গরুর রোগ নিয়ে লিখেছেন দিলরুবা আফরোজ। গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। গৃহপালিত পশু রোগে আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আজ আমরা জানতো গরুর রোগের চিকিৎসা ।
গরুর রোগ : বাদলা
বাদলা মারাত্নক একটি গরুর রোগ । এটি সংক্রামক রোগ। এ রোগে পশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। সাধারণত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ ছড়ায়।
গরুর রোগের চিকিৎসা : লক্ষণ
- এ রোগে আক্রান্ত হলে পশু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়। অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই মারা যায়।
- তীব্র তাপমাত্রা থাকে।
- আক্রান্ত স্থান ফুলে ওঠে ও মাংসপেশি গরম হয়ে যায়।
- ফুলে ওঠা জায়গায় হাত দিয়ে চাপ দিলে শব্দ করে। শরীরে রক্ত চলচল বন্ধ হয়ে যায়।
- অনেক সময় ক্ষতের সৃষ্টি হয় আক্রান্ত স্থানে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
- পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করে। গরুর দেহের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজির জন্য ১০ হাজার ইউনিট হিসেবে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
- রোগের আক্রমণ দেখা দিলে পশুকে আলাদা জায়গায় রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।
গরুর ক্ষুরা রোগ
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ একটি সংক্রামক রোগ।
গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ
- শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে।
- জিহ্বা, মুখ, পায়ের খুরে ঘা দেখা দেয়।
- মুখে ঘা হওয়ার ফলে মুখ থেকে লালা ঝরে।
- পশু খোঁড়াতে থাকে ও খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
পটাশ মিশ্রিত পানি দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করে দিতে হবে। ১ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ফিটকিরি মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করে দিতে হবে। পশুকে নরম খাবার দিতে হবে।
গরুর তড়কা রোগ
স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এই রোগ বেশি হয়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ।
লক্ষণ
- দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।
- দেহের লোম খাড়া হয়ে যায়।
- নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।
- আক্রান্ত পশু নিস্তেজ হয়ে এক সময় মারা যায়।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া স্ট্রেপটোমাইসিন জাতীয় ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
লাম্পি স্কিন রোগ
- এটি একটি ভাইরাস জনিত চর্ম রোগ। যে সময়ে মশা মাছির অধিক বিস্তার দেখা যায় তখন এটি বেশি ছড়ায়।
- পশুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- খাবার খাওয়া কমে যায়।
- নাক, মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়।
- শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে থাকে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
আক্রান্ত গরুতে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে। গরুর ঘরের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা মাছি যাতে কামড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিউমোনিয়া
- স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে গরুর নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
- গরুর হালকা জ্বর ও কাশি হয়। কাশির তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে।
- নাক, মুখ থেকে সর্দি বের হয়।
- আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শ্বাসের সাথে শব্দ হয়।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
গরুর ঘর শুষ্ক রাখতে হবে। এছাড়া পশুকে জেনাসিনভেট বা কোট্রিমভেট জাতীয় ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
গরুর গলা ফোলা রোগ
- গরুর গলা ফোলা রোগ একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।
- পশুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- গলার নিচে, চোয়াল, বুক, পেটে পানি জমে ও ফুলে যায়।
- শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শ্বাসের সাথে ঘড় ঘড় শব্দ হয়।
- সংক্রমণ তীব্র হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: টবে করলা চাষ করবেন যেভাবে
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
- সালফানামাইড বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
- এ ছাড়া আক্রান্ত গরুকে আলাদা রাখতে হবে। বছরে নিয়ম করে পশুকে টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা গরুর রোগ সম্পর্কে জানলাম। গবাদি পশু রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।