ইমামের ইকতিদা করবে দ্বিতীয় তাকবিরের জন্য অপেক্ষা করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি মায়বা : ৩/৩০৬)

যে ব্যক্তি ইমাম চতুর্থ তাকবির বলার পর সালাম ফেরানোর সময় উপস্থিত হয় সে জানাজাপ্রাপ্ত হয়নি বলেই বিবেচিত হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা :  ৩/২৯৫)

আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিকেও গোসল দেওয়া হবে এবং তার ওপর জানাজা পড়া হবে। (দারাকুতনি : ১৭৮৮)

যে ব্যক্তি নিজের মা-বাবাকে নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে, তার ওপর জানাজার নামাজ পড়া হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৫৬, সুনানে কুবরা, হাদিস : ১৫১৫৮)

মৃতদেহ কিভাবে বহন করব

মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। অনুরূপ মৃতদেহ বহন করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা মুরসালাত, আয়াত : ২৫, ২৬, সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩১)

উত্তম হলো মৃত ব্যক্তির খাট সবার আগে ওঠানোর ক্ষেত্রে ইখলাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ ইবনে মাআজের মৃতদেহ নিজ হাতে উঠিয়েছিলেন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৭, মুসলিম, হাদিস : ১৫৭১)

মৃত ব্যক্তির খাট চার ব্যক্তি কর্তৃক ওঠানো মুস্তাহাব। উত্তোলনকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সুন্নত হলো মৃতদেহ নিয়ে ৪০ কদম হাঁটা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৬৭)

মৃত ব্যক্তির খাট এমনভাবে ওঠানো মুস্তাহাব, যাতে মৃতদেহ নড়াচড়া না করে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৭, মুসলিম ১৪৬৫, তিরমিজি, হাদিস : ৯৩৬)

মৃতদেহের পশ্চাতে গমন করা তার অগ্রভাগে গমন থেকে উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৩২)

মৃতদেহ মাটিতে রাখার আগে বসা মাকরুহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৪১)

মৃতকে কিভাবে দাফন করব

কবর কমপক্ষে কোমর পরিমাণ গভীর হওয়া মুস্তাহাব। তার চেয়ে বেশি হলে আরো উত্তম। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮০০)

কবরকে ‘লাহাদ’ বানানো উত্তম। যদি মাটি নরম হয়, তবে ‘শক’ বানানো যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৬)

মৃত ব্যক্তিকে কবরে ডান পাশ করে কিবলামুখী রাখা। মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ বলা।

মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কাফনের গিরা খুলে দেওয়া।

মৃত ব্যক্তি নারী হলে তাকে কবরে রাখার সময় পর্দা দেওয়া। আর পুরুষ হলে কবরে পর্দা না দেওয়া।

মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর ওপরে কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে আগে কবরের মুখ বন্ধ করে দেওয়া। পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ। যদি কাঁচা ইট বা বাঁশ ইত্যাদি পাওয়া না যায়, তবে পাকা ইট দেওয়া মাকরুহ নয়।

মৃত ব্যক্তির দাফনে শরিক সবাই নিজের উভয় হাতে কবরে তিনবার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব। প্রথমবার মাটি ঢালার সময় বলবে ‘মিনহা খালাকনাকুম’, দ্বিতীয়বার মাটি ঢালার সময় বলবে ‘ওয়া ফিহা নুঈদুকুম’, তৃতীয়বার ঢালার সময় বলবে ‘ওয়া মিনহা নুুখরিজুকুম তারাতান উখরা’।

এরপর মাটি দিয়ে কবরকে বন্ধ করে দেবে। মাটির স্তূপ দিয়ে কবরকে উটের পিঠের মতো বানাবে। চৌকোনা বানাবে না।

সৌন্দর্য ও গৌরব করে কবরের ওপর ঘর বানানো হারাম। কবরকে শক্ত করার জন্য বানানোও মাকরুহ।

ঘরে মৃত ব্যক্তি দাফন করা মাকরুহ। কারণ ঘরে দাফন করা নবীদের বৈশিষ্ট্য।

অপারগতার কারণে এক কবরে কয়েকজনকে দাফন করা জায়েজ আছে। এক কবরে একাধিক মৃতদেহ দাফন করার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হলো মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে মাটির স্তূপ বানিয়ে পৃথক করে দেওয়া।

জাহাজে কেউ মারা গেলে তাকে গোসল দেওয়া হবে, কাফন পরানো হবে এবং জানাজাও পড়া হবে। যদি মাটি বেশি দূরে হয় এবং এত সময়ের মধ্যে মৃতদেহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তবে তা সাগরে ভাসিয়ে দেবে।

মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মৃত্যুবরণ করেছে, সেখানেই দাফন করা মুস্তাহাব।

যদি মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়ার সময় কিবলামুখী রাখা না হয় অথবা বাঁ পাশ করে শোয়ানো হয় এবং কবর বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন এসব শুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য কবর খোঁড়া নিষেধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!