class="post-template-default single single-post postid-50249 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

আমি তুমি সে নাটক : দৃশ্য ২১-৩০

আমি তুমি সে নাটক চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১ থেকে দৃশ্য ১০

আমি তুমি সে দৃশ্য ১১ থেকে দৃশ্য ২০

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব গল্প

 

দৃশ্য-২১

ইনডোর। ক্লায়েন্টের অফিস। জেরিন, নাভিদ, ক্লায়েন্ট। ক্লায়েন্ট একজন মধ্যবয়সী পুরুষ, স্যুটেড।

 

ক্লায়েন্ট: কী নাম বললেন আপনাদের হাউসের।

জেরিন: জ্বি, জেন মিডিয়া লি.।

ক্লায়েন্ট: জ্বি-জেন? নাকি শুধু জেন?

জেরিন: জেন মিডিয়া স্যার।

ক্লায়েন্ট: জেন মানে কী?

জেরিন ইতস্তত বোধ করছে।

নাভিদ: ওই যে জেনারেশন.. জেনারেশন থেকে জেন।

ক্লায়েন্ট: আইসি। তো আপনাদের পোর্টফোলিও নিয়ে এসেছেন?

জেরিন: ইয়ে স্যার, আমাদের কাজ মাত্র শুরু হলো। ভাবলাম আপনার প্রতিষ্ঠান দিয়েই আমাদের পোর্টফোলিওটা শুরু হোক। এই জন্য আমাদের কস্টিংটাও কম করে..।

ক্লায়েন্ট: হোল্ড অন, কস্টিং নিয়ে তো আমার কোনো সে নেই মিস.. জেরিন। টাকা কোনও বিষয় নয়। আমার দরকার চমক, আমার দরকার মার্কেট। আমি বুঝি বেচাবিক্রি।

নাভিদ: রাইট স্যার। এক্সাক্টলি। আর এই জন্য আপনার দরকার ফ্রেশ আইডিয়া।

ক্লায়েন্ট: বাট নট ফ্রেশ কোম্পানি। আপনারা ইয়াং ব্লাড। ডেফিনিটলি, কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স বলে একটা কথা আছে। অভিজ্ঞতা। ওটা কিন্তু ফেলনা নয়।

জেরিন: কাজ না করলে সেটা হবে কী করে স্যার।

ক্লায়েন্ট: এক্সাক্টলি। সেটাই বলছি। সেটা তৈরি করে আসুন। তারপর আমরা কথা বলি। তা ছাড়া আপনাদের তো এখনও মডেল পোর্টফোলিও হয়নি। বিলবোর্ডে কার ছবি যাবে, তাকে না দেখে কী করি আপনাদের সঙ্গে ডিল করবো বলুন।

নাভিদ: ওটা হয়ে যাবে স্যার। ওটা না দেখিয়ে তো আর কাজ হচ্ছেনা।

ক্লায়েন্ট: হুম। তো তারপরও এক্সপেরিয়েন্স একটা ফ্যাক্ট।

জেরিন: ঠিক স্যার। তো…।

ক্লায়েন্ট: তো..? আপনারা অভিজ্ঞতা নিয়ে আসুন। তারপর কথা বলবো।

নাভিদ: আমরা কনফিডেন্ট স্যার।

ক্লায়েন্ট: ওকে দেন কনভিন্স মি! আমাকে পটান। দেখি কেমন পারেন।

জেরিন: ইয়ে স্যার।

ক্লায়েন্ট: ডোন্ট ইয়ে মি। আমি বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন, এই বিজনেস আমরা বুঝি। স্বপ্ন দেখা ভালো, আর স্বপ্নের কারণে ঘুম না আসাটা কিন্তু ভালো নয়। স্বপ্নটা আসলে গভীর ঘুমের মধ্যে দেখাই উত্তম। কারণ তাতে ঘুমটা গাঢ় হয়। ঘুম ভালো হলে মাথা ভালো কাজ করবে। ইটস মেডিক্যাল সায়েন্স। আপনারা মাথা ক্লিয়ার করুন। জগৎটা গিভ অ্যান্ড টেক সিস্টেমে চলে। আমি আপনাদের পয়সা দেব তখনই যখন দেখবো আপনাদের দশ টাকা দিয়ে আমার বিশ টাকা আসছে। তখন আপনারা দশ টাকার কাজ পাঁচ টাকা দিয়ে করলেন নাকি পনের টাকা দিয়ে করলেন তা নিয়ে আমার মোটেও মাথা ব্যথা নেই। তাই বলছি, এমন কিছু করুন যা দেখে আমি পটে যাব। অ্যাম আই ক্লিয়ার।

নাভিদ: ভেরি ভেরি ক্লিয়ার স্যার। আমরা একটা প্রপোজাল নিয়ে এসেছি, এই নিন।

ক্লায়েন্ট: ঠিকাছে রেখে যান। তবে আমি কিছু বলতে পারছি না এখুনি। যা বললাম, ওটাই করুন আগে। ছোটখাট কোম্পানির কাজ করুন। অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিন। পরে সময়মতো আপনাদের জালে আমাদের মতো রুই কাতলা ধরা পড়বে। পড়তেই হবে।

জেরিন: হে হে। ইয়ে.. আচ্ছা। তাহলে উঠি।

নাভিদ: তারপরও স্যার। প্রপোজালটা রেখেই যাই।

ক্লায়েন্ট: একটা পরামর্শ দেই? প্রপোজালটা নিয়ে যান। ছোট কোম্পানির কাছে যান। প্রিন্টের খরচটা বেঁচে যাবে। এটা আমাকে দিয়ে আসলে লাভ হবে না।

নাভিদ: ওহ.. থ্যাংকু। উই রিয়েলি অ্যাপ্রিশিয়েট ইওর কনসার্ন… অর সাজেশন।

দুজন হ্যান্ডশেক করে উঠে দাঁড়াবে। জেরিন ব্যাগ থেকে তাদের কার্ড বের করে দেবে।

ক্লায়েন্ট: হুম। গুড। (জেরিনকে) আই উইল কল ইউ।

জেরিন আর নাভিদ বের হতে হতে কথা বলবে

জেরিন: উফফ। ডিসগাস্টিং। নিজেকে রুই কাতলা মনে করে ব্যাটা।

নাভিদ: হেহেহে। সবে তো শুরু। এসব কোনও ব্যাপার না। কাজে লাগলে ঠিকই ডাক দেবে দেখো।

জেরিন: গিভ অ্যান্ড টেক শেখাচ্ছে!

নাভিদ: কী করবে.. বেচারা। বয়সের দোষ।

জেরিন: মানে কি!

নাভিদ: বুঝতে পারোনি? গিভ অ্যান্ড টেক।

জেরিন বুঝতে পারেনি। নাভিদ মিটিমিটি হাসছে।

 

 

 

আমি তুমি সে নাটক চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

 

দৃশ্য-২২

ইনডোর। জেরিনের বাসা। জেরিন, আরশাদ, ফুপু।

 

জেরিন কলিং বেল দিলো। আরশাদ দরজা খুলে দিলো। আরশাদকে দেখে জেরিন অবাক। প্রথমে চিনতে পারেনি। পরে যখন চিনতে পারলো তখন চিৎকার দিয়ে আরশাদকে প্রায় জড়িয়ে ধরলো। আরশাদ খুব বিব্রত হলো। ফুপু তা দেখে খুব খুশি।

ফুপু: যাক, চিনতে পেরেছিস তাহলে।

জেরিন: কী যে বলিস। পলটাকে চিনতে পারবো না!

আরশাদ: খবরদার জরিনা আমাকে পলটা বলবি না।

জেরিন: কী বললি!

আরশাদের চুল টেনে ধরলো।

আরশাদ: মা ! মা! আমাকে বাঁচাও।

ফুপু হাসিমুখে চলে যাবে।

জেরিন আরশাদের সঙ্গে তার রুমে বসে গল্প করছে।

জেরিন: তুই একেবারে আগের মতো। হাবাগোবা আছিস। প্রেম টেম নিশ্চয়ই জোটেনি। বিদেশি মেম টেম জোটাসনি একটা।

আরশাদ: নাহ, বিদেশি মেমদের সঙ্গে ইংরেজিতে প্রেম করতে হয়। আমি বাপু খাঁটি বাঙালি।

জেরিন: কী বলিস, কত মেম আমাদের ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করছে, প্রেমের টানে ইউরোপ থেকে গ্রামে চলে আসছে। তোকে দিয়ে আসলে হবে না, দেশের মেয়েরা কিন্তু এখন ব্যাপক অ্যাডভান্সড। তুই কিন্তু কূল কিনারা করতে পারবি না।

আরশাদ: খুব চিন্তায় আছি। মা তো এবার বিয়ে দিয়ে ছাড়বে।

জেরিন: বিয়ে করেই ফুটবি?

আরশাদ: আরে নাহ, গেলে দুজনই যাব।

জেরিন: একি সব ঠিকঠাক নাকি? দুজন আসলো কোত্থেকে?

আরশাদ: আরে নাহ। মা তো কত কথাই বলে!

জেরিন: ফুপু ঠিক করে রেখেছে! বলিস কি। আমি জানি না! ফুপু! ফুপু!

ফুপু: কী হয়েছে

জেরিন: তুমি নাকি আরশাদ ভাইয়ের পাত্রী ঠিক করেছো! কোন মেয়ে কোথায় থাকে। আমি জানি না! এটা কোনও কথা।

ফুপু: ঠিক করতে যাব কোন দুখে। ঠিক করাই আছে।

জেরিন: আশ্চর্য! কে!

ফুপু জেরিনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসার চেষ্টা করবে। জেরিনের চোখে প্রশ্ন।

আরশাদ: মা, যাও তো। খিদেয় মরে যাচ্ছি। মাগুর মাছের ঝোলের ঘ্রাণে খিদে ডাবল। জলদি করো।

জেরিন: ওয়াও! আমারও ফেভারিট।

ফুপু: হতেই হবে। দুজনের একই খাবার পছন্দ না হলে কি আর..।

আরশাদ: আহা, মা! জলদি।

জেরিন: ঠিকাছে বলতে না চাইলে বলো না। এখন কথা তো ঘোরাবেই। আমি তো কেউ না।

ফুপু: কী যে বলিস, তুই তো..।

আরশাদ চোখ বড় বড় করে তাকাবে। ফুপু কথা আটকে হাসিমুখে চলে যাবে।

জেরিন: তা কোরবানির আর কদিন বাকি?

আরশাদ: আছি মাস দুয়েক। দেখা যাক। আমি কিছুই জানি না।

জেরিন: ও, তোকে তো বলাই হয়নি। আমার মানে আমাদের একটা অ্যাড ফার্ম হয়েছে। ক্লায়েন্ট পটাতে পারছি না। তুই কিছু বুদ্ধি টুদ্ধি দিস।

আরশাদ: বাহ…। তা আর কে কে।

জেরিন: আমি আর নাভিদ। নাভিদকে মনে আছে তো?

আরশাদ: হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই চিকনা চাকনা ছেলেটা।

জেরিন: ওই! আপনি একেবারে কী এমন বডি বিল্ডার হয়েছেন শুনি! ও আর এখন চিকন নেই। বরং একটু ভুড়িও হয়েছে।

আরশাদ: বাহ, চিকন বলায় লাগলো নাকি!

জেরিন: লাগবে না! সে আমার বিজনেস পার্টনার বলে কথা।

আরশাদ: আর কোনও কিছুর পার্টনার হয়নি তো।

জেরিন: হলে তোর কী! তোর এত লাগে কেন!

আরশাদ: আমার আবার কী!

জেরিন: তুই না ছবি টবি তুলিস।

আরশাদ: তা তো তুলি। তবে আগেই বলে দিলাম, আমি গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি করিনা।

জেরিন: মানে কী!

আরশাদ: মানে তোদের ওই অ্যাড ফার্ম না? মডেল ফডেলদের ছবি আমি তুলতে পারবো না।

জেরিন: অ্যাঁ.. আসছে আমার ওস্তাদ। কত নিবি সেটা বল। ফ্রিতে চাই না।

আরশাদ: হুমম.. সম্মানি দিলে…।

জেরিন: (কান টেনে ধরবে) তুই ভেবেছিস, বয়সে দুমাসের বড় বলে তোকে সম্মান করবো। এই নে সম্মানি।

আরশাদ: আরে ছাড় ছাড়, কান লম্বা হয়ে গেলে পরে আর কোনও মেয়ে।

ফুপু: ছাড়ার কোনও দরকার নেই। এখন থেকে মা কান টেনে টেনে লম্বা করার প্র্যাকটিস করো। পরে যেন কান দিয়ে কথা ঢোকে। আমার কথা তো ঢোকে না এমনিতে পরে…।

আরশাদ: খাবার কী রেডি?

জেরিন: তুই পেটুক হলি কবে থেকে।

জেরিনের ফোন আসবে। সে উঠে ফোন ধরবে। আরশাদ চলে গেলো।

জেরিন: হ্যালো, হুম বলছি। কেমন আছেন স্যার।

অপর প্রান্তে সেই ক্লায়েন্ট: ওহ ডোন্ট কলমি স্যার।আপনাকে তো তখন একটা কথা বলা হয়নি। আপনার নাম তো জেরিন।

জেরিন: জ্বি স্যার।

ক্লায়েন্ট: সুন্দর নাম। গুড। যা বলতে চাইছি তা হলো, আপনাকে আসলে গিভ অ্যান্ড টেক সিস্টেমে আসতে হবে।

জেরিন: জ্বি স্যার আগেও বলেছেন।

ক্লায়েন্ট: কিন্তু আপনি বোধহয় বুঝতে পারেননি।

জেরিন: এক কাজ করুন না স্যার, আপনি বরং আমার পার্টনারকে বুঝিয়ে বলুন। তার নাম্বার দিবো?

ক্লায়েন্ট: আহা! যে জিনিস যাকে বুঝতে হবে তাকেই তো বলতে হবে তাই না।

জেরিন: তাহলে বলুন স্যার।

ক্লায়েন্ট: আপনাকে আমি আলাদা করে টিভিসির কাজটা দিতে পারি। আপনি নিজেই সেটার কাস্টিংয়ে থাকুন, তাতেও আমার আপত্তি নেই। তবে শর্ত হলো..।

জেরিন: থাক স্যার। বলতে হবে না। বুঝতে পেরেছি।

ক্লায়েন্ট: বাহ, চমৎকার। বুঝেই যখন গেছেন। হা হা হা। এই জগৎটাই এমন- গিভ.. অ্যান্্ড টেক। প্রথমে দেবেন, তারপর নেবেন। এমনি এমনি একগ্লাস পানিও কেউ কাউকে দেয় না আজকাল।

জেরিন রাগ করে কিছু বলতে গিয়েও মুখে আসলো না। গালি দিতে গিয়েও পারলো না। ফোনটা কেটে দিলো।

আরশাদ: (কাশি দিলো) ইয়ে মাগুর মাছের ঝোল ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

জেরিন: হোক ঠাণ্ডা!

আরশাদ ভড়কে গেল।

জেরিন: ওহ.. স্যরি। একটা স্টুপিড ফোন করেছিল। কী আর বলবো। মেজাজটা একেবারে।

আরশাদ: ইটস ওকে ওকে। খেতে আয়।

আরশাদ কিছুটা মুখ গম্ভীর করে খাওয়ার টেবিলে বসবে। জেরিন মন খারাপ করে আরশাদের পাশে বসবে।

 

 

আমি তুমি সে নাটক চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

 

দৃশ্য-২৩

ইনডোর। শিরিনের বাসা। শিরিন, মামী ও মামা।

 

শিরিন তার রুমে বসে আছে। পাশে তার মামী। দুজনই নীরব। নীরবতা ভাঙলেন মামী।

মামী: আমি.. আ..মি.. আমি বুঝতে পারছি না কেন তুমি একটাবার আমাকে বললে না। তোমার মামাকে বললেও তো পারতে।

শিরিন: দরকার মনে করিনি তাই বলিনি।

মামী: এত বড় একটা ঘটনা। তো.. তো.. তোমাকে মামলা করতে বলেছে কে শুনি! আমি জানি না বাপু তোমার মামা আসলে কী বলবে।

শিরিন: কী আর বলবে..।

মামী: ছেলেটা একটা বদমাশ। তুই গিয়েছিস ওর স্টুডিওতে রং ঢং করে ছবি তুলতে। তার উপর থানা পুলিশ করে এখন গোটা পাড়া জানাজানি হয়ে গেছে।

শিরিন: পাড়া কী জানে মামী, পাড়া কিছুই জানে না।

মামী: ওর কাছে নাকি তোর কী সব ছবি আছে। কেমন ছবি শুনি! ছি ছি ছি ছি।

শিরিন: ওসব কিছু না মামী।

মামী: ওসব কিছু না হলে পুলিশ তাকে ধরলো কেন? কেন সে তোকে ব্ল্যাকমেইল করতে গেল। আমাকে এটা বল যে ছবিগুলো যদি..।

এমন সময় মামা এসে হাজির।

মামা: শিরিন তুই আমার রুমে আয়।

 

শিরিন ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ালো। মামা তার রুমে গেল। শিরিন ঢুকলো। অপরাধীর মুখ করে।

মামা: আমি ভাসাভাসা সব শুনেছি। আমি আর বিস্তারিত জানতেও চাই না। তুই অনেক বড় হয়েছিস। নিজের ভালোমন্দ বুঝিস। তোর মা-বাবা নেই। এমন না যে আমি তোকে বড় করেছি। তারাই তোকে বড় করেছে।

শিরিন: কী বলতে চাও বলো মামা।

মামা: (চিৎকার) তুই কী করেছিস সে সম্পর্কে তোর কোনও ধারণা আছে!  আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। এখন আমাকে লোকজনের কথা শুনতে হয়!

মামী: (ছুটে আসলো) এই তুমি চিৎকার টিৎকার করো না। তোমার আবার হার্টের সমস্যা। শিরিন তুই যা তো।

মামা: হ্যাঁ ও যাবে! ও একেবারে যাবে! ওর আর আসবে না।

শিরিন তার রুমে চলে গেলো দ্রুত।

মামী: আহা। শান্ত হও তো সবাই।

মামা: আর শান্ত হয়ে কাজ নেই। অনেক দেখেছি। ভেবেছি দুয়েকদিন যাক, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো আমাকেই বাসা ছাড়তে হবে। এবার তো ফটোগ্রাফার এসেছে বাসায়, কদিন পর সিনেমার ডাইরেক্টর আসবে, তারপর বিউটি পার্লারের লোকজন আসবে। তারপর তারপর।

শিরিন তার রুমে ব্যাগ গোছাচ্ছে।

মামা: এই মুহূর্তে তুই বেরিয়ে যাবি। কোন জাহান্নামে যাবি যা।

শিরিন কাঁদছে। মামী মামাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।  শিরিন বের হয়ে যাচ্ছে ঘর থেকে। পেছন থেকে মামা বললো।

মামা: তুই তো যাচ্ছিস, এখন পুলিশ তো এসে তোকে এখানেই খুঁজবে। তখন আমাদের কী হবে, সেটা তোর মাথায় আছে!

শিরিন: চিন্তা করো না মামা। সেটাও আমার মাথায় আছে। আমি মামলা তুলে নিচ্ছি। কেউ আর তোমাদের বিরক্ত করবে না।

মামা কিছু না বলে রাগ করে তার ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। মামী শিরিনকে থামানোর চেষ্টা করলো। শিরিন বের হয়ে গেলো।

 

 

 

দৃশ্য-২৪

ইনডোর। রাত। শিরিনের বান্ধবী মিতার বাসা। মিতা একজন শহরের হাই প্রোফাইল পতিতা। সে একটা ফ্ল্যাট বাসায় একা থাকে। খদ্দেররা এসে তার সঙ্গে সময় কাটিয়ে টাকা দিয়ে চলে যায়। শিরিন জানে না যে মিতা এ কাজ করে।

চরিত্র: মিতা, খদ্দের এবং শিরিন।

 

খদ্দের: চললাম ওকে? ভালো থেকো সুইটহার্ট। গুড নাইট।

মিতা: প্রত্যেকবারই তো সেই একই এমাউন্ট। মাঝে মাঝে একটু বখশিস তো দিতে হয়, নাকি।

খদ্দের পকেট থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে মিতার হাতে ধরিয়ে দেবে।

মিতা: থ্যাংকু সো মাচ। ইউ সো সুইট।

খদ্দের: গেলাম টাটা।

মিতার ফোনে শিরিনের কল।

শিরিন: মিতা কোথায় তুই?

মিতা: আমি বাসায়। অফিস থেকে ফিরলাম একটু আগে।

শিরিন: আমি আসছি তোর বাসায়। থাকতে হবে কিছুদিন।

মিতা: মানে কি! আই মিন কী হয়েছে?   

শিরিন: এসে বলবো। ঠিকানাটা বল।

মিতা: ওকে ওকে। বাসা নম্বর ৮ রোড ৯।

শিরিন: রান্না করে রাখিস। সারাদিন কিছু খাইনি।

মিতা: আচ্ছা আয়। আমি দেখছি কী আছে কিচেনে।

 

মিতা ফোন রাখলো। চিন্তায় পড়ে গেলো। রুম ঠিকঠাক করলো। রান্না ঘরে গেলো। সময় পার হলো। কলিং বেল। শিরিন ঢুকলো।

 

শিরিন: চলে এসেছিরে।

মিতা: বস, ব্যাগটা রাখ। আগে খেয়ে নেয়ে। তারপর সব শুনবো।

 

দুই বান্ধবী ছাদে বা তাদের রুমে শুয়ে কথা বলছে।

শিরিন: তোর অফিসে আমাকে একটা চাকরি দে না।

মিতা: হুহহহ। (দীর্ঘশ্বাস) চাকরি। চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। অনেক আগেই।

শিরিন: তাহলে? ভাড়া দিস কোত্থেকে? খরচ?

মিতা: তাহলে আর কি। আগের মতো।

শিরিন: মানে.. আবার?

মিতা: হুম।

শিরিন কিছুটা হতাশ। সঙ্গে বিরক্তও।

মিতা: কী এখন আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না? চাকরি করে দেখ কিছু দিন। যন্ত্রণা কোনও অংশে কম না। আর তাছাড়া আমার কী যায় আসে। তিন বছর প্রেম করার পর জানতে পারলাম বয়ফ্রেন্ড একটা লম্পট ছাড়া আর কিছু না। ততদিনে তো যা যাওয়ার গেছে।

শিরিন: তাই বলে।

মিতা: তোর কাছে যা মনে হয় হোক, আমার কাছে এটাই এখন আমার জীবন। আমি আমার মতো চলতে পারছি, এটা বড় কথা না? তুই তো চাস সুপারমডেল হতে। হা হা হা। সুপারমডেল হওয়া কি অতো সহজ?

শিরিন: আমি সহজ করে নেব।

মিতা: শর্টকাটে না গেলে পারবি না। আমাকে দেখ, দিনে একজনের সঙ্গে শুলেই হয়ে যায়। জীবন চলে যাওয়ার দরকার, চলে যাচ্ছে। মা মারা যাওয়ার পর বাবা বিয়ে করে পগারপার। নিজের মতো থাকে। মাসে মাসে যে টাকা দেয় ও দিয়ে আমার একটা জামার টাকাও হবে না। আমি যাবটা কোথায় বল। মানুষের বাসায় কাজ নেব? আমি দেখতে যেমন, তুই ভেবেছিস বাসায় কাজ করেলও আমি সেফ থাকবো? হিহিহি।

শিরিন: তোর কিছু হতে ইচ্ছা করে না?

মিতা: নাহ.. আগে করতো। বিজ্ঞানী হওয়ার শখ ছিল। হাহাহা। হলাম নষ্টা মেয়ে। হাহাহা। বাই দ্য ওয়ে এই নষ্টা মেয়ের ইংরেজি কী হবে রে? নটি গার্ল? উঁহু.. ইট শুড বি রিজেক্টেড গার্ল। রিজেক্টেড। মানে যাকে সবাই ছুড়ে ফেলে দেয়। যার কেউ থাকে না। আই এম রিজেক্টেড।

শিরিন: ফালতু বক বক করবি না। আমি তোকে ছেড়ে গেছি?

মিতা: তুই তো আমার প্রাণের বান্ধবী। তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না আমি জানি।

শিরিন: রিজেক্টেড যদি কেউ হয়, সে তো আমি। বাবা ছেড়ে চলে গেছে। মা নেই। মামাও বের হয়ে যেতে বললো।

মিতা: হুমমম। কিন্তু আমি ভাবছি.. এখন।

শিরিন: হুম। বুঝতে পেরেছি।

মিতা: কী বলতো?

শিরিন: এই যে আমি এখন থাকবো কী করে। তোর ক্লায়েন্ট..।

মিতা: হাহাহা। ক্লায়েন্ট! খদ্দের বল খদ্দের। এত সুন্দর করে ডাকার কিছু নেই। হাহাহা। ক্লায়েন্ট! দাঁড়া কফি নিয়ে আসি।

শিরিন: তোর তো দুটো রুম। একটা আমাকে দে কিছুদিনের জন্য। আমি যে আছি এটা কেউ না বুঝলেই হয়।

মিতা: আরে বাবা বুঝলেই বা কী। আজ হোক কাল হোক.. তোকেও তো..।

শিরিন: (মিতার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাবে।) কী! আমাকেও তো কী! শুতে হবে? বিছানায় যেতে হবে?

মিতা ভয় পাওয়ার ভাণ করবে।

মিতা: ওকে ওকে! আই সারেন্ডার। ভুল হয়ে গেছে বাবা। এবার বল তোর ব্ল্যাক কফি চলবে?

শিরিন অন্য দিকে তাকাবে।

মিতা: আহা! তুই আমার স্কুল বেলার বান্ধবী। তুই মুখ ফিরিয়ে নিলে তো আমাকে সুইসাইড খেতে হবে।

শিরিন: আপাতত আমার মামার মতো কথা বলা বন্ধ কর। আর ব্ল্যাক কফি আমি খাই না। কফি মেট দিবি।

মিতা চলে যাবে।

শিরিন: (মনে মনে ভাবছে) তবে কি সত্যিই মিতার মতো আমাকেও। না না। আমি এ কাজ করতে পারি না। আমি তো এমন নই। আমি এমন কখনই ছিলাম না। তবে কেন.. উফফ.. ভুল যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর ও পথে যাচ্ছি না। (কল্পনায় ফটোগ্রাফারের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সেই ছবিগুলো ভেসে উঠবে)।

মিতা কফি নিয়ে আসলো।

মিতা: তো কিছু ঠিক করেছিস? কোথাও ছবি সিভি এসব জমা দিয়েছিস?

শিরিন: হুম।

মিতা: হুম মানে কী?

শিরিন চুপ।

মিতা: আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। ওই কেস তো। এসব চলেই। কিছু মনে কর আর না কর, এভাবেই চলছে।

শিরিন: কিন্তু…।

মিতা: হুম.. আই থিংক একটা বিকল্প আছে। গতকাল ফেসবুকে দেখলাম আমার ডিপার্টমেন্টের এক বড় আপু একটা পেজ খুলেছে। একটা অ্যাড ফার্ম সম্ভবত।

শিরিন নড়ে চড়ে বসবে। মিতার দিকে তাকিয়ে শুনবে।

মিতা: দাঁড়া।

মোবাইল বের করে একটা ফেসবুক পেজ খুলবে।

মিতা: হুম। জেন মিডিয়া নাম। আর আপুটাও ভালো। সঙ্গে সম্ভবত তার বয়ফ্রেন্ড আছে পার্টনার হিসেবে। তুই ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিস।

শিরিন: কোনও নাম্বার টাম্বার আছে? থাকলে টুকে রাখ। সকালে কথা বলবো।

মিতা: ফোন করে হবে না। তুই কালকেই কুরিয়ারে ছবি আর সিভি পাঠা। ছবি কমসে কম দশটা দিবি।

শিরিন: ঠিকাছে তুই যখন বলছিস।

মিতা: (মজা করে) যাক, তোর তো হয়েই গেল। এখন আমার কী হবে।

শিরিন: তুইও চল না। দুজন একসঙ্গে।

মিতা: আরে ধুর! আমার ওসব ভালোই লাগে না। তারচেয়ে বড় কথা, যে লাউ সে কদু। ওই সব ফার্মের কাজ করতে গেলেও কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে..।

শিরিন: মোটেও না!

মিতা: মোটেও না তোর মাথা। যাচ্ছিস তো, দেখবি সব।

শিরিন অন্যমনস্ক হবে।

 

আমি তুমি সে নাটক চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

 

 

দৃশ্য-২৫

জেরিন আর নাভিদের অফিস। তারা দুজন দুজনের রিভলভিং চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। পাশের বেঞ্চে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে হাসু মিয়া ঘুমুচ্ছে। রিসিপশন ফাঁকা।

জেরিন: একটা মশা মারার ব্যাট কিনতে হবে।

নাভিদ: সবারই তো এক কথা। এখন আমরা অভিজ্ঞতা পাই কোথায়।

জেরিন: তারউপর আবার একগাদা সিভি এসে জমেছে। তোমাকে কে বলেছে মডেল খুঁজতে।

নাভিদ: আরে এসব সিভি আর ছবিই আমাদের অভিজ্ঞতা হবে।

নাভিদ উঠে গা ঝেড়ে সিভির বান্ডিল নিয়ে বসলো। একটা একটা করে ছবি দেখছে আর সাইডে সরিয়ে রাখছে। জেরিন বিরস মুখে নাভিদের দিকে তাকিয়ে আছে।

জেরিন: হাসু মিয়া! চা দাও!

হাসু মিয়া উঠলো না। জেরিন উঠে গেলো। চা বানালো। চা নিয়ে এসে দেখবে নাভিদ আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে শিরিনের ছবি দেখছে। একটার পর একটা দেখছে আর ভাবছে আর মিটিমিটি হাসি তার মুখে। জেরিনের মুখ ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে এলো।

জেরিন কাশি দিল। নাভিদ কিছুটা চমকে উঠলো। ছবিগুলো দ্রুত একপাশে রাখলো। কাজে মন দেওয়ার ভাণ করলো।

জেরিন: কে মেয়েটা? দেখি তো?

নাভিদ: হ্যাঁ, দেখো তো। এই নাও।

জেরিন: হুম। চলে।

নাভিদ: আরে কী বলো চলে। রীতিমতো দৌড়ায়।

জেরিন: কিন্তু করবেটা কী। আমাদের হাতে তো কাজই নেই।

নাভিদ: এক কাজ করলে হয় না। আমরা একটা ফেক কাজ বানাই। মানে নিজেরা নিজেরা একটা কিছু করি। যেটা ক্লায়েন্টদের দেখাবো। যাকে বলে শোরিল।

জেরিন: মানে আবার সেই খরচ।

নাভিদ: মনে করো এটা আমাদের নিজেদের বিজ্ঞাপন।

জেরিন: হুম। খারাপ হয় না। তুমি একটা স্ক্রিপ্ট দাঁড় করাও। আমি বাজেটটা দেখছি।

নাভিদ: গুড। তাহলে একে কালকেই দেখা করতে বলি।

জেরিন: কাকে? কেন?

নাভিদ: শিরিনকে।

জেরিন: শিরিন? কোন শিরিন?

নাভিদ: আরে এই মেয়েটা। নাম শিরিন। শিরিন সুলতানা।

জেরিন: ও। তা তো বুঝলাম। কিন্তু তুমি এত একসাইটেড কেন হঠাৎ।

নাভিদ: আরে আমাদের অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে, ভালো না?

জেরিন: আমি যাচ্ছি ধানমণ্ডি। একটা ফ্যাশন হাউসের সঙ্গে মিট আছে। খুব বেশি টাকার কাজ না। তবে তোমার ওই অভিজ্ঞতার চেয়ে হাজার গুণ ভালো।

নাভিদ: ওকে। তুমি যাও। আমি তাহলে এদের সঙ্গে কন্টাক্ট করতে থাকি।

জেরিন: তা যাচ্ছি। তবে তুমি আবার গলে যেও না।

নাভিদ: হে হে হে। ভেতরে তো অনেক বরফ জমে আছে। গলে গেলেও যেতে পারে।

জেরিন: তাহলে একদম ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখবো। আবার জমে যাবে।

নাভিদ: ওহ নো..। ইউ আর সো.. ডি.. ডি.. ডিসটার্বিং।

জেরিন: হুঁহহ।

জেরিন বের হয়ে যেতেই নাভিদ আবার শিরিনের ছবিগুলো বের করে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে দেখতে শুরু করবে। জেরিন ঘাড় ঘুরিয়ে পর্দার ফাঁক দিয়ে সেটা দেখবে। বিরক্ত হবে। চলে যাবে।

 

 

 

দৃশ্য-২৬

ইনডোর। অফিস। জেরিন ও একটি ফ্যাশন হাউসের ভদ্র গোছের মালিক। পরনে পাঞ্জাবী।

 

মালিক: হে হে। আরে চা নিন ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো।

জেরিন: আমাদের যে কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তা জেনেও যে আপনি।

ম্যানেজার: আরে অভিজ্ঞতা! অভিজ্ঞতা ধুয়ে পানি খাবো! আমার দরকার কাজ হয়ে যাওয়া। আর কম টাকায় যদি হয় তো কথাই নেই। তারচেয়ে বড় কথা ওই অভিজ্ঞতার প্রতি আমার অ্যালার্জি আছে। এই যে আপনারা যারা ইয়াং তারা ভালো হোক খারাপ হোক, কাজটাকে ভালোবাসতে জানেন। এটাই বড় কথা।

জেরিন: আমরা আমাদের সবটুকুই দেব। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

ম্যানেজার: আরে সন্দেহ থাকলে কি আপনাদের কাজটা দেই?

জেরিন: সামারের শ্যুটটা আমরা গাজীপুরেই করবো। আর বর্ষারটা করতে চাই কক্সবাজারে। ঝড়ের মধ্যে সি-বিচ। আই থিংক।

ম্যানেজার: আরে কোথায় যাবেন না যাবেন ওটা আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।  

জেরিন: আর মডেল। আপনাদের কোনও পছন্দ।

ম্যানেজার: আরে ওসব তো আমাদের চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। তবে আমার চাওয়া একটাই। আপনাদের কাজ দেখে যেন মনে না হয় যে আপনারা নতুন। আমার প্রডাক্ট বিক্রি হলেই আমি খুশি। আরে নিন নিন চা নিন। রং চা যদিও। তবু নিন।

জেরিন: ওটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন স্যার। আপনার ড্রেসের চিন্তা আজ থেকে আমাদের।

ম্যানেজার: আরে এই কথা শোনার জন্যই তো আপনাদের ডাকা। অভিজ্ঞতাওয়ালা অভিজ্ঞ লোকরা তো আর এটা বলবে না। তারা থাকে শুধু নিজেদের আইডিয়া নিয়ে।

জেরিন: তো আমরা কাল থেকেই কাজ শুরু করতে চাই।

ম্যানেজার: আপনি চাইলে এখন থেকেই শুরু করতে পারেন। শুধু শেষ হওয়ার পর একটা ফোন করবেন, আর চেকটা নিয়ে যাবেন।

জেরিন: হেহেহে। থ্যাংকু সো মাচ স্যার।

ম্যানেজার: আমাকে থ্যাংকু না দিলেও চলবে। থ্যাংকু আমি আপনাকে দিতে চাই। হাহাহা।

 

 

আমি তুমি সে নাটক চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

 

দৃশ্য-২৭

জেরিন নাভিদের অফিস। নাভিদ ফোনে কথা বলছে শিরিনের সঙ্গে। পূর্ণতা আসবে। পরে জেরিন আসবে। তারপর শিরিন আসবে।

 

নাভিদ: হুম..হাহাহাহা। কী যে বলো না। তা কাল সকাল সকাল চলে আসো। আমাদের একটা ফটোশ্যুট আছে। তোমাকে দিয়েই করতে চাই।

শিরিন (ফোনে, তার কণ্ঠ বেশ উত্তেজিত): জ্বি ভাইয়া। অবশ্যই। কয়টা আসবো শুধু সেটা বলেন।

নাভিদ: সকাল ১০টার মধ্যে আসলেই হবে। আমি আবার ৯টার আগে উঠি না। আর হ্যাঁ, আমরা কিন্তু কোনও অ্যাডভান্স করতে পারবো না। কাজ শেষ হওয়ার পর পেমেন্ট।

শিরিন: কী যে বলেন ভাইয়া, ওটা আপনার ওপর ছেড়ে দিলাম। কিছু না পেলেও ক্ষতি নেই। কাজটা তো করা হলো।

(এমন সময় ধীরে ধীরে পূর্ণতা নাভিদের রুমে ঢুকবে। নাভিদ সেটা টের পাবে না। সে অন্যদিকে ঘুরে কথা বলে যাচ্ছে। পূর্ণতা সব শুনছে)

নাভিদ: আরে নাহ শিরিন। কী যে বলো না। তুমিই তো আমার প্রাণ, আ  আ আইমিন তোমরা যারা কাজ করো তারাই তো এই বিজনেসের প্রাণ, মানে লাইফ। আমি কি মডেল হতে পারবো?

শিরিন: হাহাহা। ভালো বলেছেন। এই জন্য কাজই পাই না।

নাভিদ: তো, তুমি চাইলে আজ বিকেলেই আসতে পারো।

শিরিন: জ্বি আচ্ছা।

নাভিদ: ঠিকাছে রাখি তাহলে। বাই

পূর্ণতা: আরে রাখলে কেন এত তাড়াতাড়ি। আরেকটু কথা বলো না। বেশতো রসিয়ে রসিয়ে আলাপ..

নাভিদ: পূর্ণতা! বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। আড়াল থেকে এভাবে চোরের মতো দাঁড়িয়ে কথা শোনা ঠিক না!

পূর্ণতা: ওরে বাবা, নিজে পুতু পুতু করে মডেলের সঙ্গে কথা বলতে পারবে, আর আমি শুনলে দোষ? আমার শোনার অধিকার আছে।

নাভিদ: কীসের অধিকার! কে দিয়েছে তোকে! কী ভাবিস তুই নিজেকে?

পূর্ণতা: আমি নিজেকে যা-ই ভাবি, অধিকার আমার আছে। তুমি যা-ই বলো না কেন?

নাভিদ: তোর এসব ফাজলামো ভেবেছিস বুিঝ না? প্রেম শেখাস আমাকে?

পূর্ণতা:  তুমি ওই মেয়েকে কেন আসতে বলেছো শুনি!  বিকেলে কেউ থাকবে না অফিসে? ফস্টিনস্টি করবে? এনজয় করবে?

নাভিদ পূর্ণতাকে চড় দেবে। এমন সময় জেরিন ঢুকবে। সে চড় দেওয়ার দৃশ্যটা দেখে  ফেলবে। পূর্ণতাকে ধরতে যাবে। পূর্ণতা তাকে হাত ঝামটা মেরে সরিয়ে চলে যাবে।

জেরিন: কী হয়েছে! কী হয়েছে! চুপ করে আছো কেন!

নাভিদ: তোমার এত লাগলো কেন আবার।

জেরিন: আমার লাগলো মানে। তুমি কী করেছো যে যার জন্য মেয়েটা এমন রেগে গেল। কী নিয়ে ঝগড়া হচ্ছিল তোমাদের। এমনকি তুমি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করলে না।

নাভিদ কিছুটা বিব্রত।

নাভিদ: দেখো তুমি ঘটনা পুরোপুরি জানো না।

জেরিন:তো আমাকে জানাও!

নাভিদ: শিরিন.. ইয়ে।

জেরিন: এখানে শিরিন আসলো কোথা থেকে। সমস্যাটা কী তোমার। ওই মেয়ের সিভি পাওয়ার পর থেকেই দেখছি তুমি।

নাভিদ: উফফ স্টপ ইট। তোমরা মেয়েরা না সব এক ভাবে চিন্তা করো।

জেরিন: অ্যাই! শেষবারের মতো বলছি এই তোমরা মেয়েরা বলে কিছু বলবে না। স্পষ্ট করে নাম ধরে বলবে। আমি কার মতো চিন্তা করি। আর শিরিনের সঙ্গে কী হয়েছে।

নাভিদ: কিছু হয়নি। কিছু হয়নি। লেট মি ক্লিয়ার। শিরিনের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। পূর্ণতা আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল।

জেরিন: কী কথা বলছিলে যে আরেকজনকে আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনতে হয়েছিল।

নাভিদ রাগ করে চলে যাবে। যেতে যেতে বলবে-

নাভিদ:প্রেমালাপ করছিলাম! গোপন কথাবার্তা হচ্ছিল আমাদের! এই জন্য রাগ হয়েছে!

জেরিন: যাচ্ছো কোথায়? শোনো!

 

 

জেরিন হতাশ হয়ে বসে আছে।টেবিল ঘড়িতে সময় দেখলো। বিকাল সাড়ে ৫টা।

শিরিন: আসতে পারি?

জেরিন: হুম। আসুন।

শিরিন: আপু আমি শিরিন। শিরিন সুলতানা।

জেরিন: ও তুমি শিরিন।

শিরিনের দিকে খানিকটা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকালো জেরিন।

শিরিন: আমার সঙ্গে নাভিদ ভাইয়ার কথা হয়েছিল।

জেরিন: তো নাভিদ ভাইয়াকেই ফোন করো। আমি তো জানিনা তোমাকে কেন আসতে বলেছে।

শিরিন: একটা ফটোশুটের ব্যাপারে… মানে.. আচ্ছা আমি কি পরে আসবো?

জেরিন: ওহ। ফটোশুট? ঠিকাছে তোমার নাম্বারটা আমাকে দাও। ওহ সরি, তুমি করে বললাম।

শিরিন: না আপু। ইটস ওকে। আমার নাম্বার নিন।

জেরিন শিরিনের দিকে ফিরেও তাকাবে না। শিরিন কিছুক্ষণ ইতস্তত করে শেষে উঠে দাঁড়াবে। তারপর  ধীরে ধীরে বের হয়ে যাবে।

জেরিন তার চলে যাওয়া দেখে তাচ্ছিল্য করবে।

 

 

 

 

দৃশ্য-২৮

রাত। মিতার ফ্ল্যাট। শিরিন ঢুকবে। শিরিন, মিতা ও মিতার এজেন্ট লাবলু। লাবলুর বয়স ৩৫-এর মতো।

 

শিরিন দরজায় নক করছে। ভেতরে ফিসফিস শব্দ। দর্শক কিছু দেখছে না, কিন্তু যা কানে আসবে।

মিতা: আরে যা যা।

মিতা: আচ্ছা বাবা এই নে। কিন্তু এই শেষ। আর দিতে পারবো না। আমার কমিশন থেকে আবার ধার নিতে লজ্জা করে না।

লাবলু: ওকে ওকে।

 

দরজা খুলতেই লাবলুর মুখোমুখি শিরিন। লাবলু হাসি হাসি মুখে শিরিনকে আপাদমস্তক দেখবে। শিরিন এবার বিব্রত নয় বিরক্ত।

লাবলু: বাহবা বাহ। বাহ।

শিরিন: এই কে!কে আপনি শুনি! এমন ছ্যাঁচড়ের মতো তাকাচ্ছেন কেন?

লাবলু: ওলে ব্বাবা। এ দেখি আবার রাগও আছে। তা কলকাত্তা থেকে এয়েছেন নাকি দিদি। এত রাগ কেন। এত রাগ করলে তো এই লাইনে কামাতে পারবেন না।

মিতা: লাবলু! যাও বলছি! শিরিন, তুই ঘরে আয়।

লাবলু: নাম তাহলে শিরিনই আছে। দেখতে শুনতেতো ভালোই। নামটা চেঞ্জ করতে হবে। শুধু শিরি হলে কিন্তু..।

শিরিন: পথ ছাড়ুন! স্টুপিড কোথাকার!

লাবলু: ওয়াও। ইংরেজিও জানা  আছে দেখছি। মিতা.. এতো ডাবল রেট পাবেরে। বাই দ্য ওয়ে, আমি গেলাম, ১১টার দিকে ক্লায়েন্ট আসবে।

শিরিনকে টেনে ঘরে ঢোকাবে মিতা। দরজা লাগিয়ে দেবে। ইশারায় লাবলুকে বোঝানোর চেষ্টা করবে যে শিরিন ওই টাইপের মেয়ে নয়।

রুমের ভেতর

শিরিন: লোকটা কেরে!

মিতা চুপ করে আছে। ঘর গোছানোতে ব্যস্ত।

মিতা: তুই ভেতরের রুমে ঘুমা।

শিরিন: কেন কেউ আসবে?

মিতা: হুম।

শিরিন: আচ্ছা।

মিতা: দরজা লাগিয়ে রাখবি ভালো করে।

শিরিন: কেন আমি আছি জানলে সমস্যা?

মিতা: সমস্যার কি আর কোনও মা-বাপ আছে? কোন দিক দিয়ে যে পয়দা হবে।

শিরিন: হুম। কফি খাবি? বানাবো?

মিতা: বানা।

এমন সময় দরজায় টোকার শব্দ। শিরিন ও মিতা দুজন দুজনের দিকে তাকালো।

 

 

আমি তুমি সে নাটকের সব পর্ব (চিত্রনাট্য)

ami tumi se natok full story

প্রথম খণ্ড দৃশ্য ২১ থেকে দৃশ্য ৩০

 

 

দৃশ্য ২৯

নাভিদের বাসা। নাভিদ ও পূর্ণতা। পূর্ণতার তার রুমে বসে পড়ছে। নাভিদ ঢুকবে। তার মুখে কিছুটা অপরাধবোধ।

নাভিদ কাশি দিলো। পূর্ণতা দেখেও দেখলো না।

নাভিদ: স্যরি।

পূর্ণতা চুপ করলো। কিছু বললো না। আবার পড়তে লাগলো।

নাভিদ: মেজাজ ঠিক ছিল না।

পূর্ণতা: আমাকে সরি বললেই কি আর না বললেই কি। আমি তোমার প্রেমিকা নই তাই না? প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া হলে তাকে মানাতে হয়। সরি বলতে হয়, অনেক কিছু করতে হয়। আমি তো আর ওই রকম কিছু না। আমাকে তুমি দরকার হলে থাপ্পড় দেবে, দরকার হলে লাত্থি মারবে। দরকার হলে নুডলস বানাতে বলবে।

নাভিদ এগিয়ে এসে পূর্ণতার হাত চেপে ধরবে।

নাভিদ: আই এম রিয়েলি সরি বাবা। আমার.. আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে। তোর কেমন লাগছে সেটা তো বুঝতেই পারছি।

পূর্ণতা জোর করার চেষ্টা করবে হাত ছাড়ানোর। কিন্তু তার চেষ্টার ধরন দেখে মনে হবে সে আসলে ছাড়াতে চাইছে না। সে নাভিদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

নাভিদ খানিকটা অপ্রস্তত। তবে সে পূর্ণতার হাত ছাড়ছে না। পূর্ণতা নাভিদের চোখের দিকে তাকাবে। নাভিদ বিব্রত হয়ে চোখ নামাবে। পূর্ণতার চোখ ছলছল। সে এবার নাভিদের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। হাত ধরে টান দিলো। নাভিদও কাছে চলে আসলো। পূর্ণতা খপ করে নাভিদের গাল চেপে ধরলো তার দুহাত দিয়ে। নাভিদ ভয় পেলেও সরিয়ে নিতে পারছে না। পূর্ণতা নাভিদের মুখটাকে সামনের দিকে নিয়ে আসছে। বোঝা যাচ্ছে যে সে তাকে চুমু দিতে চায়। নাভিদ ইতস্তত। পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে ফেলছে। নাভিদকেও দেখে মনে হচ্ছে সে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।

 

 

এমন সময় নাভিদের ফোনে রিং বেজে উঠলো। পূর্ণতা নাভিদকে ছাড়লো না। তবে নাভিদের চোখ খুলেগেলো। পূর্ণতা ঠোঁটের বদলে তার গালটাকে এগিয়ে দিলো। নাভিদ হাল্কা চুমুর মতো ঠোঁট ছোঁয়ালো। এরপর ছুটে গিয়ে ফোনের কাছে   গেলো।

নাভিদ: হ্যালো.. হুম। হ্যাঁ.. হ্যাঁ কাল সকালে। দশটায়।

জেরিন (শুধু কণ্ঠ): ক্যামেরা চালাবে কে?

নাভিদ: ক্যামেরা চালাবে আমার এক বন্ধু। রাজিব নাম। ওকে আসতে বলেছি। না না খুব একটা দিতে হবে না। ওটা আমি দেখবো। ওটা সমস্যা না। ওকে। ঠিকাছে।

 

পূর্ণতা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে আনন্দের ছাপ। সে খুশিতে আত্মহারা। তবে নাভিদ তার দিকে তাকাতেই আবার পড়ায় মন দিলো।

পূর্ণতা তার খাতায় লিখলো, আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।

 

 

 

 

দৃশ্য ৩০

রাত।জেরিনের বাসা। জেরিন ও আরশাদ। ছাদে আরশাদ ছবি তুলছে। জেরিন তার পাশে।

আরশাদ অনেকক্ষণ ধরে ট্রাইপডে ক্যামেরা রেখে শাটার স্পিড কমিয়ে একটা টবের ছবি তোলার চেষ্টা করছিল। 

জেরিন: কী ছাইপাশ করছিস তখন থেকে।

আরশাদ: আরে এমন ছবি হবে না, একদম পুরস্কার পেয়ে যাব।

জেরিন: পারলে কাল আমাদের ফটোশুটটা করে দে।

আরশাদ: আমি এসব মডেল ফডেলদের ছবি তুলি না।

জেরিন: ও আপনি কি তবে একেবারে বিশুদ্ধ ফরমালিনমুক্ত তুলসি পাতা?

আরশাদ: হাহাহাহা। ঠিক বলেছিস।

জেরিন: (কিছুটা বিড়বিড় করে)  হুহ। ভালো ছেলে। একজনের তো মাথা গেছে। আরেকজন এসেছে ভালো মানুষ।

আরশাদ: কার মাথা আবার কে খেলো।

জেরিন: কে আবার, নাভিদ।

আরশাদ: ও, তাহলে তুই ওই ছেলের প্রেমে হাবু আর ডুবু খাচ্ছিস?  বেশ বেশ। চালিয়ে যা।

জেরিন: প্রেম টেম করার বয়স আছে নাকি। এখন ধরবো আর বিয়ে করবো। হাতের কাছে যাকে পাই তাকে করবো।

শাটার চাপতে গিয়ে আরশাদের হাত কিছুটা কেঁপে উঠলো।

আরশাদ: হাতের কাছে যে থাকে, তাকে বিয়ে করার মাঝে তো কোনও বাহাদুরি নাই।

জেরিন: তুই আবার দার্শনিক হলি কবে? তুই না কম্পিউটারে পড়েছিস।

আরশাদ: দার্শনিক বলেই তো যন্ত্রপাতি বোঝার চেষ্টা করছি। মানুষকে বুঝে লাভনেই। মানুষ রহস্যই থাক।

জেরিন: হুঁহ..। বিয়েটা কর, তারপর বউয়ের মন বুঝতে বুঝতে দেখবি দর্শন জানালা দিয়ে পালাবে।

 

জেরিন এগিয়ে এসে আরশাদের কাজটা  দেখার চেষ্টা করবে। খুব কাছে এসে ঝুঁকেদেখবে। আরশাদ অস্বস্তিতে পড়ে যাবে।

জেরিন: দেখি কী কী তুললি।

আরশাদ: নে দেখ।

জেরিন: এটা কী?

আরশাদ:  এটা কিছুই না।

জেরিন: হুম। তবে আর্ট আছে মনে হচ্ছে।

আরশাদ: ও তুই আর্টও বুঝিস।

জেরিন: অ্যাঁ… আমি আর্ট বুঝবো না! অ্যাড ফার্ম চালাবো কী দিয়ে তাহলে। এক কাজ কর। তুই কাল আমাদের সঙ্গে থাক। আর্ট ডিরেকশন দিবি।

আরশাদ: হুম। সেটা আমি দিতে পারবো। তবে ছবি তুলতে বলবি না।

জেরিন: ওকে ওকে। ঢং।

আরশাদ: আচ্ছা, তুই কি সত্যিই নাভিদ ছেলেটাকে ভালোবাসিস?

জেরিন: আরে ধুর। কেউ কিছু বলেছে নাকি।

আরশাদ: না, আমারই মনে হলো না। মা তো আবার এদিকে।

জেরিন: কী, ফুপু আবার কী।

আরশাদ: না কিছু না।

জেরিন: বল, ফুপু কী বলেছে?

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!