মানব উন্নয়নে সেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা - Mati News
Thursday, December 25

মানব উন্নয়নে সেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা

মানব কল্যানের উদ্দেশ্য ব্যাক্তি সেচ্ছায় যে শ্রম দিয়ে থাকেন তাই সেচ্ছাসেবা। পরিবেশ রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং জরুরি মুহূর্তে দ্রুত সাড়া প্রদানের জন্য সক্রিয়তার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন সেচ্ছাসেবকরা। সেচ্ছাসেবা নিছক কোন শ্রম নয়, এর মাধ্যমে আমাদের ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি হয় এবং নেতৃত্ব প্রদানের গুণাবলি বিকশিত হয়। মানব উন্নয়নে সেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী তৈয়বা খানম।

নাইমা খাতুন

অজ্ঞতা দূরীকরণে কাজ করছেন সেচ্ছাসেবকরা

 প্রতিটি শিশুর মধ্যে আছে মহাবিশ্ব জয় করার স্বপ্ন ও স্পৃহা। শিশুরা ফুল হলেও সব ফুল যত্নে বেড়ে ওঠে না। অনাদরে অবহেলায় কিছু ফুল ঝরে যায় অকালে। সেইসব ঝরে যাওয়া ফুল কে পুনর্বাসনের জন্য এগিয়ে এসেছে একঝাঁক অদম্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন “পথশিশু পুনর্বাসন ও সহায়তা ফাউন্ডেশন (PPSF)”। অবহেলিত শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। “হাঁসবে শিশু ঘুচবে আঁধার, মুছবে ক্ষুধার দ্বার, পথের ধারে কেউ রবে না রাজ্য হবে তার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে “পথশিশু পুনর্বাসন ও সহায়তা ফাউন্ডেশন”। এই সংগঠনটি পরিচালনার সাথে যুক্ত বেশিরভাগ সদস্যই শিক্ষার্থী এবং সমাজসেবক। অস্বচ্ছল শিশুদের প্রয়োনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করা হয় । প্রতি শুক্রবার ও শনিবার পাঠদান কর্যক্রম চলে। শুধুমাত্র পাঠ্যবই এ সীমাবদ্ধ না থেকে সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। নৈতিক শিক্ষা ও খেলাধুলায় শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। একঝাঁক উদ্যমী স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণী সমাজের অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিশুদের চোখে স্বপ্ন দেখে নতুন দিগন্ত ছোঁয়ার।

শিক্ষার্থী : উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ,

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

সবুজ পৃথিবী গড়তে স্বেচ্ছাসেবকদের সচেতন প্রচেষ্টা

বরকত আলী

বর্তমান আধুনিকায়নের এই যুগে বহুল আলোচিত একটি বিষয় পরিবেশ সুরক্ষা। স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু গাছ লাগানো বা ময়লা পরিষ্কারের কাজ নয়, সামাজিক ও মানসিক সচেতনতাও ছড়াচ্ছেন। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনেক সময় গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে পরিবেশবান্ধব কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ করে এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ করে থাকে। যেমন প্লাস্টিক কেন বর্জন করতে হবে, শুধু গাছ লাগানো নয় বরং পরবর্তীতে গাছের যত্ন নেওয়া, সচেতনভাবে পরিবেশ দূষণ না করা এবং পরিবেশের জন্য হুমকি এমন কাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা প্রভৃতি— যা সমাজে স্থায়ী প্রভাব ফেলে। আর “পরিবেশ” কোনো আলাদা বিষয় নয়; এটা আমাদের নিত্যদিনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বা কাজের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। স্বেচ্ছাসেবকদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বা দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে স্থাপন করতে পারলে, এটার প্রভাব নীতিনির্ধারণ পর্যন্ত পৌছাবে। বর্তমানে তাদের প্রচেষ্টায় প্রতিটি ক্যাম্পাস থেকে প্রায় সব জায়গায় পরিবেশ নিয়ে অনেকটা সচেতন। এখন এটা শুধু অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আর চিন্তার এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেচ্ছাসেবকরাই।

শিক্ষার্থী ও সেচ্ছাসেবক

দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর

রক্তদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখে মানবতা

​মুহাম্মদ শাফায়াত হুসাইন

​রক্ত শুধু শরীরের জীবনীশক্তি নয়, এটি একে অপরের সঙ্গে সংযোগের এক গভীর মানবিক সেতুবন্ধন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ দুর্ঘটনা, জটিল রোগ বা প্রসবকালীন জটিলতার কারণে রক্তের জন্য হাহাকার করে।​ স্বেচ্ছায় রক্তদান সেসময় হতে পারে এক অনন্য আত্মতৃপ্তি। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নির্দ্বিধায় তিন-চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন এবং এটি ক্ষতিকর নয়। বরং নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সংক্রামক ব্যাধি আছে কি না, তা বিনা খরচে জানা যায়। মূলত, সেচ্ছাসেবকরা নিজেরা যেমন বক্তদান করেন তেমনি অন্যদেরও রক্তদানে উৎসাহিত করেন। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র অবলম্বন অন্যের রক্ত। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তি, যার ওজন ৪৫ কেজির বেশি, তিনিই রক্ত দিতে পারেন। ​দেশের বিশাল জনসংখ্যার মাত্র ১.৫ ভাগ লোক নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তের অভাবে একজন রোগীও মারা যাবে না। তাই, আসুন মহৎ কাজে সঙ্গ দেয়। 

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া।

সচেতনতা সৃষ্টিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা

তাসনিয়া তাবাচ্ছুম

সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা যেমন– স্বাস্থ্য সচেতনতা, নারী ও শিশু অধিকার, পরিবেশ রক্ষা, মাদকবিরোধী আন্দোলন, সড়ক নিরাপত্তা বা শিক্ষার প্রসার—এসব ক্ষেত্রে সরাসরি কাজ করেন। বিশেষত, স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে গিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে এসব সমস্যার নেতিবাচক দিক, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এছাড়াও তারা বিভিন্ন স্কুল, কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন এবং সহজভাবে সমাধানের পথ বোঝান। সর্বোপরি, বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, আলোচনা সভা, প্রচারপত্র বিতরণ ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা সামাজিক সংকটে স্বেচ্ছাসেবকরা জীবনঝুঁকি নিয়েও কাজ করে যান। তাদের পরিশ্রম ও মানবিক উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে এবং মানুষকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। এক কথায়, স্বেচ্ছাসেবকরাই সমাজে পরিবর্তনের নীরব শক্তি, যারা মানুষকে জানার, ভাবার ও বদলানোর পথে নিয়ে যান। 

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *