class="post-template-default single single-post postid-1134 single-format-standard wp-custom-logo group-blog vl-boxed aa-prefix-matin-">
Shadow

সত্যি হরর কাহিনী : মতি কাকুর ছায়াটা কি কোনো আত্মা ছিলো?

হরর

আমি ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছি। বিভিন্ন সময় গ্রামের মানুষকে ভূত, প্রেত, জিনে বা আত্মায় ধরার ঘটনা শুনেছি অনেক। তবে আমার সঙ্গেও যে ভূত-প্রেতের সাক্ষাৎ হয়নি, তা কিন্তু নয়। তাদের সঙ্গে বহুবারই আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।

যাদের সঙ্গে কোনো দিন ভূত-প্রেতের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তারা হয়তো ভাবছেন আপনার বন্ধু-বান্ধবের মতোই তারা সাক্ষাৎ করে- তাই তো? কিন্তু না, ভূত-প্রেত বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গেই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে হাজির হয়। আবার অনেকের সঙ্গে ভূত-প্রেত বা আত্মারা বহুসময় থাকলেও মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি তারা করে না- এটা অবশ্য আমারই অভিমত, অন্যরা সঙ্গে একমত না হতেই পারেন।

আজ থেকে প্রায় সাত-আট বছর আগের কথা। ওইদিন সকাল শিফটে অফিস শেষ করে দুইটার দিকে অফিস থেকে বের হলাম গ্রামের বাড়ি বরগুনায় যাওয়ার জন্য। তবে বরগুনার কোন গ্রামে আমার বাড়ি সেটা একটা বিশেষ কারণে আমি বলতে পারবো না। প্রায় চার মাস পরে বাড়ি যাচ্ছি মায়ের কাছে, কি যে আনন্দ তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না।

ঢাকা থেকে বরগুনার এতো পরিমাণ দূরত্ব যে কম করে হলেও যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। যাই হোক, যেতে যেতে হয়ে গেল রাত। আমতলী ফেরিঘাট থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের নদীটার কাছে পৌঁছালাম। ওই নদীটা আমরা পার হই ছোট খেয়া নৌকা দিয়ে। মোটরসাইকেল চালক আমাকে যেখানে রেখে গেলেন ওর খানিকটা দূরেই খেয়া ঘাট।

আমার কাঁধে ছিলো ছোট একটা স্কুলব্যাগ। সঙ্গে ছিলো নকিয়া ১৬০০ মডেলের একটি মোবাইল। আমি জানতাম না সেদিন ছিলো অমাবশ্যার রাত। পুরো পৃথিবী ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন অন্ধকার যেন মনে হয় জোরে চিৎকার দিলেও কেউ শুনবে না। যাইহোক হাঁটা শুরু করলাম খেয়াঘাটের দিকে। তখন বুঝতে পারলাম যত হাটছি ততই ভয় আমাকে কাবু করছে। টিপ টিপ করে মোবাইলের আলোর সাহায্যে সামনের দিকে হাঁটছি।

চলে আসলাম খেয়াঘাটে। ঘাটে এসে দেখলাম মাঝি ছাড়া আর কেউ নাই ওই ঘাটে। দৌড়ে উঠে পড়লাম খেয়ায়। বললাম, কাকু ,খুব জরুরি। আমাকে পার করে দিন নইলে আমি এত রাতে যেতে পারবো না একা। তখন মাঝি কাকু বললো ‘হয় যাও তাড়াতাড়ি যাও, তোমার তো আগেই যাওয়া চাই’। এই বলেই নৌকা ছেড়ে দিলো কাকু। ওপারে উঠে তড়িঘড়ি করে হাঁটা শুরু করলাম। এর মধ্যেই হঠাৎ পেছন থেকে আমার বাম হাত ধরে টান দিলো কেউ একজন।

তখন ভয়ে মনে হলো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। চেয়ে দেখি আমাদের দূর সম্পর্কের মতি কাকা। বললাম কাকু এইটা কোনো কাজ করছেন? আমি এমনিতেই ভয়ে হাঁটতে পারছি না আর আপনি আমার হাত ধরলেন যেভাবে আর একটু হলে আমিতো ভয়ে মরেই যেতাম।

তিনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, ‘চল যাই বাড়িতে, জরুরি কাজ আছে আমার। যেতে হবে বহু দূর।’ তার কথাবার্তার ধরণ অনেকটা পরিবর্তিত মনে হচ্ছে। কথা বলছেন ভারী ভারী গলায়। যাই হোক, ভাবলাম, এতক্ষণকার ভয় তো শেষ। কাকু আছে সঙ্গে এবার। এই ভেবে হাঁটা ধরলাম তার সঙ্গে।

পাঁচ কিলোমিটার হাঁটলাম এক সঙ্গে। এর মধ্যে একটা বিষয় আমার খুব অদ্ভূত লাগলো তখন। তাহলো, মতি কাকু কিছু দূর যাওয়ার পরে পরেই আমাকে একা রেখে রাস্তার পাশে বনে ঢুকে যায় আর বলে, দাঁড়া ভাইপো, আমি প্রশ্রাব করে আসি। তখন একা একা ভয় পেলেও সে ভয়টা আর স্থায়ী হয়নি।

চলে আসলাম বাড়ির সামনে। কাকু বলে তুই ঘরে যা, আমার কাজ আছে আমি যাই। তখন আমি বললাম, একটু দাঁড়ান কাকু। ঠিক করলাম ঢাকা থেকে সঙ্গে করে আনা আপেলগুলো থেকে কাকুকে কয়েকটা দেই। এই ভেবে বসে ব্যাগ খুলে কয়েকটা আপেল বের করে কাকুকে দেয়ার জন্য দাঁড়ালাম, ওমনি পেছনে তাকিয়ে দেখি কাকু তো হাওয়া। একটু জোরে ডাকলাম, ‘কাকু কাকু’ করে। কোথায় কাকু, কাকুতো চলে গেছে।

আমিও চলে গেলাম ঘরে। ঘরে গিয়ে কাপড় বদল করছি আর মায়ের সঙ্গে কথা বলছি। তখন মাকে বললাম মা আজকে মতি কাকু না থাকলে আমি একা আসতেই পারতাম না। মা বললো কোন মতি কাকুর কথা বলছো? আমি বললাম তুমি মতি কাকুকে চিনো না! আমাদের মতি কাকুতো একটাই। মা এবার বললো, কী বলিস! তোর মতি কাকুতো আজ বিকেলে মারা গেছে। তাকে তো সন্ধ্যায় মাটিও দেয়া হয়েছে!

মায়ের কথা শোনার পরে ভয়ের শিহরণ বয়ে গেল সারা গা বেয়ে। আমি বসে পড়লাম। মনেহলো পুরো শরীর আমার ফুলে যেতে লাগলো। আমি যেন মোটা হয়ে যাচ্ছি। ভাবছি, যেই মতি কাকু বিকেলে মারা গেলো সেই মতি কাকু রাতে আমাকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নিয়ে আসলো সঙ্গে করে! এটা কীভাবে সম্ভব?

তবে ওই ঘটনার পরে আজও আমি বুঝতে পারিনি যে ওই মতি কাকুর ছায়াটা কি কোনো আত্মা ছিলো নাকি কোন ভূত-প্রেত।

লেখক: সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!