সাবিত রিজওয়ান
তুফান সীমাকে ভালবাসে। সীমাও বলেছিল— “তোমায় অনেক ভালবাসি।” প্রেমের আট মাস কেটে গেছে ফোনে নিয়মিত আলাপে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে কথা। সীমার কাছে সবসময় টাকা থাকে না—বাবা বা ভাই যেদিন দেয়, সেদিনই। তুফানও একইরকম—শিক্ষার্থী, নিজের আয় নেই। বাবা কিছু টাকা দিলেও কোনো মাসে দুইবার কোনো মাসে একবার দেয়, তবে মাসে একবার দেওয়া এটাই বেশি ঘটেছে। তাই তুফান চেষ্টা করে মাসে অন্তত এক-দুইবার কল দিতে। কখনো কথা হয়, কখনো ফোন বন্ধ, কখনো ব্যস্ত।
এরপরের মাসে তুফানের নিজেরও টাকা প্রয়োজন পড়ে—ফোন রিচার্জ করতে পারে না। দু’মাস তারা কথা বলে না। সীমাও আর কোনোদিন কল দেয়নি। তারপরের মাসে তুফান ফোন দিলে বারবার ব্যস্ত। এভাবে তিন-চার-ছয় মাস কেটে যায়। কখনো ফের সীমার ফোন ধরেছিলেন তার বাবা-মা। সাত মাস ধরে তুফান আর সীমার কথাই হয়নি।
গাইবান্ধা যাত্রা
তুফান রংপুরে থাকত। হঠাৎ বাবা তাকে গাইবান্ধা বাড়িতে ডাকলেন। পরদিনই সে গেল গাইবান্ধা। বিকেলে ফুলছড়িতে দেখা হয় দুই বন্ধুর—মঞ্জরুল আর শাহজাহানের সাথে।
শাহজাহান বলল—
“আগের ফোন হারাই ফেলেছি। নতুন ফোনে তোর নম্বর ছিল না, তাই বলা হয়নি। তবে মাইন্ড করিস না… পরশু আমার বিয়ে।”
তুফান অবাক।
“বিয়ে! কে মেয়েটা? কজন যাবে?”
“অল্প মানুষকে দাওয়াত দিছি। তোকে কিন্তু আসতেই হবে। পরশু সাঁঝে তোদের রাস্তার মোড়ে দাঁড়াস—আমরা তুলে নেব।”
বিয়ে বাড়ির পথে
সাঝে তুফান দাঁড়ায় রাস্তার মোড়ে। কিছুক্ষণ পর অর্থাৎ অন্ধকার নামছে, গাড়ি আসে। যাত্রাপথে তুফান ফোনে মনোযোগ দিতে দিতে বুঝতে পারে না গাড়ি কোথায় যাচ্ছে।
গাড়ি থামল এক জায়গায় একটি তেতুল গাছের নিচে। তুফান দেখে ভাবল,
“কি রে, এই পথ দিয়ে তো সীমাদের বাড়ি যাওয়া যায়। একসময় আমি এখানে আপনের সাথে ঘুরতাম।”
পরে হেঁটে যেতে হলো। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বরযাত্রী দেখে তাকিয়ে আছে, তুফানের দিকেও তাকায়—কেউ কেউ কৌতূহল, ব্যঙ্গাত্মক চোখে। যেন তারা কিছু জানে, কিন্তু বলা যাচ্ছে না।
শাহজাহানেরও নজরে পড়ে। সে মনে মনে ভাবল,
“এরা তুফানকে দেখে হাসছে কেন? তুফানের গেটাফসেটাফ কি ঠিক হয়নি নাকি?”
তুফান ধীরে ধীরে হাঁটছিল। গ্রামের রাস্তাগুলো তার পরিচিত, তাই তার পায়ে স্বাভাবিক গতি। তবে চারপাশের অচেনা মানুষ ও অজানা চোখগুলো তাকে কিছুটা অস্বস্তি দিচ্ছিল। তবে মনে রাখার মতো কিছু পরিচিত মুখও আছে—তিন-চারজন হয়তো জানে, তুফান সীমার সাথে প্রেম করেছিল। বাকি সবাই অচেনা। বিয়ের আনন্দ আর নিজের অন্তর্ভুক্ত ভয়—দুটি মিলেমিশে তার হৃদয়ে অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি করছে।
হাঁটতে হাঁটতে তারা গিয়ে দাঁড়াল বাড়ির গেটের সামনে। মনে মনে ভাবছে,
“কিরে… সীমার বড় বোন সুমাইয়ার বিয়ে নাকি? এখন ত ফেঁসেই গেলাম বুঝি…”
গেটের সামনে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে বরযাত্রীদের আটকে রেখেছে—
“গেটের ট্যাক্স না দিলে ভেতরে ঢোকা যাবে না!”
এই ধস্তাধস্তির মাঝেই হঠাৎ এক ছেলে তুফানকে দেখে বলল,
“কিরে তুফান এখানে?”
জোরে বলেনি, তবে মঞ্জরুল শুনে ফেলেছে।
মঞ্জরুল চাপা গলায় বলল,
“এত জায়গায় তোক চেনে?”
চারপাশের হৈচৈ আর ফিতা কাটার উত্তেজনার ভেতরেই ছেলেটি আবার গেটের কাছে নেই।
তুফান এক ছেলেকে কানে কানে জিগ্যেস করল,
“কার বিয়া?”
ছেলেটা ভুরু কুঁচকে বলল,
“আমন্ত্রণ ছাড়া আসছেন তাহলে?”
তুফান বলল,
“যাদের সাথে আসলাম, তারা মেয়েটার নাম বলে নাই।”
ছেলেটা হেসে উত্তর দিল,
“সীমার বিয়ে।”
তুফান থমকে গেল।
“সীমা ত একটা ছেলের সাথে প্রেম করত!”
ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“কিসের প্রেম? ভাই, যান তো… হটাই ঝামেলা পাকাবেন না। সে কারো সাথে প্রেম করেনি।”
বুকের ভেতর কেমন একটা মোচড় খেল তুফান।
মনে হলো এখনই পড়ে যাবে। কিন্তু নিজেকে সামলে, মুখ শক্ত করে শাহজাহানদের সাথে ফিতা কেটে ভেতরে ঢোকে।
শাহজাহান স্টেজে উঠল।
তুফান আর মঞ্জরুল স্টেজের নিচে চেয়ার পেতে বসল।
স্টেজের ভিড়ে দাঁড়িয়ে, তুফান হালকা কাশির ভান করল আর সীমার ভাতিজী জান্নাতকে কাছে ডাকল। মঞ্জরুল তখন অন্যদিকে মনোযোগ দিচ্ছে—ঠিক সেই ফাঁকটাই কাজে লাগাল তুফান।
জান্নাত কাছে আসতেই সে কানের কাছে মুখ রেখে, হাতটা মাইকের মতো করে ধরে খুবই পাতলা গলায় বলল—
“শোন… তোমার ফুফু সীমা কোন রুমে আছে?”
কথাগুলো যেন সাধারণ কোনো জিজ্ঞাসা;
তবে স্বরের গভীরতা আর চোখের এড়ানো ভঙ্গি বোঝাচ্ছে—কেউ যেন টের না পায়।
জান্নাত ধীরে ধীরে বলল, “ওই রূমে।” এবং হাতের আঙুল দিয়ে রুমের দিকে ইশারা করল।
“ওহ, তোমার ফুফুকে গিয়ে বলো ত, তুফান আঙ্কেল আসছে এখানে।”
“ফুফু সাজে, এখন যাওয়া যাবে না।”
“যাও, আম্মু, কিচ্ছু হবে না।”
জান্নাতের হাতে কিছু নাস্তার খাওয়ার টাকা দেওয়ায় সে সীমার সাজবার রূমের দিকে চলে গেল। অবশ্য আগে তুফানরাও নাস্তার বিনিময়ে কারো ছোটখাটো উপকার করতো।
ওদিকে জান্নাত তুফানের কথা সীমাকে বলায় সীমা তাকে বলল, “কোন তুফান? তাকে গিয়ে বলো, সীমা তুফান নামে কাউকে চিনেনা।”
জান্নাত ফিরে এসে তুফানকে জানাল, “ফুফু বলল, তুফান নামের কাউকে চিনেনা।”
তুফান মনে মনে বিরবির করল, “তাই নাকি, এখন আমাকে চিনো না, অন্য কারো সাথে বিয়ে হতেও আগ্রহী।”
সে সাজবার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দুই মেয়ে পথ আটকাল। একজন ভুরু কুঁচকে বলল,
“কি চাই?”
তুফান শান্ত স্বরে বলল,
“এমনিতেই আসলাম।”
মেয়েটা আবার বলল,
“এই রুমে আসা যাবে না।”
তুফান মাথা নুইয়ে বলল,
“ঠিক আছে…”
সীমা ভেতর থেকে তার কণ্ঠ চিনে নিয়ে বলল,
“আসতে দে তাকে।”
তুফান ভেতরে যেতেই সীমা সোজাসুজি জিজ্ঞেস করল,
“তুমি এখানে কেন? বিয়ে খেতে নাকি… কোনো ঝামেলা পাকাতে?”
তুফান ধীরে বলল,
“আমি জানতাম না শাহজাহানের বিয়ে তোমার সঙ্গে।”
রুমের মেয়েরা চুপ। নির্লিপ্ত।
সীমা আবার বলল,
“কে হয় তোমার?”
“কে?”
“শাহজাহান?”
“বন্ধু”
মেয়েরা সীমাকে চাপা একটি মজা করে স্বরে বলল,
“থাক আপু, আর জিজ্ঞেস করিস না। দেখছিস না, ছেলেটা ক্লান্ত?”
সীমা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোরা দুজন দরজায় দাঁড়া। আপু বা ভাইয়া এলেই যেন বুঝিস।”
ওদিকে মঞ্জরুল উঠোন ঘুরে বেড়াচ্ছে, একা একা ঘুরছে বিধায় মনে হলো— “তুফানটা গেল কোথায়?”
শাহজাহানের বাবা আলাদা একটা ঘরে পান চাবাচ্ছে আর ভাবছে— কখন সব শেষ হবে, কখন বাড়ি ফেরা যাবে…
সীমা আবার তুফানের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“শাহজাহানের সঙ্গে এখনো আমার বিয়ে হয়নি… কিছু করার থাকলে করো।”
তুফান চোখ নামিয়ে বলল,
“তো বিয়ে করতে তো রাজি হইছিলে। আমার বন্ধুর সন্মান নষ্ট করতে বলছো? এখন আর আমার কিছুই করার নেই।”
ঠিক সেই সময় সুমাইয়া ঢুকে পড়ল। শেষ কথাটা পরিষ্কার শুনে ফেলল।
রান্নাঘর পাশে সীমার মা পায়চারি করছে আর ভাবছে— “মেয়ে পরের বাড়িতে মানিয়ে নিতে পারবে তো? ছেলেটার আচরণই বা কেমন?”
সুমাইয়া সোজা এসে তুফানের সামনে দাঁড়াল।
“ভাই, এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের সন্মান নষ্ট হয়। মেয়েদের সন্মান আপনি বুঝেন। বাইরে যান।”
তুফান নিঃশব্দে বলল,
“কিন্তু… সে তো আমাকে এখনও ভালোবাসে।”
সুমাইয়া একদম কড়া গলায় বলল,
“আবেগ দিয়ে সংসার চলে না। তুমি এখনো বেকার। বউকে খাওয়াবে কী? পড়াবা কী?”
সীমা কথা বলল না।
তুফানের কাছে কোনো উত্তর ছিল না।
বাধ্য হয়ে সে রুম থেকে বের হয়ে এল।
রাত ৮:৩০।
বউ নিয়ে যাওয়া হবে কখন তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তবে তারাতাড়ি নিয়ে যাওয়াটা তাদের জন্য উপকার।
তুফান স্টেজের পাশে এসে চেয়ারে বসল। কিছুক্ষণ পর মঞ্জরুলও এসে বসে বলল,
“কই গেছলি রে, তোকে খুঁজছিলাম!”
তুফান হেসে বলল,
“এখানেই বিয়াইনদের সাথে মজা করে আসলাম।”
মঞ্জরুল বলল,
“দেখ— শাহজাহানের সঙ্গে মমতাজের না, সীমারই বিয়ে হচ্ছে।”
তুফান বলল,
“আগে বলতি নামটা সীমা—জানলে তার মাকে জন্মের সময়ই বলে যেতাম তার নাম মমতাজ রাখতে!”
কে যে তুফানকে মেসেজ করছে আর সে ফোনে মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছিল।
ঠিক তখন পাশের দুই চেয়ার দখল করে বসল দুই ছেলে।
তুফান একজনকে চিনে ফেলল—
“কি রে, তুফান এখানে…” বলা ছেলেটা আর সাথে অন্য আরেকজন।
তুফান ভাবল,” অনেকেই ত আমায় চিনে, অনেক পাঠকই, হতে পারে এনিই তাদের মধ্যে একজন। এটা ত সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ।
অন্যজন বলল,
“ভাই, কেমন আছেন?”
“ভালো। আপনারা?”
“ভাই, আমার নাম রিফাত। আপনাকে ফেসবুকে দেখি।”
“আচ্ছা আচ্ছা…”
“ভাই, একটু বাইরে আসবেন?”
“এখন না।”
“আপনি ইলেকট্রিক্যাল কাজ পারেন, বাইরে কয়েকটা ঝিলিক লাইট বসানো লাগতো।”
“আপনারাই পারবেন।”
“ভাই, আসেন না। এক মিনিট।”
মঞ্জরুল বলল,
“যা, গিয়ে দেখ।”
তুফান তাদের সঙ্গে বের হলো।
দোকান থেকে তিনটা সিগারেট নিল তারা। তুফান বলল,
“আমি খাই না, আপনারাই খান।”
ছেলেরা বলল,
“ঠিক আছে ভাই, চলেন—যেখানে যাচ্ছি ওখান থেকে লাইন আনতে হবে।”
তুফান বিশ্বাস করে তাদের পিছু নিল।
বিয়েবাড়ির পাশে খড়ের পুঞ্জ পার হওয়ার পর সামনে নার্সারির পথ। বিয়ে বাড়ির আড়ালে হয়ে যায়।
হঠাৎ তুফানের ফোনে কল করে সীমা।
তুফান থেমে তাদের বলল,
“ভাই, আর যাব না… একটা কল আসছে। আমি স্টেজে যাচ্ছি।”
এ কথা বলতেই রিফাত হাত চেপে ধরে বলল,
“এখন যাবি না। চল।”
তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো ব্রিজ পর্যন্ত। রিফাত তুফানের ফোন কেড়ে নিয়ে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখে।
সেখানে বসে ছিল সীমার ভাই— রাকিব।
ছেলেরা তুফানকে রাকিবের দিকে ঠেলে দিল।
রাকিব এক ঝটকায় তার শার্টের কলার চেপে ধরল—
“কি রে? সীমার বিয়েতে ঝামেলা করতে এসেছিস? গেটের ফিতা কাটার সময় তুই ওখানে কি করছিলি?”
তার চোখে রাগ, ব্যঙ্গ, হিসেব সব একসাথে।
তুফান বলল,
“দাওয়াত খেতে আসছি…”
রাকিব হা-হা করে হেসে উঠল,
“দাওয়াত? তুই?”
তারপর ধপ করে তুফানের গালে একটা থাপ্পড়।
বাঁ-দু’পাশে থাকা ছেলেরা তার হাত ধরে রাখল।
ব্রিজের নিঃশব্দ অন্ধকারে শুধু রাকিবের গর্জন আর তুফানের শ্বাস।
প্রায় আধাঘণ্টা—
তুফান আর বিয়েবাড়িতে ফেরেনি।
শাহজাহান ইশারায় মঞ্জরুলকে ডাকল।
ধীরে কানে বলল,
“দেখতো তুফান কই গেল?”
মঞ্জরুল বলল,
“আচ্ছা, আরেকটু দেখি… হয়তো চলে আসবে।”
কিন্তু প্রায় ৫৫ মিনিট হয়ে গেল—তুফানের কোনো দেখা নেই।
এদিকে…
এখন তিনজন মিলে তুফানকে এমনভাবে মারছে—
যেন প্রাণটা বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
বিয়ে বাড়িতে খোঁজ শুরু
মঞ্জরুল বাড়ির ভেতর–বাইরে সব জায়গায় খুঁজে দেখল—তুফান নেই।
বাইরে গিয়ে সে একটি বাচ্চা ছেলেকে থামালো।
“এই শোনো, আমার মত লম্বা একটা ছেলে দেখছো? মারুন শার্ট পড়া?”
বাচ্চা উত্তর দিল—
“দেখছিলাম তো বিয়ে বাড়িতেই।”
“এখন তো পাচ্ছি না।”
“তাহলে আমি জানিনা ভাই।”
তারপর মঞ্জরুল এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করল।
মেয়েটা বলল—
“জানিনা ভাই। তবে কিছুক্ষণ আগে দেখছিলাম মারুন শার্ট পড়া এক ছেলেকে দুইটা ছেলের সাথে দোকানে। কিছু কিনছিল মনে হয়।”
“ওরা ওর একটু বয়সে বড় ছিল?”
“হুম, তাই মনে হলো। রাত বলে ঠিক দেখি নাই।”
মঞ্জরুল আশপাশের দোকান, খড়ের পুঞ্জ, আসার পথ—সব দেখে নিল।
কিন্তু খড়ের পুঞ্জ পার হয়ে ব্রিজে গিয়ে দেখবে—এটা তার মাথাতেই আসল না।
ফোনের ভুলটা
তুফান আর রিফাতের ফোন হুবহু একইরকম।
ফারাক শুধু পিছনের ফোন কভারটায়—
রিফাত মারামারির তাড়ায় সেটাও খেয়াল করেনি।
মঞ্জরুল তুফানকে কল করল—
এমন নম্বর থেকে যেটা তুফানের ফোনে সেভ নেই।
দুইবার কল গেল—
কিন্তু তুফানের কাছে ফোন নেই, রিসিভ করবে কীভাবে?
দুইবার কল আসায় রিফাত বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিল।
ঠিক তখনই মঞ্জরুলের নম্বর থেকে একটা মেসেজ গেল—
“কি রে, কই তুই? বিয়েবাড়িতে আসবি কবে?”
রিফাত ভেবে বসলো—এটা আরাফাতের মেসেজ।
আরাফাত সাধারণত কল না করে মেসেজই করে।
সে রিপ্লাই দিল—
“এখন পারছি না রে। গাড়িতে আছি। চাচা অসুস্থ—মেডিকেলে নিতে হইতেছে।”
ভুল বোঝাবুঝি বিয়ে বাড়িতে
মঞ্জরুল ছুটে গিয়ে শাহজাহানকে ফিসফিস করে বলল—
“তুফান নাই। ওর চাচা নাকি অসুস্থ, তাই মেডিকেলে যাচ্ছে। আমায় মেসেজ দিয়েছে।”
শাহজাহান কিছুই বুঝতে পারল না।
বিপদ তো বলে আসে না—
সে শুধু বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে…”
এদিকে ব্রিজে ঘটলো আরেক ঘটনা—সবকিছু গুলিয়ে গেল
রিফাতরা তুফানকে ব্রিজ থেকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই
ব্রিজেই আরেকটা এক্সিডেন্ট হলো।
একটা মোটরসাইকেল আর একটা অটোভ্যানের সংঘর্ষ।
মোটরসাইকেলটির স্পিড খুব বেশি ছিল—
ফলে ছেলেটা হাতে আঘাত পায়, রাস্তার সাথে হাত ঘষা খায়, আর হাত থেকে রক্ত ঝরে ব্রিজে পড়ে।
সেই রক্তের সঙ্গে মিশে যায়—
তুফানেরও পড়া রক্তের দাগ।
রাতের সময়—
অনেকেই ধরে নেয় রক্ত শুধু মোটরসাইকেলওয়ালারই।
তাই কেউ সন্দেহই করল না—
এখানে দু’জনের রক্ত আছে।




















