গর্ভাবস্থায় নারীরা কুসংস্কারের কারণে নিজের জীবনে চরম সর্বনাশ ডেকে আনেন। অনেক শিক্ষিত নারীও কুসংস্কারের কাছে হার মানেন। মা-দাদি-নানি, শাশুড়িরা এ ধরনের কুসংস্কার মেনে চলতে গর্ভবতীদের বাধ্য করেন। এ সময় তারা খাবার নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন।
মনে করা হয়, গর্ভাবস্থায় বেশি খেলে ও পুষ্টিকর খাবার খেলে সন্তান বেশি বড় হবে। ফলে নরমাল ডেলিভারি হবে না। সন্তান প্রসবের পর কিছু এলাকায় মাকে অল্প পরিমাণ শুকনো খাবার খেতে দেওয়া হয়। কোথাও শুধু ঘি-ভাত বা কালিজিরা-ভাত দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন, সবজি, মাছ-মাংস খেলে শিশুর পেট কামড়াবে। পানি কম খেতেও বাধ্য করা হয়।
মনে করেন, পানি ও তরল খাবার বেশি খেলে শরীরের রস টানবে না। গর্ভাবস্থায় শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি নেয়। এ সময় মায়ের চাহিদা বাড়ে। মাকে যদি বেশি পরিমাণে না খাওয়ানো হয়, তা হলে মা ও শিশুর পুষ্টির অভাব দেখা দেবে। এতে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি কম হবে, ওজন কম হবে। ওজন খুব কম হলে শিশু মারাও যেতে পারে। শিশুকে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এতে খরচ বাড়বে। শুধু তা-ই নয়, শিশুরা বেশি বেশি ইনফেকশনে আক্রান্ত হবে। গর্ভাবস্থায় শিশুর পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্ক ঠিকমতো গঠন না হওয়ায় বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঠিকমতো হয় না।
পুষ্টিকর খাবারের অভাবে মায়ের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এ থেকে হার্টফেইলিউর হয়ে মা মারাও যেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মাকে তাই স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি ফলমূল, শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার। বলা হয়ে থাকে, অন্য সময় মা যে পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকেন, গর্ভকালীন তার চেয়ে প্রতি বেলায় একমুঠো খাবার বেশি খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় শরীরে রস জমে। সন্তান প্রসবের পর এ রস আপনাআপনি চলে যায়। কোনো খাবারের সঙ্গে এ রসের সম্পর্ক নেই। সন্তান প্রসবের পরও মায়ের অতিরিক্ত খাবারের দরকার হয়। প্রয়োজন পড়ে অতিরিক্ত পানি ও তরল পানের। না হলে শিশু পরিমাণ মতো বুকের দুধ পাবে না। গর্ভাবস্থা হোক কুসংস্কারমুক্ত, এটাই হোক সবার কাম্য।
অধ্যাপক ডা. সালমা চৌধুরী, গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, লেখক : অধ্যাপক, গাইনি বিভাগ , ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৭১২৯৭৮১৫৯, ০১৯১২৩৬৭২৩৫