class="post-template-default single single-post postid-47523 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

ভূতের গল্প : ভূতের দল খেললো ক্রিকেট

ভূতের গল্প ভূতের ক্রিকেটগভীর রাত! চারিদিকে সুনসান নীরবতা। কিন্তু ভূতেদের রাজ্যে আজ ব্যাপক হৈ চৈ আর উৎসবের আমেজ! ভূতদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্যই আজ এ উৎসব। জমিদার নারায়ণ চক্রবর্তীর প্রাসাদটার মাঝখানের বিশাল মাঠে পাশের বাগান থেকেই সারি বেঁধে আসতে শুরু করেছে ভূতের দল।

 

ছোট-ভূত, বড় ভূত, মাঝারি ভূত, লম্বা ভূত, বেটে ভূত, বুড়ো ভূত- কোন ভূতই বাদ নেই। ভূতদের বসার জন্য কলাপাতা দিয়ে বানানো হয়েছে বিশেষ গ্যালারি। এই গ্যালারিতেই বসে খেলা দেখবে এই রাজ্যের সকল ভূত। জমিদার বাবুর পরিত্যক্ত এই প্রাসাদের মাঝখানের মাঠটিতেই অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। ফাইনালে বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট টিমের সাথে লড়বে বটগাছের ভূত ক্রিকেট টিম।

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই খেলা শুরু হবে। মাঠের চারপাশ গোলপাতা দিয়ে সাজানো! চার-ছক্কার সীমানা করা হয়েছে জার্মানি লতা দিয়ে। দুই দলের বাঁশপাতা ও বটগাছের পতাকা পতপত করে উড়ছে। চারিদিকে সাজ সাজ রব! তালপাতার ভুভুজেলায় কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম।

 

ফাইনালের এই ম্যাচটিতে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন বিশিষ্ট ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ চিমটা ভূত এবং হামদো ভূত। ভূতের রাজ্যে এই দুইজনের ব্যাপক সুনাম রয়েছে বিজ্ঞ আম্পায়ার হিসেবে। থার্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে রয়েছেন ল্যাংড়া ভূত। বিপত্তিটা এখানেই! ল্যাংড়া ভুতের পা’ বটগাছ থেকে বল পাড়তে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল। এ জন্যই খেলা শুরু হতে একটু দেরি হচ্ছে। তাকে নিয়ে অভিযোগ করেছেন বটগাছের ভূত ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক টেঙ্গু ভূত। ভূত ক্রিকেট একাডেমি (ভিসিসি) এর কাছে অধিনায়ক টেঙ্গু আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছেন, যেহেতু থার্ড আম্পায়ারের পা ভেঙ্গে গিয়েছিল বটগাছ থেকে পড়ে গিয়ে, সুতরাং তার সিদ্ধান্ত সঠিক না হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে! সে বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করে পক্ষপাতিত্ব করতে পারে।

 

 

অবশেষে ভূত ক্রিকেট একাডেমির (ভিসিসি) প্রেসিডেন্ট মি. ভেল্লা ভূত সিদ্ধান্ত দিলেন যে, ল্যাংড়া ভূতের সাথে যৌথভাবে থার্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন গগণ ভূত। ঝামেলা আরও একটা; বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক পাটলার ভূত এখনও মাঠে এসে পৌঁছায়নি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ব্যান্ড পার্টি নিয়ে রাজার পোশাকে মাথায় মুকুট নিয়ে মাঠে ঢুকে নাচানাচি করে দিল পাটলার ভূত। মনে হচ্ছে ভূতের রাজার আজ বিয়ে!

 

টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিল বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট টিমের অভিজ্ঞ অধিনায়ক পাটলার ভূত। টস শেষ হতে না হতেই তুমুল আকারে শুরু হয়ে গেল খেলা। চার-ছক্কায় মারকুটে ইনিংস খেলে চলেছে বাঁশবাগানের ওপেনার জুটি লিকলিকে ভূত ও  সুফোনি ভূত। এরই মধ্যে লিকলিকে ভূতের বিশাল একটি শর্টে বল চলে গেল জমিদার বাবুর প্রাসাদের ছাদে।

 

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছাদে যাওয়া সেই বলটি পাওয়া গেল না। বল না পাওয়া পর্যন্ত খেলা শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ অতিরিক্ত আর কোন বল নেই। বল যার কাছে থাকার কথা তিনি এখনও মাঠেই আসেননি। বলের রহস্য বের করার দায়িত্ব দেওয়া হলো ভনভন ভূতের। ভনভন ভূত মূলত ক্যামেরার কাজ করে থাকে। কোথায় কখন কি হচ্ছে তা নিমিষেই বের করে দিতে পারে ভনভন ভূত। ভনভন ভূতের দৃষ্টিতে ধরা পড়লো- এই ছাদে বসে খেলা দেখছিল একটি পিচ্চি ভূত। আর এই পিচ্চি ভূতই বল নিয়ে পালিয়ে গেছে।

 

শুরু হলো পিচ্চি ভূতের খুঁজে বের করার মিশন। ঘন্টাখানেক খোঁজাখুজির পর অবশেষে পিচ্চি ভূতের মরদেহ মিলল জমিদারের প্রাসাদের নিচের জঙ্গলের মধ্যে। বল’ও মিলল সেখানে। টুর্নামেন্টে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জানালেন বল লেগেই পিচ্ছি ভূতের মৃত্যু হয়েছে! ভূতের রাজ্যে এখন আনন্দের বদলে চলছে শোক! এ ঘটনায় মাঠে ১ ঘন্টার নীরবতা পালনের নির্দেশ দেওয়া হলো ভিসিসি’র পক্ষ থেকে।

 

নীরবতা শেষে আবারও শুরু হল খেলা। স্ট্রাইকে আছেন সুফোনি ভূত। বোলার চিম্বুক ভূতের বলটি সজোরে উপর দিয়ে মেরে সীমানার কাছে পাঠিয়ে দিল সুফোনি। আম্পায়ার আসলে বুঝতে পারেননি এটি চার না ছয়! মাঠে থাকা মূল আম্পায়াররা থার্ড আম্পায়ারের সাহায্যের জন্য আবেদন করলেন। থার্ড আম্পায়ার ল্যাংড়া ভূত ও গগণ ভূত দুজনেই গল্পে মগ্ন থাকায় বলের দিকে ভালো করে নজর রাখতে পারেননি তারা। দীর্ঘ ভাবনা-চিন্তার পর অবশেষে ল্যাংড়া ভূত সিদ্ধান্ত দিল- এটি চার’ও না আবার ছক্কা’ও না; এইটা হবে পাঁচ। এতে অবশ্য দুই দলের অধিনায়কই খুশি! ভাল একটি সিদ্ধান্ত। ভুভুজেলার শব্দে মুখর গ্যালারি জুড়ে।

 

ইতোমধ্যে কট আউটের আবেদন। কিন্তু বিজ্ঞ আম্পায়াররা ভুভুজেলার বিকট শব্দে ব্যাট-বলের সংযোগের শব্দ শুনতেই পায়নি। এবারও থার্ড আম্পায়ারের ডাক পড়ল সিদ্ধান্তের জন্য। এবারও হয়তো ল্যাংড়া ভূত ভালো একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।

ল্যাংড়া ভূত ব্যাটসম্যান সুফোনির উদ্দেশ্যে- যদি ব্যাটে বল লাগে তাহলে এটি আউট হবে না! আর বল না লাগলে আউট হবে।

 

সুফোনি ভূত: স্যার আসলে বলটি আমার ব্যাটেই লেগেছিল।

ল্যাংড়া ভূত: বল যে তোমার ব্যাটেই লেগেছিল- এইটার প্রমাণ কী?

সুফোনি ভূত: এই দেখেন স্যার আমার ব্যাটের এই পাশটি বল লেগে উঠে গেছে।

ল্যাংড়া ভূত সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে অবশেষে আউট দিয়ে দিলেন। সুফোনি ভূত কিছু বলতেই বটগাছের ভূত ক্রিকেট টিমের খেলোয়ারদের তোপের মুখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেন। এইভাবেই চরম উত্তেজনায় এগিয়ে চলছে ভূতের ক্রিকেট খেলা।

 

বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট টিমের মোট সংগ্রহ সাড়ে চল্লিশ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রান। এই রান তাড়া করে জেতা প্রায় অসম্ভবই বটগাছের ভূত ক্রিকেট টিমের। ১০ মিনিট বিরতি শেষ করে ব্যাটে নামল বটগাছের ভূত দলের ব্যাটসম্যান তিড়িক ভূত ও অধিনায়ক টেঙ্গু ভূত। খেলা ভালোভাবেই চলছে। কিন্তু মোটেই রান পাচ্ছে না টেঙ্গু ভূত ও তিড়িক ভূত। তিন ওভারের খেলা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২টি বল ওয়াইড আর তিনটি নো বল হওয়ায় রান হয়েছে ৫। ব্যাট থেকে আর কোন রান আসেনি। এর মাঝে পানি পানি বিরতির অনুমতি চাইলেন অধিনায়ক টেঙ্গু ভূত।

 

আম্পায়ার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে টেঙ্গু ভূতের আবেদিত পানি পানি বিরতির আবেদন মঞ্জুর করলেন। টেঙ্গু তার কোচ মি. দাং এর সাথে অনেক শলা-পরামর্শ করে আবারও মাঠে নামল। কারণ বাঁশবাগানের সাথে যদি বটগাছের ভূত হেরে যায়, তাহলে খুব বেশি বেমানান দেখায় বিষয়টি। তাছাড়া। পরপর দুইবার ফাইনালের কাপ বটগাছের ভূতরাই পেয়েছে। এবার পেলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে বটগাছের ভূত ক্রিকেট টিম।

 

বাঁশবাগানের ভূত ক্রিকেট দল এখন যেন হাওয়ায় ভাসছে। ওরা ওদের বিজয় নিশ্চিত জেনে বটগাছের ভূত ক্রিকেট দলের সদস্যদের কিছুই মনে করছে না। ওরা ওদের বোলারদের বসিয়ে রেখে ব্যাটসম্যান দিয়ে বল করাচ্ছে। যা বেশি বাড়াবাড়ি; ভাবছে টেঙ্গু ভূত। এর মধ্যে টেঙ্গু ভূত তিড়িক ভূতের সাথে আলোচনা করে নিল মাঠ থেকেই। এবার টেঙ্গু ভূত যেন ঐশ^রিক শক্তি পেল। কোন বলই তার মিস হচ্ছে না। বলে বলে শর্ট। চার কিংবা ছয়। দৌড়িয়ে রান নেওয়ার প্রয়োজনই হচ্ছে না। অবস্থা বেগতিক দেখে বাঁশবাগানের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক পাটলার ভূত বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করার পায়তারা করছে। একবার অফস্পিন আর একবার লেগস্পিন, একবার পেস তো আর একবার মিডিয়াম পেস। কিন্তু কোন ফর্মূলায় কাজে আসছে পাটলারের। পাটলার এবার চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল। এবার সুযোগ পেয়েও মনে হচ্ছে হারাতে হচ্ছে। কারণ ট্রফিটি ওদের নাগালেই ছিল। আসলে ওদের বটগাছের ভূত দলকে অবজ্ঞা করা উচিত-ই হয়নি।

 

দিশেহারা পাটলার আর উপায় দেখল না। পরাজয় ওদের অবধারিত। তবুও শেষ চেষ্টা করার জন্য সে বল হাতে নিল। দৈবক্রমে কিছু যদি হয়ে যায়। শেষ ওভার। জিততে হলে রান লাগবে ২৩। স্ট্রাইকে আছে বিধ্বংসী টেঙ্গু ভূত।  প্রথম বল ডট। পরের বলটি একদম সীমানার বাইরে চলে গেল। মাঠে দর্শকদের মাঝে চরম উত্তেজনা। এত ভালো খেলা ওরা কোনদিন দেখেনি। চারিদিকে হৈ হৈ রব। ৩ নম্বর বলটিতে চার হল। পাটলার বল হাতে দৌড়াচ্ছে। এবার ব্যাটে-বলে সংযোগ হলো না টেঙ্গু ভূতের। হাতে আছে দুটি বল। রান এখনও বাকি ১৩। তার মানে ট্রফির খুব কাছাকাছিই বাঁশবাগানের ভূতরা। পরের বলটিকে সজোরে হাঁকিয়ে ছয়ে পরিণত করলেন টেঙ্গু। এখন হয়তো ম্যাচটি ড্র হতে পারে। কারণ আর এক বলে রান লাগবে সাত। শেষ বলটি করতে অনেক সময় নিচ্ছে পাটলার। পাটলার ভূত একদম নার্ভাস হয়ে গেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এখন ওর মনে হচ্ছে ব্যাটসম্যান দিয়ে বল করানো উচিত হয়নি। কারণ ওখানে অনেক রান চলে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই শেষ বল করে ফেলল পাটলার। কিন্তু বিধিবাম! শেষ বলটি ওয়াইড। এখন শুধু একটি ছয় হলেই ম্যাচটি জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে টেঙ্গুরা। শেষ বলে সত্যিই সত্যিই টেঙ্গু ছয় হাঁকিয়ে দিয়ে পৌঁছে গেলেন জয়ের চূড়ান্ত সীমায়।

 

শেষ ওভারটিতে গ্যালারিজুড়ে নীরবতা সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ বলটি করার সাথে সাথেই টেঙ্গুকে কাঁধে করে বটগাছের সব দর্শক আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছে। মাঠ মূহুর্তেই ভরে গেল বটগাছের পাতায়। যারা প্রথম তিন ওভারেই ৫ রান পেয়েছিল তারাই কিনা এ ম্যাচটিতে জিতে গেল। তাও আবার কোন উইকেট না হারিয়েই। ফাইনালের এ ম্যাচটি জিতে গেল অধিনায়ক টেঙ্গু ভূতের একক নৈপুণ্যতায়। ভিসিসি’র প্রেসিডেন্ট পুরস্কার মঞ্চে আসলেন। ধারাভাষ্যকার নিমকি ভূত খেলার উল্লেখযোগ্য অংশ বর্ণণা করছে। রানার্সআপ ট্রফিটি মি. ভেল্লার হাত থেকে নিলেন পাটলার ভূত। তারপর টেঙ্গু ভূত নিলেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি।

সত্যিই ভূতের ক্রিকেট খেলা খুবই সুন্দর ও বৈচিত্রপূর্ণ।

ভূতের গল্পটি লিখেছেন: মনিরুল ইসলাম মনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!