class="post-template-default single single-post postid-24105 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

শিশুতোষ সায়েন্স ফিকশন ভূতের গল্প: ভবিষ্যতের ভূত

লিখেছেন ধ্রুব নীল

এক মাস ধরে সমীকরণটা জ্বালিয়ে মারছিল বিজ্ঞানের শিক্ষক নেপাল চন্দ্র নাথকে। ঘুমের মধ্যে মানুষের রূপ ধরে হানা দিত সূত্র। কাঁচুমাচু করে বলতো, ‘স্যার আমার একটা গতি করেন। এত প্যাঁচ ভালো লাগে না।’ স্যার ধমকে বলতেন, ‘তোমার গতি করে দেশ-দুনিয়ার কী লাভ শুনি!’ সমীকরণটা তখন পকেট থেকে একটা ‘এক্স’ বের করে বলতো, ‘এই এক্স-এর মান বের করতে পারলে দুনিয়া বদলে যাবে স্যার।’ তো একদিন আচমকা নেপাল স্যারের মাথা খুলে গেল। রাত বারোটায় ঝটপট কাগজ কলম বের করে মিলিয়ে ফেললেন সূত্রটা। সমীকরণের দিকে নেপাল স্যার তাকিয়ে রইলেন ডায়াবেটিস রোগীর মতো। সূত্রটা যেন আস্ত রসগোল্লা। এরপর নাকে এক ফোঁটা সরষের তেল মেখে গোটা তিনেক হাঁচি দিয়ে ঘুমুতে গেলেন তিনি। দীর্ঘদিনের গবেষণায় অবশেষে টাইম মেশিনের সূত্র আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানী নেপাল চন্দ্র।
শোঁ.. ফোঁস.. ভিপ ভিপ ঠুঁ ঠুঁ। বিচিত্র যান্ত্রিক শব্দে ঘুম ভেঙে গেল নেপাল স্যারের। ঘরভর্তি আলো। ড্রয়িং রুম থেকে আসছে। উঠে যেতেই দেখলেন গোল একটা কাঠের বাক্স থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে। সামনে কে যেন দাঁড়িয়ে।
‘কে রে!’
‘স্যাঁর কেঁমন আছেন? শঁরীর ভাঁলো?’
লিকলিকে প্রাণীটাকে দেখে সহজে ভয় পেলেন না নেপাল চন্দ্র। কষে একটা থাপ্পড় দিলেই ভর্তা হয়ে যাবে।
‘আমার শরীর তো ভাল, তোমার সর্দি লেগেছে নাকি?’
‘আঁজ্ঞে না স্যাঁর, আমি ভূত, তাই এঁভাবে কঁথা বঁলছি।’
‘ফাইজলামি ছেড়ে আসল কথা বল। কী চাই?’
তিন চোখা প্রাণীটা তার গলার কাছে আঙুল দিয়ে চাপ দিল। ভিøপ ভিøপ। গলা একদম পরিষ্কার। মনে হলো এক্ষুণি কবিতা আবৃতি শুরু করবে।
‘স্যার, আমি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি। আপনি যে সমীকরণটা তৈরি করেছেন, ওটা দিয়ে আমরা একটা টাইম মেশিন বানিয়েছিলাম। সেটাতে চড়েই অতীতে এসেছি।’
নেপাল চন্দ্রের বুক গর্বে ফুলে উঠলো। বিড়বিড় করে ‘ইন্টারেস্টিং, ইন্টারেস্টিং’ বললেন। তারপর হাই তুললেন।
‘স্যার একটা বিশেষ মিশন নিয়ে এসেছি।’
‘ভবিষ্যৎ থেকে এসেছো যখন মিশন তো থাকবেই। তা কিছু খাবে? ফ্রিজে খিচুড়ি আছে।’
‘স্যার আমাকে পারলে একটু পরিবেশবান্ধব এলইডি বাতির আলো দিন। টিউবলাইটের আলো খেয়ে পেটে গ্যাস হয়েছে।’
‘তাহলে আগে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে নাও এক গøাস। তা তোমার মিশনটা কী?’
‘দিন যত যাচ্ছে মানবজাতি বড়ই বেয়াড়া হয়ে উঠছে স্যার। প্রকৃতির তেরটা বাজিয়ে দিয়েছে।’
‘তা ঠিক তা ঠিক।’
‘তো স্যার, বনবাদাড় সব সাফ। গুহাগুলো হয়ে গেছে পর্যটন কেন্দ্র। বড় বড় পাহাড়েও বিশাল সব হোটেল মোটেল। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা স্যার। ভূতের থাকার জায়গা নেই। আমরা বড় কষ্টে আছি।’
‘এখন কী চাও?’
‘স্যার আমরা মানবজাতির বিনাশ চাই। আমি এসেছি মানুষদের ঘাড় মটকে দিতে। উপায় নেই। অতীতে এসে মানুষগুলোকে মেরে ফেললে ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে শুধুই ভূতের। সবুজ শ্যামল এই বাংলায় থাকবে ভূতের পাল।’
মেজাজ গরম তো হলোই, ভয়ও পেলেন নেপাল চন্দ্র। লিকলিকে ভূতটা আবার তাকে দিয়েই শুরু করবে না তো!
‘স্যার কিছু মনে না করলে আপনাকে দিয়ে শুরু করি।’
‘অ্যাঁ! ইয়ে! তুই দেখি মহাবজ্জাত ভূত। পিটিয়ে ভূত বানিয়ে ফেলবো!’
‘সেটা সম্ভব নয় স্যার। আপনি দয়া করে ঘাড়টাকে উঁচিয়ে ধরুন। মটকাতে সুবিধা হবে। আর ভূতরীতি অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী কোড পড়ে শোনাবে। আপনি চুপ থাকুন। হাঁউ মাঁউ খাঁউ.. মানুষের গন্ধ..।’
নেপাল চন্দ্রের মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। নিজেকে নয়, মানবজাতিকে রক্ষা করার টেনশনে পড়ে গেছেন। শেষে কিনা ভূতের হাতে প্রাণ যাবে বিজ্ঞানীর!
এমন সময় বুদ্ধিটা এলো! ছুট লাগালেন পড়ার টেবিলের দিকে। ধুম করে ড্রয়ারটা খুলে ভেতরে হাত দিতেই কাগজটা উঠে এলো। ঘটনা বুঝতে পেরে থমকে গেল ভূতটা। নেপাল চন্দ্র একগাল হেসে হাতের কাগজটা কুচি কুচি করে ছিড়ে ফেললেন। কী ভোজবাজি! ভূতটার পেছনে থাকা টাইম মেশিনটা ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল। ভূতটাও ধুম করে গায়েব।
কী ঘটলো? আসলে কাগজটা ছিল টাইম মেশিনের সূত্র লেখা। সূত্রটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আর কেউ টাইম মেশিন বানাতে পারবে না, সুতরাং সূত্রমতে ভবিষ্যৎ থেকে ভূত আসাও সম্ভব নয়। নেপাল চন্দ্র আবারও খুশিমনে ঘুমাতে গেলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!