class="post-template-default single single-post postid-50253 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আমি তুমি সে নাটক : দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০

আমি তুমি সে নাটক : দৃশ্য ২১-৩০

আমি তুমি সে : ‍দৃশ্য ৩১-৪০

 

দৃশ্য-৪১

নাভিদের বাসা। পূর্ণতা, নাভিদের মা আর নাভিদ।

পূর্ণতা সাজছে। প্রথমে সাধারণ পোশাক সেলোয়ার। ড্রেস চেঞ্জ করবে। টি-শার্ট পরবে। জিন্স পরবে। আয়নায় দেখবে। পছন্দ হয় না।  আরেকটা জামা বদলাবে, হাঁটুর ওপর থাকা শর্টস পরতে পারে।আয়নার সামনে পোজ দিয়ে নিজের মধ্যে আবেদন আনার চেষ্টা করবে পূর্ণতা।

পূর্নতা: (ভাবছে) মডেলদের দেখে দেখে আমাকে আর ভালো লাগবে না, এমনটা হবে না। আমিও দেখিয়ে দিবো আমি কী। ওকে আমি আমার কবজায় আনবোই।

নাভিদের মা: (বাইরে থেকে ডাকবে) পূর্ণতা, ভাতটা একটু দেখতো।

পূর্ণতা তাড়াতাড়ি কাপড় খুঁজবে। হাতের কাছে নাভিদের একটা শার্ট পেয়ে ওটাই পরবে। রান্নাঘরে গিয়ে ভাত নাড়াচাড়া করে আবার ফিরে আসার সময় নাভিদের মায়ের মুখোমুখি।

নাভিদের মা: কীরে এমন উদ্ভট জামা কাপড় পরেছিস কেন।

পূর্ণতা: মডেল হবো তাই।

মা: মডেল হতে হলে সব খুলে ফেলতে হয় নাকি। আর ভালো কথা, তুই তোর বাসায় যাবি না। 

পূর্ণতা: না যাবো না। এখানেই থাকবো ঠিক করেছি। তোমার বুয়া লাগবে না। আমাকে বিনা বেতনে রেখে দাও।

মা: শোন, এসব করে কোনও লাভ নেই। নাভিদের সঙ্গে জেরিনের সেট হয়ে গেছে। তোর কপালে আর নেই।

পূর্ণতা: কচু সেট হয়েছে। তুমি কিছুই জানো না। এখন তো নতুন মডেল জুটেছে জানো না?

মা: কী বলিস! কীসের মডেল। এসব অলক্ষুণে কথা বলবি না।

পূর্ণতা: ও এখন টেনশন? আর আমি চাইলেই দোষ। হুহ।

মা: তোর মাকে বলতে হবে, বুঝেছি। এইটুকুন মেয়ে।

পূর্ণতা: মাকে বললে তখন মা আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে। তখন কিন্তু তোমার বাসায় পার্মানেন্ট হয়ে যাবো।

মা: সেটার কী আর বাকি আছে!

 

পূর্ণতা আবার তার রুমে ঢুকবে। নাভিদ বাসায় এসেছে। তার কথা শুনে পূর্ণতা সচকিত হবে। সে খানিকটা বিব্রত। নাভিদের শার্টটা খুলে রাখবে। মডেলদের মতো করে গলায় ওড়না পেঁচাবে। চোখে আই লাইনার লাগাবে। চুল ঠিক করবে। বের হবে।

নাভিদ তাকে দেখে হো হো করে হাসবে।

নাভিদ: মা দেখে যাও। চিড়িয়াখানা থেকে কী যেন একটা ছুটে এসেছে। হাহাহা।

পূর্ণতা: শোন খবরদার বলছি। তোমার ওই মডেলদের চেয়ে আমি কিন্তু কম না।

নাভিদ তাকে আপাদমস্তক আবার দেখবে।

নাভিদ: না না কম কে বলেছে। কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি, এই আর কি। খিক খিক খিককক।

পূর্ণতা: খালা! তোমার ছেলে এমন করলে কিন্তু আমি এখুনি বের হয়ে যাব!

নাভিদের মা: (অন্য রুম থেকে) না না এখুনি বের হওয়ার দরকার নেই। রাত হয়ে গেছে। কাল সকালেই যাস।

পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে তার নিজের রুমে চলে গেল।

 

 

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

 

 

দৃশ্য-৪২

শিরিন ফিরেছে মিতার ঘরে। মিতা স্বাভাবিক। যেন আগের দিন কিছু হয়নি।

শিরিন: আজ খুব টায়ার্ড রে। ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানি আছে?

মিতা: হুম।

শিরিন: আজ কেউ আসবে না তো?

মিতা: নাহ। ঠিক নেই।

শিরিন: আমি হয়তো আর বেশিদিন নেই। কাজটা রেগুলার হলেই বাসা নিয়ে নেবো।

মিতা: হুম। আমাকে আবার একটু বাইরে যেতে হতে পারে।

শিরিন: কোন বাইরে? ঢাকার বাইরে?

মিতা: নাহ, দেশের বাইরে। ততদিন না হয় থাক।

শিরিন: আমি একা একা থাকবো না। ইনফ্যাক্ট, ভাবছি আবার মামার বাসায় ফিরে যাব। কিন্তু মন চায় না।

 

মিতা একটা কিছু বলতে চাইবে। তার আগে শিরিনের ফোন আসবে। নাভিদের ফোন।

রাত। নাভিদের রুম। নাভিদ আর শিরিনের ফোনালাপ। কাট টু শিরিন তার রুমে বিছানায় শুয়ে।

নাভিদ: হ্যাললো সুন্দরী কী করো?

শিরিন: হ্যাঁ সুন্দর, আমি মাত্র ফিরলাম।

নাভিদ: একি। এতদেরিতে। কারও সঙ্গে ডেটিং ছিল নাকি আবার।

শিরিন: আমার কি আর সেই কপাল আছে। মডেল হতে হতেই তো কত বসন্ত পার করে দিলাম।

নাভিদ: আর কারও কারও জীবনে তো বসন্ত আসেই না।

শিরিন: তাই নাকি। যেমন?

নাভিদ: এই তো তোমার পাশেই তো আছি।

শিরিন: কই আমার পাশে তো কাউকে দেখছি না।

নাভিদ: আর কেউ থাকুক না থাকুক, আমি আছি।  এত সহজে যাচ্ছি না।

শিরিন: ওরে বাবা। দুদিন না যেতেই এত।

নাভিদ: এখনও তো কিছু দেখাতেই পারলাম না। উজাড় করে দিতেই তো চাই সব।

শিরিন: উফ, এসব কবিতা আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। এসব বরং জেরিন আপুকে শোনাও।

নাভিদ: আহা। এর মধ্যে আবার… আচ্ছা আচ্ছা! তুমি কি আমাকে তুমি করে বললে নাকি?

শিরিন: কই নাতো! আমি আবার তোমাকে তুমি করে বলবো কোন দুখে।

নাভিদ চুপ। হাত মুঠো করে ‘ইয়েস’ বলে চিৎকারের ভঙ্গি করবে।

শিরিন: তবে একটা কথা। আমি তোমার মতো পুরুষদের কিন্তু একটুও বিশ্বাস করি না। তবে..।

নাভিদ: (হাসি হাসি) তবে?

শিরিন: তবে অবিশ্বাসের মধ্যেও এক ধরনের মজা আছে। পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলে বোকারা। তুমি কি চাও আমি বোকা হই?

নাভিদ: ওহ ক্লেভার ইউ আর। তা কাল মিট করছি কখন।

শিরিন: কাল কি ফটোশ্যুট আছে?

নাভিদ: তা তো জানি না।

শিরিন: না, তাহলে কাল আমাকে কিছু কাজ সারতে হবে। তাছাড়া থাকার জায়গা নিয়েও পড়েছি সমস্যায়। মিতা বাসা ছেড়ে দিচ্ছে।

নাভিদ: আহা। আমাকে বলবে না! তুমি একদমই চিন্তা করবে না। তোমার বাসার চিন্তা আজ থেকে আমার। ইনফ্যাক্ট এখন থেকেই।

শিরিন: হিহিহি। সো কাইন্ড অব ইউ। আমি তাহলে আবার মামার বাসায় উঠছি না। ওই বাসা আবার সেই বাড্ডায়।

নাভিদ: ওকে, কুল। দরকার নেই। আমি কালই ম্যানেজ করে দিচ্ছি।

 

 

 

দৃশ্য-৪৩

নাভিদ ফোন  রাখলো। নাভিদের রুমে পূর্ণতা ঢুকলো। তার পোশাক আরেকটু চোখে পড়ার মতো। বাইরে শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ। ফ্যানে পূর্ণতার চুল উড়ছে।

 

নাভিদ চোখ খানিকটা সরু করে পূর্ণতার দিকে তাকালো। পূর্ণতা  পোজ দেওয়ার মতো করে দাঁড়াল। এর পর র‌্যাম্প মডেলদের মতো করে হেঁটে এগিয়ে আসলো। নাভিদ উসখুস করছে।

নাভিদ: কী ব্যাপার ঘুমোসনি?

পূর্ণতা: হাহাহা। রাত কি ঘুমানোর জন্য?

নাভিদ: আর এসব কী পরেছিস?

পূর্ণতা আবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে। কোমরে হাত রেখে বলবে, কেন ভালো লাগছে না।

নাভিদ অন্য দিকে তাকালো।

নাভিদ: এসব পরে কোনও লাভ হবে না।

পূর্ণতা: আমাকে দিয়ে কি মডেলিং হবে না বলতে চাও?

নাভিদ: মডেল হতে হলে আরও অনেক কিছু লাগে।

পূর্ণতা আবার ঝুঁকে আসবে নাভিদের দিকে।

পূর্ণতা: আর কী লাগবে বলো না? আমি তো সব দিতে তৈরি।

নাভিদ: আর আর..(ঢোক গিললো) অনেক কিছু জানতে হয়।

পূর্ণতা: কী কী জানতে হয় (গলার স্বর করে আসবে)

নাভিদ: তু তু তুই যা তোর রুমে। মা আসবে। দেখলে।

পূর্ণতা: খালা ঘুমুচ্ছে।

নাভিদ: উঠে পড়বে।

পূর্ণতা: উঁহু।

নাভিদ: মানে কি, আজব তো।

পূর্ণতা: আগে বলো আমাকে দিয়ে হবে কি হবে না।

নাভিদ: আচ্ছা বাবা হবে হবে। এখন যা।

পূর্ণতা: আমাকে দিয়ে সব হবে?

নাভিদ: হুম। হবে। বললাম তো।তোকে দিয়েও ফটোশ্যুট করাবো। বিজ্ঞাপন বানাবো।

পূর্ণতা: (নাটুকে সুরে) অডিশন নেবে না?

নাভিদ: আবার কীসের অডিশন। কী কী কীকক..বলতে চাস তুই।

পূর্ণতা: আমি কিছু বলতে চাই না। আমি চাই শুধু..।

নাভিদ: আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। এখন যা।

পূর্ণতা: আহা তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?  একটু সাজগোজ করেছি, অডিশন নিতে দেবে না? মাত্র একটা ডায়ালগ দেব। আর না।

নাভিদ: ও  ও ওকে, কী ডায়ালগ দিবি দে।

পূর্ণতা নাভিদের খুব কাছে আসবে। নাভিদের গলা জড়িয়ে ধরবে। নাভিদ ঘাবড়ে গেলেও সরে যাবে না। সে দুহাত দিয়ে পূর্ণতার বাহু ধরে তাকে মৃদু ধাক্কা দিতে চাইবে। কিন্তু পারবে না। পূর্ণতা নাভিদের খুব কাছে মুখ আনবে।

পূর্ণতা: ভালোবাসি। আমি শুধু একটা কথাই বলবো, তোমাকে আমার চাই। তোমাকে আমার পেতে হবে।

নাভিদ: এ এ একটা কথা বলবি বলেছিস।বেশি বেশি বলা হয়ে যাচ্ছে।

পূর্ণতা: আহা! হোক না একটু বেশি বেশি! 

নাভিদ: মাকে ডাক দেব বলে দিলাম।

পূর্ণতা: যাকে খুশি তাকে ডাকো। আমি আজ তোমাকে আদায় করে নিবো। ষোলো আনা।

পূর্ণতা নাভিদকে চুমু খাওয়ার জন্য মুখ এগিয়ে আনবে।

ইফেক্ট। ছায়া। বাতাস। পূর্ণতার চুল উড়ছে। নিশ্বাসের শব্দ। দুইজোড়া পা।

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

 

দৃশ্য-৪৪

ইনডোর। নাভিদ জেরিনের অফিস।

জেরিন তার অফিসে বসে কম্পিউটারে কাজ করছে। নাভিদ ঢুকলো। তাকে উসখোখুশকো দেখাচ্ছে। জেরিন একবার দেখে কাজে মন দিল।

জেরিন: স্যরি।

নাভিদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।

জেরিন: (নাভিদের দিকে তাকিয়ে) ওই দিনের জন্য স্যরি বললাম। মেজাজ টেজাজ ভালো ছিল না।

নাভিদ: ও।

জেরিন: একটা কাজ এসেছে।

নাভিদ: ও।

জেরিন: কক্সবাজার যেতে হবে। ক্লায়েন্ট সি বিচ চাচ্ছে।

নাভিদ: ভালো তো।

জেরিন: কী শরীর খারাপ নাকি। কথা বলছো না যে।

নাভিদ: হুম। মাথা ধরেছে।

জেরিন: তোমারতো এটা পুরোনো ব্যথা। আজ আবার যাবে নাকি, ডক্টরের কাছে। আমি নিয়ে না গেলে তো যাও না।

নাভিদ: নাহ। ভালো লাগছে না।

জেরিন:  কেন, কী হয়েছে। শিরিনের সঙ্গে ঝগড়া।

নাভিদ জেরিনের দিকে বিমর্ষ দৃষ্টিতে তাকালো। কিছু বললো না।

জেরিনের ফোন আসবে।ফোন করেছে নাভিদের মা।

জেরিন: হ্যালো হুম খালাম্মা।

নাভিদের মা: আজ একটু সন্ধ্যায় আসিসতো। আমি আছি মহা ঝামেলায়। বাসায় গেস্ট আসবে।

জেরিন: কারা আসবে।

নাভিদের মা: (ফিসফিস) তুই আবার কাউকে বলিস না। ওই আমার বোনের মেয়েটার জন্য সম্মন্ধ এসেছে। ছেলেরা আসবে দেখতে। আমি বলেছি, দেখবে যখন সবাই আসুক। একটু খাওয়ার দাওয়াও হয়ে যাক।

জেরিন: ওই মেয়ের মাথায় তো আপনার ছেলের ভূত ঘুরছে।

নাভিদ: কে ?

জেরিন: হ্যা মা, ঠিকাছে। আসবো। বাজার কী আনতে হবে একটু আগে বলে দেন।

মা: আহ.. কী যে শান্তি শান্তি লাগছে।

 

জেরিন: তোমার মা।তোমার ওই বোনটার বিয়ের ব্যাপারে।

নাভিদ: মানে কি! বিয়ে কেন আবার। আমি বাপু।

জেরিন: এত খুশি হয়ো না। তোমার সঙ্গে না। ওকে পাত্রপক্ষদেখতে আসবে।

নাভিদ: অ্যাঁ! ও আচ্ছা। ভালো তো। সন্ধ্যায় যাবে বাসায়?

জেরিন: হুম। কেন কোনও সমস্যা?

নাভিদ:  নাহ। আচ্ছা, একটা বাসা খুঁজে দিও তো।

জেরিন: বাসা দিয়ে কী হবে।

নাভিদ: শিরিনের জন্য। ওর থাকার জায়গা নেই।

জেরিন: তোমার বাসা তো খালি। দুজন মাত্র মানুষ। একটা রুম দিয়ে দাও।

নাভিদ: আরে না। রুমতো নাই। একটা রুম ছিল, সেটা তো পূর্ণতার দখলে।

জেরিন: তাহলে ওকে তাড়াতাড়ি ভাগাও।

নাভিদ: আরে নারে। এ কথা বললেও আম্মা আমাকে আছাড় দেবে।

জেরিন: এখন বলো। কী করবো। মডেল শিরিনকেই নিচ্ছি।

নাভিদ: ও।

জেরিন: ও? আর কিছু বলবে না?

নাভিদ: কিছু বললেই তো বলবে আমি বাড়াবাড়ি করছি।

জেরিন: তবে পেমেন্ট তেমন দেওয়া যাবে না।

নাভিদ: ঠিকাছে। ওসব তুমি সামলাবে। তবে এবার ছবি তুলবে কে? তোমার ওই কাজিন।

জেরিন: আরশাদকে বলবো। ও একটু ঝামেলায় আছে।

নাভিদ: ওকে বিয়ে করে ফেলো না।

জেরিন: হুম সেটাই ভাবছি। ও আমাকে পছন্দ করে খুব।

নাভিদ: তাই নাকি। কতটা পছন্দ করে।

জেরিন: অনেকই তো মনে হয়।

নাভিদ: বলা যায় না। ছেলেদের বিশ্বাস নেই। সাবধান।

জেরিন: না না তোমার মতো একটা লাফাঙ্গাকে বিশ্বাস করতে পারলে ও কী দোষ করেছে।

নাভিদ: আমি আবার কী করলাম। তা ছাড়া আমাকেও বিশ্বাস করতে হবে না। বাই দ্য ওয়ে, এই লাফাঙ্গা শব্দটার মানে কী।

জেরিন:  জানি না। শিরিনকে জিজ্ঞেস করে নিও। আমিতো একটা যত্তসব।

কথাটা শুনে নাভিদের মধ্যে একটা হতাশার ভাব ফুটে উঠবে।

নাভিদ: আমি চললাম।

জেরিন: কেন! কী হলো আবার। আরে আমি দুষ্টুামি করে বলেছি।

নাভিদ: তুমি নিজেই কিন্তু আমাকে একশবার যত্তসব বলেছো। কই আমি তো কখনও এমন করিনি।

জেরিন: আমি তো এজন্যই শুরুতেই স্যরি বললাম। এখন কী করতে হবে। কান ধরে ওঠবস করতে হবে?

নাভিদ: করতে হবে।

জেরিন: ওকে।

জেরিন উঠে গিয়ে কান ধরে এক বার উঠবে বসবে। দ্বিতীয়বার বসার আগে নাভিদ ধরে ফেলবে। জেরিন তখনও কান ধরে রেখেছে। নাভিদও ছাড়ছে না। এমন সময় আরশাদ ঢুকে পড়বে।

 

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

দৃশ্য-৪৫

অফিস। আগের দৃশ্যের ধারাবাহিকতায়।

আরশাদ বিব্রত, বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। জেরিন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে।

জেরিন : এমন এক সময়ে এন্ট্রি দিয়েছিস না। একেবারে পারফেক্ট।

আরশাদ: হেহে। আমি ভাবলাম। আসলে স্যরি। আমার নক করা…।

জেরিন: ওই! নক করবি মানে! এটা অফিস। এখানে আমরা কি ইটিশ পিটিশ করতে বসে আছি!

আরশাদ: আমি আসলে বলতে এসেছি যে আমার কাজটাজ শেষ। অ্যাম্বাসিতে যেতে হবে আগামী সপ্তাহে। এর মধ্যে ফ্রি আছি। এখন তোমরা যদি চাও তো আমি..।

নাভিদ: হুম। আরে এটাই তো বলছিলাম। আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। তুমি যাচ্ছো আমাদের সঙ্গে।

আরশাদ: ওয়াও। গ্রেট। আমি তাহলে ব্যাগ গুছিয়ে নিই। জেরিন, তুই কি যাবি এখন?

জেরিন: নারে আমাকে আবার নাভিদের বাসায় যেতে হবে। খালাম্মাকে  হেল্প করতে হবে। গেস্ট আসবে।

নাভিদ: হে হে। আমার মায়ের পেটের না হলেও একেবারে বোনের মতো তো।

জেরিন: একটা লাত্থি মারবো শয়তান।

আরশাদ মনে মনে খানিকটা ব্যথিত।

 

নাভিদ: একটা কাজ করতে পারি। আমরা দুজন বসে ফটোশ্যুটের প্ল্যানটা সেরে ফেলতে পারি। আর এর মধ্যে যদি আরেকটা কাজ বাগানো যায়, তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি।

আরশাদ: আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি।

জেরিন: হুম হুম।বের কর বের কর। আইডিয়া আর প্রেম  ভেতরে পুষে রাখতে নেই।

আরশাদ: হে হে। তাহলে শোনো। সেটা হলো আমরা কক্সবাজারে গিয়ে একটা স্যাম্পল টিভিসি শ্যুট করে ফেলতে পারি। তারপর সেটাকে ফেসবুক আর ইউটিউবে আমাদের প্রমো হিসেবে ছেড়ে দিলাম।

জেরিন: কিন্তু প্রডাক্টটা কীসের হবে।

আরশাদ: সেটা একটা হলেই হলো। একটা টাচি দেখে স্ক্রিনপ্লে লাগবে। স্টোরিবোর্ডটা আমি রেডি করে দিতে পারবো।

জেরিন: তুই আর কী কী পারিস রে!

আরশাদ: হে হে। নাভিদের মতো মেয়ে পটাতে না পারলে তো বাকি সব বৃথা রে।

নাভিদ: না না ওটাও পারবে।কোনও ব্যাপার না। খুব সহজ। শিখিয়ে দেবো। নাও গো অন ডুড।

আরশাদ: এখন আপাতত নিজেরা কম খরচের মধ্যে নিজেদের ক্যামেরা আর লাইট..।

তিন জনের আলোচনা চলতে থাকবে। কিছু দৃশ্যদেখানো যাবে টাইম ল্যাপস বোঝাতে। ব্যাগ গোছানো হচ্ছে। আরশাদ তার ক্যামেরা পরীক্ষা করছে।জেরিন তার জামা ঠিকঠাক করছে। নাভিদের মা জেরিনকে এটা ওটা গুছিয়ে দিচ্ছে। আরশাদের মা জেরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরশাদ আর জেরিন একসঙ্গে ঘর থেকেবের হচ্ছে। পেছনে আরশাদের মা হাসিমুখে দেখছে। জেরিনের বাবার মুখে চিন্তা।

 

 

 

 

দৃশ্য-৪৬

রাত। নাভিদের ঘর। পূর্ণতা, নাভিদ ও নাভিদের মা। নাভিদ ও জেরিনের ফোনালাপ।

 

পূর্ণতা রাগে ফুঁসছে।

পূর্ণতা: (নিজে নিজে) আমিও যাব। আমাকে যেতেই হবে।

নাভিদের মা ঢুকবে।

মা: কীরে এত লম্ফঝম্ফ করছিস কেন।

পূর্ণতা: আমিও কক্সবাজার যাব খালা।

মা: ওমা! সেকিরে! তুই আগে বরং আমাদের গ্রামের বাড়ির পুকুরটা দেখে আয়। তারপর সমুদ্রে যাস।

পূর্ণতা: না খালা আমি যাবই। ওরা ওখানে গিয়ে মজা করে ঘুরবে।

নাভিদ আসবে।

নাভিদ: আ আ আমরা ঘুরতে যাচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি।

পূর্ণতা: (প্রচণ্ড রাগ) আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি?

নাভিদ: না মানে।

পূর্ণতা: জাস্ট লিভ মি অ্যালোন।

মা: অ্যাঁ তোদের আবার কী হলো!

পূর্ণতা: (নাভিদের মায়ের দিকেচোখ বড় বড় করে) অনেক কিছু! অনেক কিছু।

মা: আচ্ছা আচ্ছা যা যা সমুদ্রে যা। সমুদ্রে গিয়ে দুটো ডুব দিয়ে আয় মা।

পূর্ণতা: সমুদ্রে ডুব দিতে যাব নাকি কাউকে ডুবিয়ে মারতে যাব, সেটা সময় বলেদেবে। তবে আমি কাউকে একা ছাড়ছি না।

নাভিদ: আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মা আমি মনে হয় শেষ পর্যন্ত..।

পূর্ণতা: শেষ পর্যন্ত কী! কী বলো।

নাভিদ: না, কিছু না। আমি যাই ব্যাগ গুছাই।

নাভিদ ফোন দেবে জেরিনকে।

জেরিন: কী।

নাভিদ: অ্যাই সমস্যা হয়ে গেলো তো। ও তো পিছু ছাড়ছে না।

জেরিন: ও। আমি জানতাম এমনই হবে। এখন আমরা যাচ্ছি কাজে।সেখানে গিয়ে আবার। 

নাভিদ: উফফ কোন দুখে যে আমি..।

জেরিন: কোন দুখে তুমি… কী করেছো আবার।

নাভিদ: (বিব্রত) না না। কিছু না। মানে কোন দুখে যে তাকে কক্সবাজার ট্যুরের কথা বলতে গিয়েছিলাম।

জেরিন: আগে না বললে পরে জানতো। এখন কোনও ভাবে বুঝাও। ওকে নিয়ে যাওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

 

নাভিদ: আমি তো ওকে.. ।

পূর্ণতা এসে দাঁড়াবে সামনে।

নাভিদ: আমি তো ওকে বলেই দিয়েছি যে এত টাকা ভাড়া দেওয়ার চাইতে নিজেরাই কিছু লাইট কিনে ফেলি।

জেরিন: কী কীসের লাইট।

নাভিদ: সঙ্গে যদি একটা ট্রলি কিনে ফেলা যায়, তাহলে  আর চিন্তাই নেই।

জেরিন: ও বুঝেছি, ঠিকাছে তুমি অ্যাক্টিং করতে থাকো। আমি রাখলাম।

নাভিদ: আচ্ছা আচচ্ছা,, হ্যাঁ হ্যাঁ। ওকে ওকে। রাখলাম।

নাভিদ: (পূর্ণতাকে) কিছু বলবি।

পূর্ণতা: না ঠিকাছে। কিছু না। আমাকে ফাঁকি দিয়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববে না। তা না হলে সবাইকে বলে দেব। সব কিছু বলে দেব।

পূর্ণতা চলে যাবে। এমন সময় নাভিদের ফোনে কল আসবে শিরিনের। শিরিনকে দেখা যাবে না। শুধু তার গলা শোনা যাবে।

নাভিদ: হ্যাঁ অ্যাই তোমার কতক্ষণ লাগবে। রাত তো  অনেক।

শিরিন: (ভয়ার্ত, কাঁদছে) নাভিদ! নাভিদ!

নাভিদ: কী হয়েছে শিরিন!

শিরিন:  নাভিদ! অনেক বড় বিপদ হয়ে গেছে! আ আ আমি কী করবো এখন! (কাঁদছে)।

 

 

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

দৃশ্য-৪৭

শিরিনের বাসা। নাভিদ আসবে।

 

নাভিদ কলিং বেল চাপলো। শিরিন দরজা খুললো। তার চেহারায় ভয়। হতভম্ব। তার জামায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।

 

শিরিন: নাভিদ নাভিদ!

শিরিন ভয়ে নাভিদকে জড়িয়ে ধরলো।

নাভিদ: কী কীক কী হয়েছে!

শিরিন: মিতা! মিতা!

শিরিন ইশারায় দেখালো। নাভিদ এগিয়ে গেলো। একটা মুখ ঢাকা লাশ পড়ে আছে বিছানার ওপর।

শিরিন: আমি! আমি রাতে বাসায় ফিরে দেখি..।

 

নাভিদ ভয় পেয়েছে। সে চেষ্টা করছে স্বাভাবিক হতে।

নাভিদ: আমার মনে হয় পুলিশকে। না.. না। ওহ। কী করি! তোমার গায়ে রক্তের দাগ কেন।

শিরিন কিছুটা সময় নিয়ে ধাতস্ত হবে।

নাভিদ দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিলো।

শিরিন: আমি ভেবেছি হয়তো বেঁচে আছে। হাসপাতালে নিলে ভেবেছি। কিন্তু তার আগেই।

 

নাভিদ  লাশের কাছে এসে চেক করার চেষ্টা করবে। মুখের সামনে থেকে পর্দা সরাতে গিয়েও পারবে না। হাত কাঁপবে। হাত দিয়ে কিছু ধরতে গিয়েও ধরলো না। হাতের ছাপ পড়ে থাকবে এ চিন্তা তার। কাপড়ে রক্তের ছোপ। একটু খানি উল্টে দেখলো। বুক বরাবর ছুরি ঢোকানো। জামা কাপড় ছেড়া। কিন্তু মুখদেখলো না।

 

নাভিদ: তু.. তুমি আগে কাপড় বদলাও। এখুনি!

নাভিদ ফোন বের করলো।

শিরিন: কাকে ফোন দিচ্ছো!

নাভিদ: না না কাউকে না। থাক।

নাভিদ ফোন রেখে দিল। এদিক ওদিক তাকালো।  মাথা চুলকালো কিছুক্ষণ।

 

শিরিন: এখন কী করবো। আমি ওর কাউকে চিনি না পর্যন্ত।

নাভিদ: ওয়েট ওয়েট। ভাবছি আমি। তো তো তোমাকে যা বলছি ওটা আগে করো। কাপড় পাল্টাও। তারপর তোমার যা যা আছে সব গোছাও। একটা সুতো যেন না থাকে।

শিরিন: কিন্তু.,. কিন্তু ওকে এভাবে।

নাভিদ: ওর চিন্তা করে লাভ নেই। ও চলে গেছে।

শিরিন দ্রুত তার রুমে যাবে। নাভিদ ফোনবুক হাতড়ালো কিছুক্ষণ। জেরিনের নম্বরটা বের করলো। ডায়াল দিয়ে আবার কেটে দেবে। বুঝতে পারছে না তাকে কল দেবে কিনা।

শিরিন সব গোছাচ্ছে আর চোখ মুছছে। নিজের রক্তমাখা জামাটা ফেলে দিতে গিয়ে দিলো না। পলিথিনে মুড়িয়ে ব্যাগে ঢোকালো।

 

নাভিদ কল দিলো জেরিনকে।

জেরিন: হ্যালো। হ্যাঁ, কোথায় তুমি। গাড়ি নিয়ে আসছি তোমার বাসায়।

নাভিদ: আ ইয়ে, না ঠিকাছে। আমি একটু কাজে বাইরে এসেছি। কাছেই আছি।

জেরিন: মানে কী!

নাভিদ: ইয়ে তুমি এক কাজ করো। ধানমণ্ডি চলে আসো।

জেরিন: উফফ। তুমি কোথায়! শিরিনের কাছে?

নাভিদ: ইয়ে আরে না, না। ও আছে আশেপাশেই থাকে। আমি কিছু কেনাকাটা করেই ওকে বের হতে বলবো। তোমরা আসো।

জেরিন: নাভিদ, আমি জানি তুমি ওর বাসায়। তোমার মিথ্যে আমি ধরতে পারি।

নাভিদ: আরে না। কী যে বলো। শোনো একটা বিপদ হয়েছে। তোমাকে ফোন দিলাম।

জেরিন ফোন কেটে দিলো।

নাভিদ: হ্যালো হ্যালো।

 

শিরিন ব্যাগ নিয়ে সামনে দাঁড়ালো।

নাভিদ: সব নিয়েছো?

শিরিন মাথা নাড়লে।

নাভিদ: ওকে। কিন্তু এখন লাশটার। একটা কিছু..।

 

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।

 

 

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

দৃশ্য-৪৯

আগের ধারাবাহিকতায়।

 

কলিং বেল বাজছে। নাভিদ ইশারায় শিরিনকে তার রুমে চলে যেতে বললো। শিরিন গেলো না।

নাভিদ কী হোলে চোখ রাখলো। লাবলু দাঁড়িয়ে আছে।

লাবলু: কই দরজা খোলো। আর কতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবে।

শিরিন এগিয়ে এসে নাভিদের কানে কানে কী যেন বলবে।

নাভিদ কাশির মতো শব্দ করবে।

নাভিদ: কে!

লাবলু: ও.. খদ্দের আছে বলবে না। ওকে ওকে। তা একটু তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয় স্যার। আমার আবার একটু বিজনেস আছে।

নাভিদ: দেরি হবে। পরে আসুন।

লাবলু: কত দেরি হবে? দশ মিনিট?

নাভিদ: আধা ঘণ্টা পরে আসো।

লাবলু: আধা ঘণ্টা! উরেব্বাস! খুব কনফিডেন্স দেখছি দাদা। তা আপনি তো আমাকে ফোন করেননি নিশ্চয়ই। মিতার সঙ্গে দোস্তি করে ফেলেছেন নাকি।

শিরিন আবার তার কানে কানে বলবে।

নাভিদ খুব বিব্রত।

নাভিদ: হুম। আমাদের আগের পরিচয় আছে। আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বক বক করতে পারবো না। পরে আসুন।

লাবলু: তর সইছে না দেখি স্যারের। ওক্কে, পরেই আসবো।

লাবলু চলে যাবে। আবার কী মনে করে এগিয়ে এসে দরজায় কান পাতবে।

ভেতরে শিরিনের হাসির শব্দ শুনবে। এরপর সেও হাসতে হাসতে চলে যাবে।

 

শিরিন হাসি থামিয়ে বড় করে দম নেবে। নাভিদের চোখে রাজ্যের প্রশ্ন।

শিরিন: এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। মিতা.. মিতা.. মিতা একটা.. ইয়ে.. ওই টাইপ মেয়ে ছিল। আমি শুধু ওর সঙ্গে থাকতাম।

নাভিদ: না মানে। আমি তো তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। ইটস ওকে ইটস ওকে। এখন…।

শিরিন: এখন কী করবো।

নাভিদ: আমাদের বের হওয়া দরকার। কিন্তু কিন্তু। তার আগে নিশ্চিত করতে হবে যেন আমাদের কিছু এখানে পড়ে না থাকে।

শিরিন: আমি তো সবই নিয়েছি।

নাভিদ একটা টাওয়েল নেবে। সেটা ভেজাবে। দরজার নব, টেবিল, টেবিল এসব মুছবে।

শিরিন: কী করছো?

নাভিদ: ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছছি। এক কাজ করো, তুমি বের হয়ে যাও। আমি পরে বের হই।

শিরিন: আ আমার ভয় করছে।

নাভিদ উঠে এসে শিরিনের দুই বাহু ধরবে।

নাভিদ: শোনো ভয় পেও না একদমই। খুব স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে যাবে তুমি। বুঝতে পারলে? নিচে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করো।

শিরিন উপর-নিচ মাথা নাড়লো। শিরিন বের হয়ে গেলো।

নাভিদ সব দেখে শুনে একটা কাপড় দিয়ে দরজা ভেতর থেকে লক করলো। তারপর বাইরে এসে নিজের গেঞ্জি দিয়ে হাত পেঁচিয়ে দরজা লক করলো।

 

শিরিন বের হয়ে রাস্তা ক্রস করতেই দেখলো লাবলু বিল্ডিংয়ে ঢুকছে। শিরিন দ্রুত তার ফোন বের করে নাভিদকে কল দিলো।

নাভিদ খুব সাবধানে দরজা লক করলো। বের হলো। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় লাবলুর মুখোমুখি। লাবলু তাকে দেখলো। নাভিদ খানিকটা বিব্রত হলেও সামলে নিলো। তারপর ফোন রিসিভ করলো। লাবলু এগিয়ে গেল মিতার রুমের দিকে।

 

লাবলু লাশ দেখে চমকে গেলো। ঢোক গিলল। দ্রুত এগিয়ে আবার দেখার চেষ্টা করলো নাভিদ আছে কিনা। শিরিনের রুমে গেল। সে নেই। রুমের এক কোণে একটা খাম পড়ে থাকতে দেখলো। তাতে শিরিনের ফটোশুটের কিছু ছবি। খামটা সে রেখে দিল পকেটে। মিতার রুম খুঁজে টাকা-পয়সা ও কিছু গয়না পেলো। সব পকেটে ভরলো। মিতার ফোন হাতে নিলো। সেখানে মিতার সঙ্গে শিরিনের সেলফি দেখতে পেলো। ছবিটা মিতার রুমেই তোলা। লাবলু ক্রুর হাসি হাসলো।

এরপর নাভিদের মতো সেও দরজার নব মুছে ধীরপায়ে বের হয়ে গেলো।

 

 

দৃশ্য-৫০

রাত। রাস্তা। গাড়িতে চারজন। ড্রাইভ করছে আরশাদ। সঙ্গে নাভিদ জেরিন শিরিন।

 

আরশাদ: আমার তো খিদে লেগে গেলো। কোথায় দাঁড় করানো যায়।

জেরিন: হুম আমারও।

জেরিনের মুখ ভার।

নাভিদ তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পারছে না।

গাড়ি এগিয়ে চলছে।

সময় গেলো খানিকটা।

শিরিনের ফোন বেজে উঠলো।

শিরিন: হ্যালো।

অপরপ্রান্ত: জ্বি আমি ধানমণ্ডি থানা থেকে বলছি। আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে।

শিরিন: জ্বি জ্বি, কেন।

অপর: জ্বি একটা মার্ডার হয়েছে। সম্ভবত আপনার পরিচিত কেউ।ফেসবুকের নাম উড়াল পাখি। আসল নামটা এখনও ট্রেস করতে পারিনি।  চিনতে পেরেছেন?

শিরিন: কেক.. কে কে!

অপর: নামটা আপাতত বলতে পারছি না। তবে তার ফেসবুকে আপনাকে ট্যাগ করা কিছু ছবি আমরা পেয়েছি। আপনার প্রোফাইল থেকে আপনার নম্বর বের করা হয়েছে।

শিরিন: ওহ! কে হতে পারে। আমি তো বুঝতে পারছি না।

অপর: আপনি এসে একটু দেখে যাবেন?

শিরিন: না না, আমি কী করে আসবো। আমি জরুরি কাজে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। ফিরতে দেরি হবে।

অপর: কোথায় যাচ্ছেন?

শিরিন: কক্সবাজার।

অপর: ওকে। ঠিকাছে। আমরা কক্সবাজার থানাকে ইনফর্ম করছি। জাস্ট কিছু প্রশ্ন করা হতে পারে আপনাকে।

শিরিন: জ্বি জ্বি আচ্ছা।

বিমর্ষ মুখে ফোনটা রাখবে শিরিন। গাড়ি এগিয়ে চললো। নাভিদ তার দিকে তাকিয়ে ভরসা দেওয়ার ভঙ্গি করলো। জেরিন কপাল কুঁচকে নাভিদকে দেখলো।

নাভিদ: (জেরিনের দিকে না তাকিয়েই চাপা স্বরে বললো) আমার সঙ্গে তোমার পরিচয়  কমসে কম ১৫ বছরের। (এবার তাকালো) আমাকে এতদিনে তোমার বোঝা উচিৎ ছিল জেরিন।

জেরিন: (মাথা নিচু) কিছু পরিষ্কার না করলে কী করে বুঝবো।

পূর্ণতা: কী হয়েছে আবার!

নাভিদ কড়া চোখে পূর্ণতার দিকে তাকাবে।

পূর্ণতা: আমার দিকে এভাবে তাকালে কেন?

নাভিদ: তো কিভাবে তাকাবো?

জেরিন: আহা। বাদ দাও তো। আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।

শিরিন অন্যমনস্ক। তার মনোযোগ নেই কারো কথায়। আরশাদ গাড়ি থামালো।

আরশাদ: তার আগে আমার মনে হয় কিছু খাবার নেওয়া উচিৎ। এখানে একটু রেস্টও নেওয়া যাক।

জেরিন: আমি একটু নামি।

সবাই নামবে। নাভিদ বসে আছে। শিরিনও বসে আছে। নাভিদ নামলো।

নাভিদ: তুই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস।

জেরিন আর আরশাদ দূর থেকে ইশারায় ডাকছে। নাভিদ হাত নেড়ে জানালো সে কিছু খাবে না।

এমন সময় শিরিনের চিৎকার:

শিরিন: নাভিদ!

নাভিদ দৌড়ে গেল

নাভিদ: কী হয়েছে!

শিরিন: (ব্যাগ হাতড়াচ্ছে) আমার! আমার! ছবিগুলো ফেলে এসেছি!

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ৪১ থেকে দৃশ্য ৫০

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!