class="post-template-default single single-post postid-45570 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য রহস্য

ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য
ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য

তুমি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের রাস্তা দিয়ে হেটে বেড়াও, তবে সবকিছুর সাফহে আলাদা একটা জিনিস তোমার চোখে পড়বে। সেটি হলো স্ট্যাচু বা ভাস্কর্য । আর এর মধ্যে ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য জুড়ে আছে আলাদা এক রহস্যজগত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এরকম ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। সেইসব ভাস্কর্যের বেশীরভাগই হলো যুদ্ধের। প্রাচীনকালে বেশীরভাগ যুদ্ধ সংঘটিত হতো সামান্য কারন নিয়ে। লাইমানের কথাই ধরা যাক। লাইমান কাটলার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাধারন কৃষক। এক মেঘলা সকালে লাইমানের আলু খেতে হঠাৎ একটা শুকর ঢুকলো।

খোলা ক্ষেতে কোনো প্রাণী ঢোকা তেমন অস্বাভাবিক বিষয় না। কিন্তু ওটা দেখে লাইমান কাটলার গেলো ক্ষেপে! সে তার দু’নলা বন্দুক দিয়ে গুলি বসলো শুকরটা কে। তখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সানজুয়ানা দ্বীপ নিয়ে বেশ বিরোধ চলছিল।

ঘটনাচক্রে শুকরের মালিক ছিলো আইরিশ। আইরিশ ভদ্রলোকের নাম চার্লস গ্রিফিন। তো যাইহোক, চার্লস গ্রিফিন শুকরের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং ১০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু কৃষক লাইমান ১০ ডলারের বেশি দিতে মোটেও রাজি নয়। এ নিয়ে মামলা করা হলো। পুলিশ এসে কৃষক লাইমান কাটলারকে ধরে নিয়ে গেলো।

এই খবর পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিলিটারি পাঠালো। তারা সানজুয়ানা দ্বীপ দখল করার সুযোগের জন্য ওঁত পেতে ছিল। সুযোগ হাতে পেয়েই তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো। এবং সত্যি সত্যিই যুদ্ধ বেধে গেলো সামান্য শুকরের কারণে! ইতিহাসে এই যুদ্ধটি ‘পিগওয়ার’ নামে পরিচিত।

তখনকার যুদ্ধের সাথে এখনকার যুদ্ধের তফাৎ অনেক। সেসময় যুদ্ধ হতো তীর-ধনুক ও তলোয়ার দিয়ে। যোদ্ধারা ঘোড়ায় চেপে যুদ্ধ করতেন। দুনিয়াজুড়ে ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধাদের স্ট্যাচু বা ভাস্কর্য দেখা যায়। এগুলো কে ইংরেজি তে ‘ইকুয়েস্ট্রিয়ান স্ট্যাচু’ বলে।

ল্যাটিন শব্দ ‘ইকুয়েস’ শব্দ থেকে ‘ইকুয়েস্ট্রিয়ান’ শব্দটি এসেছে। ল্যাটিন ভাষায় ইকুয়েস মানে যোদ্ধা আর ইকাস মানে হলো ঘোড়া। এসব ভাস্কর্য নিয়ে প্রাচীন সব অদ্ভুত ধারণা প্রচলিত আছে। ধারনা কিছুটা এমন- ভাস্কর্যের ঘোড়াটির সামনের পা দু’টি যদি শূন্যে থাকে তবে বুঝতে হবে অশ্বারোহী যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গিয়েছিলেন। ঘোড়ার একটি পা শুন্যে থাকার অর্থ যোদ্ধা আহত হয়েছিলেন। আর যদি দু’টি পা মাটির সঙ্গে নামানো থাকে তবে বুঝতে হবে, যোদ্ধা অক্ষত অবস্থায় যুদ্ধ শেষ করেছিলেন।

এমন ধারণা বেশিরভাগ কৌতুহলপ্রিয় মানুষই বিশ্বাস করে। কিন্তু এ রহস্য কতটুকু সত্যি! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য -এর ইতিহাসের সাথে মিলে যায়। অবশ্য অমিলও রয়েছে। ১৮৫৩ সালে ল্যাফিয়েট পার্কে মেজর জেনারেল অ্যানড্রিও জ্যাকসনের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। ভাস্কর ক্লার্ক মিলস ঘোড়ার দু’টি পাই-ই শুন্যে বানিয়েছিলেন। অথচ অ্যানড্রিও জ্যাকসন মারা গিয়েছিলেন যক্ষ্মায়। তাতে অনেকেই মজা করে বলেন, “তবে কি যক্ষ্মার সাথে যুদ্ধ করেই মারা গিয়েছিলেন জেনারেল জ্যাকসন?”

তবে যে যাই বলুক অথবা যার ধারনা যেরূপই হোক না কেন, এসব ইকুয়েস্ট্রিয়ান ভাস্কর্য মূলত নির্মাণ করা হয় বীর যোদ্ধাদের সম্মানে। আর পর্যটকরা এই শিল্পগুন দেখে প্রাচীনকাল থেকেই মুগ্ধ হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও হয়ত পর্যটকদের মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভাস্কর্য জায়গা করে নেবে।

লিখেছেন: জুবায়ের ইবনে কামাল

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!